আকাঙ্ক্ষা
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(সুন্দরী)
১
কেন না হইলি তুই, যমুনার জল,
রে প্রাণবল্লভ!
কিবা দিবা কিবা রাতি, কূলেতে আঁচল পাতি
শুইতাম শুনিবারে, তোর মৃদুরব ||
রে প্রাণবল্লভ!
২
কেন না হইলি তুই, যমুনাতরঙ্গ,
মোর শ্যামধন!
দিবারাতি জলে পশি, থাকিতাম কালো শশি,
করিবারে নিত্য তোর, নৃত্য দরশন ||
ওহে শ্যামধন!
৩
কেন না হইলি, তুই, মলয় পবন,
ওহে ব্রজরাজ!
আমার অঞ্চল ধরি, সতত খেলিতে হরি,
নিশ্বাসে যাইতে মোর, হৃদয়ের মাঝ ||
ওহে ব্রজরাজ!
৪
কেন না হইলি তুই, কাননকুসুম,
রাধাপ্রেমাধার।
না ছুঁতেম অন্য ফুলে, বাঁধিতাম তোরে চুলে,
চিকণ গাঁথিয়া মালা, পরিতাম হার ||
মোর প্রাণাধার!
৫
কেন না হইলে তুমি, চাঁদের কিরণ,
ওহে হৃষীকেশ!
বাতায়নে বিষাদিনী, বসিতে যবে গোপিনী,
বাতায়নপথে তুমি, লভিতে প্রবেশ ||
আমার প্রাণেশ!
৬
কেন না হইলে তুমি, চিকণ বসন,
পীতাম্বর হরি!
নীলবাস তেয়াগিয়ে, তোমারে পরি কালিয়ে,
রাখিতাম যত্ন কর্যে হৃদয় উপরি ||
পীতাম্বর হরি!
৭
কেন না হইলে শ্যাম, যেখানে যা আছে,
সংসারে সুন্দর।
ফিরাতেম আঁখি যথা, দেখিতে পেতেম তথা,
মনোহর এ সংসারে, রাধামনোহর।
শ্যামল সুন্দর!
(সুন্দর)
১
কেন না হইনু আমি, কপালের দোষে,
যমুনার জল।
লইয়া কম কলসী, সে জল মাঝারে পশি,
হাসিয়া ফুটিত আসি, রাধিকা-কমল-
যৌবনেতে ঢল ঢল ||
২
কেন না হইনু আমি, তোমার তরঙ্গ,
তপননন্দনি!
রাধিকা আসিলে জলে, নাচিয়া হিল্লোল ছলে,
দোলাতাম দেহ তার, নবীন নলিনী-
যমুনাজলহংসিনী ||
৩
কেন না হইনু আমি, তোর অনুরূপী
মলয় পবন!
ভ্রমিতাম কুতূহলে, রাধার কুন্তল দলে,
কহিতাম কানে কানে, প্রণয় বচন-
সে আমার প্রাণধন ||
৪
কেন না হইনু, হায়! কুসুমের দাম,
কণ্ঠের ভূষণ।
এক নিশা স্বর্গ সুখে, বঞ্চিয়া রাধার বুকে,
ত্যজিতাম নিশি গেলে জীবন যাতন-
মেখে শ্রীঅঙ্গচন্দন ||
৫
কেন না হইনু আমি, চন্দ্রকরলেখা,
রাধার বরণ।
রাধার শরীরে থেকে, রাধারে ঢাকিয়ে রেখে,
ভুলাতাম রাধারূপে, অন্যজনমন-
পর ভুলান কেমন?
৬
কেন না হইনু আমি চিকণ বসন,
দেহ আবরণ।
তোমার অঙ্গেতে থেকে, অঙ্গের চন্দন মেখে,
অঞ্চল হইয়ে দুলে, ছুঁতেম চরণ,-
চুম্বি ও চাঁদবদন ||
৭
কেন না হইনু আমি, যেখানে যা আছে,
সংসারে সুন্দর।
কে হতে না অভিলাষে, রাধা যাহা ভালবাসে,
কে মোহিতে নাহি চাহে, রাধার অন্তর-
প্রেম-সুখরত্নাকর?
১
কেন না হইলি তুই, যমুনার জল,
রে প্রাণবল্লভ!
কিবা দিবা কিবা রাতি, কূলেতে আঁচল পাতি
শুইতাম শুনিবারে, তোর মৃদুরব ||
রে প্রাণবল্লভ!
২
কেন না হইলি তুই, যমুনাতরঙ্গ,
মোর শ্যামধন!
দিবারাতি জলে পশি, থাকিতাম কালো শশি,
করিবারে নিত্য তোর, নৃত্য দরশন ||
ওহে শ্যামধন!
৩
কেন না হইলি, তুই, মলয় পবন,
ওহে ব্রজরাজ!
আমার অঞ্চল ধরি, সতত খেলিতে হরি,
নিশ্বাসে যাইতে মোর, হৃদয়ের মাঝ ||
ওহে ব্রজরাজ!
৪
কেন না হইলি তুই, কাননকুসুম,
রাধাপ্রেমাধার।
না ছুঁতেম অন্য ফুলে, বাঁধিতাম তোরে চুলে,
চিকণ গাঁথিয়া মালা, পরিতাম হার ||
মোর প্রাণাধার!
৫
কেন না হইলে তুমি, চাঁদের কিরণ,
ওহে হৃষীকেশ!
বাতায়নে বিষাদিনী, বসিতে যবে গোপিনী,
বাতায়নপথে তুমি, লভিতে প্রবেশ ||
আমার প্রাণেশ!
৬
কেন না হইলে তুমি, চিকণ বসন,
পীতাম্বর হরি!
নীলবাস তেয়াগিয়ে, তোমারে পরি কালিয়ে,
রাখিতাম যত্ন কর্যে হৃদয় উপরি ||
পীতাম্বর হরি!
৭
কেন না হইলে শ্যাম, যেখানে যা আছে,
সংসারে সুন্দর।
ফিরাতেম আঁখি যথা, দেখিতে পেতেম তথা,
মনোহর এ সংসারে, রাধামনোহর।
শ্যামল সুন্দর!
(সুন্দর)
১
কেন না হইনু আমি, কপালের দোষে,
যমুনার জল।
লইয়া কম কলসী, সে জল মাঝারে পশি,
হাসিয়া ফুটিত আসি, রাধিকা-কমল-
যৌবনেতে ঢল ঢল ||
২
কেন না হইনু আমি, তোমার তরঙ্গ,
তপননন্দনি!
রাধিকা আসিলে জলে, নাচিয়া হিল্লোল ছলে,
দোলাতাম দেহ তার, নবীন নলিনী-
যমুনাজলহংসিনী ||
৩
কেন না হইনু আমি, তোর অনুরূপী
মলয় পবন!
ভ্রমিতাম কুতূহলে, রাধার কুন্তল দলে,
কহিতাম কানে কানে, প্রণয় বচন-
সে আমার প্রাণধন ||
৪
কেন না হইনু, হায়! কুসুমের দাম,
কণ্ঠের ভূষণ।
এক নিশা স্বর্গ সুখে, বঞ্চিয়া রাধার বুকে,
ত্যজিতাম নিশি গেলে জীবন যাতন-
মেখে শ্রীঅঙ্গচন্দন ||
৫
কেন না হইনু আমি, চন্দ্রকরলেখা,
রাধার বরণ।
রাধার শরীরে থেকে, রাধারে ঢাকিয়ে রেখে,
ভুলাতাম রাধারূপে, অন্যজনমন-
পর ভুলান কেমন?
৬
কেন না হইনু আমি চিকণ বসন,
দেহ আবরণ।
তোমার অঙ্গেতে থেকে, অঙ্গের চন্দন মেখে,
অঞ্চল হইয়ে দুলে, ছুঁতেম চরণ,-
চুম্বি ও চাঁদবদন ||
৭
কেন না হইনু আমি, যেখানে যা আছে,
সংসারে সুন্দর।
কে হতে না অভিলাষে, রাধা যাহা ভালবাসে,
কে মোহিতে নাহি চাহে, রাধার অন্তর-
প্রেম-সুখরত্নাকর?
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৯৩ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন