সেদিন অস্তগামী রবির বীণায় সুরের অপূর্ণতা
সেদিন উদয়নের বাতায়নে বসে শীতের প্রত্যুষে
সে এক অকপট আকুতি
” কৃষানের জীবনের শরিক যে জন,
কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তা করেছে অর্জন,
যে আছে মাটির কাছাকাছি,
সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি।”
তার বহু আগে
শাপলা শালুকে ভরা নদী নালা হিজলের বাংলায়
অশ্বত্থ বটের পথে লক্ষ্মীপেঁচা শ্যামা
আর শালিখের বাংলায়
নকশীকাঁথার মাঠে
এক মাটির কবির লেখনীতে
সে আকুতি এসেছিল উঠে,
” মাঠের রাখাল, বেদনা তাহার আমরা কি অত বুঝি;
মিছেই মোদের সুখ দুখ দিয়ে তার সুখ দুখ খুঁজি।
আমাদের ব্যথা কেতাবেতে লেখা পড়িলেই বোঝা যায়;
যে লেখে বেদনা বেবুঝ বাঁশিতে কেমনে দেখাব তায় ?
অনন্তকাল যাদের বেদনা রহিয়াছে শুধু বুকে,
এদেশের কবি রাখে নাই যাহা মুখের ভাষায় টুকে;
সে ব্যথাকে আমি কেমনে জানাব ?
তবুও মাটিতে কান পেতে রহি
কভু শোনা যায় যদি কি কহে মাটির প্রাণ ।”
মাঠের কিষাণ, বাটের রাখাল, ঘাটের বধূ
বেদে বেদেনীর কবি তুমি জসীমউদ্দীন
ধুলো মাটির মানুষের কবি
ধুলো মাটির কবিতার কবি
তুমি জসীমউদ্দীন
শতবর্ষের সালাম এর পরে তোমায় জানাই
মাটি কোথায়
ধুলো কোথায়
বাবু সাহিত্যের শহুরে চত্বরে
ব্রাত্য আজ ধুলোমাটির মানুষ
ব্রাত্য আজ ধুলোমাটির কবিতা
সেখানে মাটি নাই
মাটির কোনো গন্ধ নাই
শিকড়ের টানে মাটির কাছে ফেরার দায় নাই
বহুজাতিক দুনিয়ার ব্যালকনিতে
বৃক্ষের বদলে বাড়ে বনসাই
শুধু সারি সারি বনসাই ।
তবুও এই বাংলায়
শহরে চত্বর থেকে দূরে
বহু দূরে
ধুলো মাটির মানুষের মুখের ভাষায়
ধুলো মাটির মানুষের মায়ের ভাষায়
মাঠে-ঘাটে গ্রামে গঞ্জে
ঘরে ঘরে
হাজার বছর ধরে
সীমাহীন অন্তহীন অফুরন্ত ভালোবাসায়
স্রোতের উজানে ভেসে ভেসে
কলমীলতার মতো আজও আছে বেঁচে
খেটে খাওয়া মানুষের কথকথা
ধুলোমাটির কবিতা ।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন