তিনি একজন শিল্পী
তিনি একজন মৃৎশিল্পী
এই বাংলার প্রবীণ মৃৎশিল্পী
পুজো পার্বণে প্রতিমা গড়েন
তার সঙ্গে ঘটও গড়েন
এমনকি মাটির গেলাস মাটির কটরাও গড়েন
এসব গড়তে গিয়ে তাঁকে মাখতে হয় জলকাদা
এসব করতে গিয়ে তাঁকে পরতে হয় হাঁটুর ওপরে ধুতি
ধুতির ওপরে গামছা
তিনি নামেও সদানন্দ
তিনি কাজেও সদানন্দ
তবু এত আনন্দের মাঝে এত কাজের মাঝে
তাঁর দুঃখ একটাই
বাবুরা তাঁকে মানতে চান না শিল্পী বলে
বাবুরা এখনো তুই-তোকারি করেন তাঁকে
এসব নিয়ে যত খেদ জমে
তার চেয়ে বেশি জমে ক্ষোভ
সেই ক্ষোভের স্বরে তিনি জানালেন
এমনি করেই মাটির সঙ্গে মাটির কাজে
জীবন কাটে আমার
এসব দুঃখের কথা কি বলব বলুন
বলতেও আর ভালো লাগেনা
তবে একদিন খুশি হয়েছিলাম খুব
বছর দশেকের একটা ফুটফুটে মেয়ে
মায়ের সঙ্গে দোকানে এসে
একখানা লক্ষীর ঘট দেখিয়ে বললে,
“ওই ঘট টা দিন তো কাকু”
আমি ওর হাতে তুলে দিলাম ঘট টা
বলল, কত দাম ?
বললাম ,বেশি না, দু টাকা ।
বললে,” এক টাকায় দেবেন তো”।
বললাম, দাও।
আমার মুখে ‘দাও ‘কথাটা শুনে
ওর মা এমন করে তাকালেন আমার দিকে
যেন মস্ত অন্যায় করে ফেলেছি আমি
তারপর ব্যাগ থেকে একটা কয়েন বের করে
আমার হাতে গুঁজে দিয়ে
মেয়েকে নিয়ে টানতে টানতে
বেরিয়ে গেলেন দোকান থেকে
কি বলবো আপনাকে
আমার কানে এলো কথাটা
মুখ ঝামটা দিয়ে মেয়েকে বলছেন মা,
“ওদের আবার কেউ আপনি বলে
ওদের তুই বলতে হয় ”
কথাটা শুনে কাজ ফেলে রেখে
আমি ক মুহূর্ত বসে রইলাম চুপ দিয়ে
একজন ভদ্রমহিলা
একজন লেখাপড়া জানা শিক্ষিত ভদ্রমহিলা
কি বলবো
আমি মুখ ও গড়ি
আবার মুখোশ ও গড়ি
আপনি বলুন আমাকে
ওই ভদ্র মহিলার মুখটা
ওটা কি তাহলে মুখোশের মুখ
ওটাই কি মুখোশের মুখ ।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন