দীপক রায়

কবিতা - রবীন্দ্রনাথ

দীপক রায়

আট দিন আগে শেষ কবিতা লিখেছেন তিনি।

বিছানায় শুয়ে সকালে ধীরে ধীরে বলেছেন আর অনুগত সুহৃদের মতো পরম যত্নে লিখে নিচ্ছেন রানি চন্দ ।
একুশ লাইন লেখার পর
থামলেন তিনি ।
চোখ বুজলেন।

রানি অপেক্ষা করছেন ।
আর কিছু বললেন না তিনি…

সকাল সাড়ে ন’টায় আবার
ডাক পড়ল তার
– শেষ তিন লাইন
বললেন তিনি।

সেই মুহূর্তে খবর
আজই তাঁর অস্ত্রোপচার
যা তিনি চাননি কখনও ।

কিছু ছায়া নেমে এল দক্ষিণের বারান্দায় , কিছু তাঁর ঘরে ।
জানলার পাশে কেঁপে উঠল
গাছের পাতা ।

মুখ ফিরিয়ে ম্লান হেসে
বললেন রানিকে –ডাক্তার বলেছেন –
অস্ত্রোপচারের পর
পরিস্কার হবে মাথা
কবিতার কিছু পরিমার্জনা
দরকার

আট দিন পর ২২-এ শ্রাবণ
চলে গেলেন তিনি…
পরিমার্জনার জন্য
রেখে গেলেন একটি কবিতা
আর কী কী রেখে গেলেন ?

ভাবতে ভাবতে পার হয়ে গেল
আশিটা বাইশে শ্রাবণ …

মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়ে লেখা

আপনি আমার কেউ নয়
তবু আপনাকে নিয়ে লিখতে হল
আপনি দেড়শো বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

বারোজন অভিজ্ঞ ডাক্তার ছিল আপনার বাড়িতে
আপনার খাবার ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করে
আসত আপনার কাছে
আপনি দেড়শো বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন ।

পনেরোজন লোককে ব্যায়াম করানোর জন্য রেখেছিলেন আপনি
আপনি অক্সিজেনযুক্ত বিছানায় ঘুমাতেন
কারো সঙ্গে করমর্দনের সময় আপনি দস্তানা ব্যবহার করতেন
প্রয়োজনে মাস্ক পরতেন
দেড়শো বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন আপনি !

শেষ পঁচিশবছর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এক পা-ও
চলতেন না আপনি।
আপনি অর্গান ডোনার রেখেছিলেন আপনার বাড়িতেই
যদি কিডনি ল্যান্স কিংবা চোখের জন্য হঠাৎ কারো প্রয়োজন হয় ।

কারো প্রয়োজন হয়নি !
২৫জুন ২০০৯ সালে পঞ্চাশ বছর বয়সে
আপনার হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ হয়ে গেল।
লস এঞ্জেলস আর ক্যালিফোর্নিয়ার অভিজ্ঞ ডাক্তাররা
কিচ্ছু করতে পারেনি ।
আপনার চারপাশের মানুষজন, পরিচারক, অর্গান-ডোনার
– সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল
আপনি কীভাবে হেরে যাচ্ছেন …
ঝড়ের ভেতর একটা বনস্পতির পাতা আর ডালপালা
কীভাবে দুমড়ে মুচড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায় –
দেখছিলেন সবাই ।
পৃথিবীর আড়াই লক্ষ মিলিয়ন লোক
একসঙ্গে আপনার মৃত্যুর খবর শুনছিলেন

২৫জুন ২০০৯ সালে ৮লক্ষ মানুষ একসঙ্গে
গুগল সার্চ করছিলেন
সাড়ে তিন মিনিট উইকিপিডিয়া কাজ করেনি
ট্রাফিক জ্যাম হয়ে গিয়েছিল

সবাই দেখছিলেন একটা বনস্পতি তার ফুলফল পাতা আর ডালপালা সমেত কীভাবে দুমড়ে মুচড়ে মাটির ভেতর মিশে যাচ্ছিল …

২৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন