‎‎‎শেষবারের মতো দেখবো তোমায়।
‎‎‎শেষবারের মতো দেখবো তোমায়।
মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর।

গল্প - ‎‎‎শেষবারের মতো দেখবো তোমায়।

মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর।
বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫ বিরহ, ভালোবাসা

‎‎‎শেষবারের মতো দেখবো তোমায়।

‎পর্ব–১: ছয় বছরের নীরবতা।

‎রাত ১১টা। জানালার ফাঁক দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকছে। বিছানায় শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছিল আরিয়ান।
‎হঠাৎ মেসেঞ্জারে নোটিফিকেশন—
‎“Hi… তুমি জেগে আছো?”

‎নামটি দেখেই তার বুকের ভেতর হালকা কেঁপে উঠলো—
‎মেহরিন।

‎যে মেয়েটি ছয় বছর আগে হঠাৎ কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই তার জীবন থেকে চলে গিয়েছিল…

‎আজ মাঝরাতে মেসেজ?

‎আরিয়ান টাইপ করলো—
‎“জেগে আছি… বলো?”
‎কিন্তু সেন্ড বাটনে চাপ দিতে পারলো না।

‎হঠাৎ আরেকটা মেসেজ—
‎“আমাকে কি একবার দেখবে? খুব দরকার… প্লিজ।”

‎আরিয়ান শুধু লিখলো—
‎“কোথায়?”
‎“পুরনো রেলস্টেশন।”

‎তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।


‎—

‎পর্ব–২: স্টেশনের আলো-ছায়ায়।

‎পুরনো রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে আরিয়ান দেখলো—
‎দূরের বেঞ্চে বসে আছে মেহরিন।

‎নেভি ব্লু হুডি, মুখটা মলিন, চোখের নিচে কালো দাগ।

‎আরিয়ান ধীরে এগিয়ে গেল।

‎“কেমন আছো?” সে জিজ্ঞেস করলো।

‎মেহরিন নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
‎“ভাল নেই আরিয়ান… সত্যিই ভাল নেই।”

‎তার কণ্ঠে এমন ভাঙা শব্দ ছিল যে শুনে আরিয়ান নিঃশব্দে পাশে বসে পড়লো।


‎—

‎পর্ব–৩: হৃদয়ের পুরনো দরজা।

‎“তোমার সাথে দেখা করতে ছয় বছর সাহস জোগাড় করেছি,” মেহরিন বললো।

‎আরিয়ান অবাক হলো।
‎“আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভুলে গেছো।”

‎“চেয়েছিলাম…”
‎মেহরিনের চোখ ভিজে উঠলো।
‎“কিন্তু তোমাকে ভুলে থাকা জীবন নয়—শুধু চলা।”

‎আরিয়ান ধীর গলায় বললো,
‎“তুমি তো বিয়ে করেছিলে… সুখে ছিলে, তাই না?”

‎সে তিক্তভাবে হাসলো।
‎“সুখ? ছবিতে দেখা হাসি? বাস্তবের মানুষ হাসে কই?”

‎আরিয়ান কিছু বলল না।

‎হঠাৎ মেহরিন তার হাত বাড়িয়ে বললো—
‎“আরিয়ান… আমার হাতটা ধরবে? আগের মতো?”

‎আরিয়ান কিছুক্ষণের জন্য থমকে থাকলেও হাত বাড়িয়ে দিল।

‎তার হাত অস্বাভাবিক ঠান্ডা—বরফের মতো।


‎—

‎পর্ব–৪: সত্যের ভার।

‎“তুমি জানো,” মেহরিন ফিসফিস করে বললো,
‎“তোমার একটা কথা এখনও আমার মাথায় বাজে।”

‎“কোনটা?”

‎“তুমি বলেছিলে—‘যখনই কষ্ট হবে, আমাকে ডাকবে।’”

‎আরিয়ান ধীরে বললো,
‎“হ্যাঁ… বলেছিলাম।”

‎“তাই ডাকলাম আজ।”

‎আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
‎“তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে চেয়েছিলে?”

‎মেহরিন মাথা নাড়লো।
‎“চাইনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছিল। পরিবার, সমাজ… সব মিলিয়ে তোমাকে বাঁচানোর জন্য তোমাকে হারাতে হয়েছিল।”

‎আরিয়ানের বুক কেঁপে উঠলো।


‎—

‎পর্ব–৫: রাতের ভাঙনের শব্দ।

‎দূর থেকে ট্রেনের আলো দেখা যাচ্ছে।
‎হুইসেল বাজছে।

‎মেহরিন বললো—
‎“আরিয়ান, তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতে?”

‎আরিয়ান মৃদু গলায় বললো—
‎“আমি এখনও ভালোবাসি।”

‎মেহরিন চোখ বন্ধ করে হাসলো।
‎“তাহলে একটা কথা বলো—আমি কি তোমার জীবনে ভুল ছিলাম?”

‎আরিয়ান মাথা ঝাঁকালো,
‎“কখনোই না। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সত্যি অংশ ছিলে।”

‎ট্রেনটা এগিয়ে আসছে।

‎মেহরিন উঠে দাঁড়ালো।

‎“মেহরিন, বসো! কি করছো?” আরিয়ান ভয় পেয়ে বললো।

‎সে হালকা হাসলো—
‎“শেষবারের মতো দেখবো তোমায়…”

‎পরের কয়েক সেকেন্ড যেন পৃথিবী থেমে গেল।

‎আলো, শব্দ, বাতাস…
‎সব মিলিয়ে ট্রেনের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল মেহরিন।

‎আরিয়ান দৌড়ে গেল।
‎চিৎকার করলো।
‎কিন্তু কিছুই করার ছিল না।


‎—

‎পর্ব–৬: চিঠির শেষ লাইন।

‎পুলিশ এসে বললো—
‎“তার ব্যাগে আপনার নামে একটা চিঠি পেয়েছি।”

‎আরিয়ান কাঁপা হাতে খুলে পড়তে লাগলো—

‎ “আরিয়ান,
‎আমি খুব ক্লান্ত।
‎জীবনে কেউ আমাকে বোঝেনি—শুধু তুমি ছাড়া।
‎তাই শেষবার তোমাকে দেখতে ডাকলাম।
‎তোমাকে দোষ দেব না, শুধু মুক্তি চাই।
‎শেষবার তোমার হাতটা ধরেই শান্তি পেলাম।
‎—মেহরিন”



‎আরিয়ান চিঠিটা বুকে চেপে ধরে ফিসফিস করলো—

‎“শেষবারের মতো… কেন শুধু শেষবার?”

‎স্টেশনের অন্ধকারে, দূরের আলোয়, মেহরিনের শেষ বাক্যটা বারবার কানে বাজতে লাগলো—

‎“শেষবারের মতো দেখবো তোমায়…”

পরে পড়বো
৭৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন