শেষবারের মতো দেখবো তোমায়।
পর্ব–১: ছয় বছরের নীরবতা।
রাত ১১টা। জানালার ফাঁক দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকছে। বিছানায় শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছিল আরিয়ান।
হঠাৎ মেসেঞ্জারে নোটিফিকেশন—
“Hi… তুমি জেগে আছো?”
নামটি দেখেই তার বুকের ভেতর হালকা কেঁপে উঠলো—
মেহরিন।
যে মেয়েটি ছয় বছর আগে হঠাৎ কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই তার জীবন থেকে চলে গিয়েছিল…
আজ মাঝরাতে মেসেজ?
আরিয়ান টাইপ করলো—
“জেগে আছি… বলো?”
কিন্তু সেন্ড বাটনে চাপ দিতে পারলো না।
হঠাৎ আরেকটা মেসেজ—
“আমাকে কি একবার দেখবে? খুব দরকার… প্লিজ।”
আরিয়ান শুধু লিখলো—
“কোথায়?”
“পুরনো রেলস্টেশন।”
তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
—
পর্ব–২: স্টেশনের আলো-ছায়ায়।
পুরনো রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে আরিয়ান দেখলো—
দূরের বেঞ্চে বসে আছে মেহরিন।
নেভি ব্লু হুডি, মুখটা মলিন, চোখের নিচে কালো দাগ।
আরিয়ান ধীরে এগিয়ে গেল।
“কেমন আছো?” সে জিজ্ঞেস করলো।
মেহরিন নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“ভাল নেই আরিয়ান… সত্যিই ভাল নেই।”
তার কণ্ঠে এমন ভাঙা শব্দ ছিল যে শুনে আরিয়ান নিঃশব্দে পাশে বসে পড়লো।
—
পর্ব–৩: হৃদয়ের পুরনো দরজা।
“তোমার সাথে দেখা করতে ছয় বছর সাহস জোগাড় করেছি,” মেহরিন বললো।
আরিয়ান অবাক হলো।
“আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভুলে গেছো।”
“চেয়েছিলাম…”
মেহরিনের চোখ ভিজে উঠলো।
“কিন্তু তোমাকে ভুলে থাকা জীবন নয়—শুধু চলা।”
আরিয়ান ধীর গলায় বললো,
“তুমি তো বিয়ে করেছিলে… সুখে ছিলে, তাই না?”
সে তিক্তভাবে হাসলো।
“সুখ? ছবিতে দেখা হাসি? বাস্তবের মানুষ হাসে কই?”
আরিয়ান কিছু বলল না।
হঠাৎ মেহরিন তার হাত বাড়িয়ে বললো—
“আরিয়ান… আমার হাতটা ধরবে? আগের মতো?”
আরিয়ান কিছুক্ষণের জন্য থমকে থাকলেও হাত বাড়িয়ে দিল।
তার হাত অস্বাভাবিক ঠান্ডা—বরফের মতো।
—
পর্ব–৪: সত্যের ভার।
“তুমি জানো,” মেহরিন ফিসফিস করে বললো,
“তোমার একটা কথা এখনও আমার মাথায় বাজে।”
“কোনটা?”
“তুমি বলেছিলে—‘যখনই কষ্ট হবে, আমাকে ডাকবে।’”
আরিয়ান ধীরে বললো,
“হ্যাঁ… বলেছিলাম।”
“তাই ডাকলাম আজ।”
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে চেয়েছিলে?”
মেহরিন মাথা নাড়লো।
“চাইনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছিল। পরিবার, সমাজ… সব মিলিয়ে তোমাকে বাঁচানোর জন্য তোমাকে হারাতে হয়েছিল।”
আরিয়ানের বুক কেঁপে উঠলো।
—
পর্ব–৫: রাতের ভাঙনের শব্দ।
দূর থেকে ট্রেনের আলো দেখা যাচ্ছে।
হুইসেল বাজছে।
মেহরিন বললো—
“আরিয়ান, তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতে?”
আরিয়ান মৃদু গলায় বললো—
“আমি এখনও ভালোবাসি।”
মেহরিন চোখ বন্ধ করে হাসলো।
“তাহলে একটা কথা বলো—আমি কি তোমার জীবনে ভুল ছিলাম?”
আরিয়ান মাথা ঝাঁকালো,
“কখনোই না। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সত্যি অংশ ছিলে।”
ট্রেনটা এগিয়ে আসছে।
মেহরিন উঠে দাঁড়ালো।
“মেহরিন, বসো! কি করছো?” আরিয়ান ভয় পেয়ে বললো।
সে হালকা হাসলো—
“শেষবারের মতো দেখবো তোমায়…”
পরের কয়েক সেকেন্ড যেন পৃথিবী থেমে গেল।
আলো, শব্দ, বাতাস…
সব মিলিয়ে ট্রেনের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল মেহরিন।
আরিয়ান দৌড়ে গেল।
চিৎকার করলো।
কিন্তু কিছুই করার ছিল না।
—
পর্ব–৬: চিঠির শেষ লাইন।
পুলিশ এসে বললো—
“তার ব্যাগে আপনার নামে একটা চিঠি পেয়েছি।”
আরিয়ান কাঁপা হাতে খুলে পড়তে লাগলো—
“আরিয়ান,
আমি খুব ক্লান্ত।
জীবনে কেউ আমাকে বোঝেনি—শুধু তুমি ছাড়া।
তাই শেষবার তোমাকে দেখতে ডাকলাম।
তোমাকে দোষ দেব না, শুধু মুক্তি চাই।
শেষবার তোমার হাতটা ধরেই শান্তি পেলাম।
—মেহরিন”
আরিয়ান চিঠিটা বুকে চেপে ধরে ফিসফিস করলো—
“শেষবারের মতো… কেন শুধু শেষবার?”
স্টেশনের অন্ধকারে, দূরের আলোয়, মেহরিনের শেষ বাক্যটা বারবার কানে বাজতে লাগলো—
“শেষবারের মতো দেখবো তোমায়…”

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন