ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

কবিতা - বিধবা-বিবাহ আইন

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

হিন্দু বিধবার বিয়া আছে অপ্রচার।
বহুকাল হ’তে যার নাহি ব্যবহার॥
সে বিষয়ে ক্ষতাক্ষত না করি বিশেষ।
করিলেন একেবারে নিয়ম নির্দ্দেশ॥
শত শত প্রজা তায় ব্যখা পায় প্রাণে।
তাদের আর্দ্দাশ নাহি শুনিলেন কানে॥
গ্রান্ট করি গ্রাণ্টের সকল অভিলাষ।
কালবিল কাল বিল করিলেন পাস॥
না হইতে শাস্ত্রমতে বিচারের শেষ।
বল করি করিলেন আইন আদেশ॥
যাহাদের ধর্ম্ম এই আর দেশাচার।
পরস্পর তারা আগে করুক বিচার॥
বিধি কি অবিধি তারা ঘরেতে বুঝিবে।
যা হয় উঠিত তাই শেষেতে করিবে॥
করিছে আমার ধর্ম্ম আমাতে নির্ভর।
রাজা হয়ে পরধর্ম্মে কেন দেন কর॥
আগে ভাগে রাজাদেশ করিতে প্রচার।
এত কেন মাথা-ব্যথা হউল রাজার?
যদ্যপি বিধান হয় বিধবার বিয়ে।
আপনারা করুক আপন দল নিয়ে॥
যুক্তি আর বিচারেতে যে হয় বিহিত।
দেশেতে চলিত করা তাই ত উচিত॥
অনিয়মে করি এ কি নিয়মের ছল।
ভুপতি তাহাতে কেন প্রকাশেন বল॥
কোলে কাঁকে ছেলে ঝোলে যে সকল রাঁড়ী।
তাহারা সধবা হবে প’রে শাঁখা শাড়ী॥
এ বড় হাসির কথা শুনে লাগে ভর।
কেমন কেমন করে মনের ভিতর॥
শাস্ত্র নয় যুক্তি নয় হবে কি প্রকারে।
দেশচারে ব্যবহারে বাধো বাধো করে॥
যুক্তি ব’লে বিচার করুন শত শত।
কোনমতে হইবে না শাস্ত্রের সম্মত॥
বিবাহ করিয়া তারা পুনর্ভবা হবে।
সতী ব’লে সন্বোধন কিসে করি তবে?
বিধবার গর্ভজাত যে হবে সন্তান।
বৈধ ব’লে কিসে তার করিবে প্রমাণ?
যে বিষয় সর্ব্ববাদি-সম্মত না হয়।
সে বিষয় সিদ্ধ করা শক্ত অতিশয়॥
কলে আর ছলে বলে যত পার কর।
ফলে সে কিছুই নয় মিছে ব’কে মর॥
শ্রীমান্ ধীমান্‌ নীতি-নির্ম্মাণকারক।
যাঁরা সবে হ’তে চান বিধবাতারক॥
নতভাবে নিবেদন প্রতি জনে জনে।
আইন-বৃক্ষের ফল ফলিবে কেমনে।
বিধবার বিয়ে দিতে যাহারা উদ্যত।
তার মাঝে বড় বড় লোক আছে যত॥
যারে ইচ্ছা তারে হয় ডাকিয়া আনিয়া।
ঘরেতে বিঝবা কত পরিচয় নিয়া॥
গোপনেতে এই কথা বলিবেন তারে।
জননীর বিয়ে দিতে পারে কি না পারে॥
যদি পারে তবে তারে বলি বাহাদুর।
এমনি করিলে সর দুঃখ হয় দুর॥
সহজে যদ্যপি হয় এরূপ ব্যাপার।
করিতে হবে না তবে আইন প্রচার॥
যদি কেহ নাহি পারে সাহস ধরিয়া।
বিফল কি ফল তবে আইন করিয়া॥
পবস্পর আড়ম্বর মুখে কত কয়।
কেহ আর মাথা তুলে অগ্রসর নয়॥
গোলেমালে হরিবোল গণ্ডগোল সার।
নাহি হয় ফলোদয় মিছে হাহাকার॥
বাক্যের অভাব নাই বদন-ভাণ্ডারে।
যত আসে তত বলে কে দূষিবে কারে॥
সাহস কোথায় বল প্রতিজ্ঞা কোথায়।
কিছুই না হ’তে পারে মুখের কথায়॥
মিছামিছি অনুষ্ঠানে মিছে কাল হরা।
মুখে বলা বলা নয় কাজে করা করা॥
সকলেই তুড়ি মারে বুঝে নাক কেউ।
সীমা ছেড়ে নাহি খেলে সাগরের ঢেউ॥
সাগর যদ্যপি করে সীমার লঙ্ঘন।
তবে বুঝি হ’তে পারে বিবাহ-ঘটন॥
নচেৎ না দেখি কোন সম্ভাবনা আর।
অকারণে হই হই উপহাস সার॥
কেহ কিছু নাহি করে আপনার ঘরে।
যাবে যাবে যায় শত্রু যাক্ পরে পরে॥
তখন এরূপ কবে হ’লে ব্যতিক্রম।
“ফাটায় পড়েছে কলা গোবিন্দায় নম।”
রাজার কর্ত্তব্য কথা রিতে বর্ণন।
এরূপ লিখিতে আর নাহি প্রয়োজন॥
এইমাত্র শেষ কথা কহিব নিশ্চয়।
এ বিষয়ে বিধি দেয়া রাজধর্ম্ম নয়॥
মরুক মরুক বাদ প্রজায় প্রজায়।
কোন্‌ কালে রাজার কি হানি আছে তায়॥

পরে পড়বো
৩১৪
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন