রসভারা রসময়, রসের ছাগল।
তোমার কারণে আমি, হয়েছি পাগল।
স্বর্ণকুঁকী রত্নগর্ভা, জননী তোমার।
উদরে তোমায় ধরে, ধন্য গুণ তার॥
তুমি যার পেটে যাও, সেই পুণ্যবান।
সাধু সাধু সাধু তুমি, ছাগীর সন্তান॥
ত্রিতাপেতে তরে লোক, তব নাম নিয়া।
বাঁচালে দক্ষের প্রাণ, নিজ মুণ্ড দিয়া॥
চাঁদমুখে চাঁপদাড়ি, গালে নাই গোঁপ।
শৃঙ্গ খাড়া ছাড়া ছাড়া লোমে লোমে থোপ॥
সে সময়ে অপরূপ, মনোলোভা শোভা।
দৃষ্টি মাত্র নেড়ে গাত্র, কথা কয় বোবা॥
স্বর্গ এক উপসর্গ, ফল তাহে কলা।
দিবানিশি পোড়ে থাকি, ধোরে তোর গলা॥
চারি পায়ে ছাঁদ দিয়া, তুলে রাখি বুকে।
হাতে হাতে স্বর্গ পাই, বোকা গন্ধ সুঁকে॥
শুধু যায় পেট ভোরে, পাঁটারাম দাদা।
ভোজনের কালে যদি, কাছে থাকো বাঁধা।
শাদা কালো কটারূপ, বলিহারি গুণে।
সাত পাত ভাত মারি, ভ্যা ভা রব শুনে॥
মহিমায় নাম ধর, শ্রীমহাপ্রসাদ।
তোমার প্রসাদে যায়, সকল বিষাদ॥
জ্বাল দিতে কাল যায়, লাল পড়ে গালে।
কাটনা কামাই হয়, বাটনার কালে॥
ইচ্ছা করে কাঁচা খাই, সমুদয় লোয়ে।
হাড়শুদ্ধ গিলে ফেলি, হাড়গিলে হোয়ে॥
মজাদাতা অজা তোর কি লিখিব যশ?
যত চুষি তত খুসি হাড়ে হাড়ে রস॥
গিলে গিলে ঝোল খায় আম্বাদনহত।
তাদের জীবন বৃথা দাঁতপড়া যত॥
এমন পাঁটার মাস নাহি খায় যারা।
মোরে যেন ছাগী-গর্ভে জন্ম লয় তারা॥
দেখিয়া ছাগের গুণ কোরে অভিমান।
হইলেন বরারূপ নিজে ভগবান॥
তথাচ যবন হিন্দু করে অপমান।
ইংরাজে কেবল তাঁর রাখিয়াছে মান॥
হোটেলে বিক্রয় হয় নাম ধরে হ্যাম্।
পচাগন্ধে প্রাণ যায় ড্যাম্ ড্যাম্ ড্যাম্॥
অদ্যাপি শ্রীহরি সেই অভিমান লোয়ে।
লুকায়ে আছেন জলে কূর্ম্ম মীন হোয়ে॥
কচ্ছপ সে জুজুবুড়ী তারে কেবা যাচে?
মাচে কিছু আছে মান বাঙ্গালির কাছে॥
কিন্তু মাচ পাঁটার নিকটে কোথা রয়?
দাসদাস তস্য দাস তস্য দাস নয়॥
এক দুই তিন চারি ছেড়ে দেহ ছয়।
পাঁচেরে করিলে হাতে রিপু রিপু নয়॥
তঞ্চ ছাড়া পঞ্চ সেই অতি পরিপাটি।
বাবু সেজে পাটির উপরে রাখি পাটি॥
পাত্র হয়ে পাত্র লয়ে ঢোলে মারি চাটি।
ঝোলমাখা মাস নিয়া চাটি কোরে চাটি॥
টুকি টাকি টুক্ টুক্ মুখে দিই মেটে।
যত পাই তত খাই সাধ নাহি মেটে॥
ঝোলের সহিত দিলে গোটা গোটা আলু।
লক্ লক্ লোলো লোলো জিব হয় লালু॥
সাবাস্ সাবাস্ রে সাবাসী তোরে অজা।
ত্রিভুবনে তোর কাছে কিছু নাই মজা॥
কোন অংশে বড় নয় কেহ তোর চেয়ে।
এত গুণ ধরিয়াছ পাতা ঘাস থেয়ে॥
মহতের কার্য্য কর গরিবানা চেলে।
না জানি কি হোতো আরো ঘৃত ক্ষীর খেলে॥
বিশেষ মহিমা তব কি কব জবানী।
জানেন কিঞ্চিৎ গুণ ভাঁড়ে মা ভবানী॥
বৃথায় তিলক ধরে ছাই ভম্ম খেয়ে।
কসাই অনেক ভাল গোঁসায়ের চেয়ে॥
পরম বৈষ্ণবী যিনি দক্ষের দুহিতা।
ছাগ-মাংস-রক্তে তিনি সদাই মোহিতা॥
ছলে এক মন্ত্র বলি বলিদান লোয়ে।
খান দেবী পিতৃ-মাতা বিশ্বমাতা হোয়ে॥
দক্ষযজ্ঞে প্রাণ ত্যজি খণ্ড খণ্ড হোয়ে।
করিলেন ভুষ্টিনাশ কালীঘাটে রোয়ে॥
প্রতি কোপে যত পাঁটা বলিদান করে।
দেবী-বরে জন্মে তারা হালদারের ঘরে॥
এক জন্মে মাংস দিয়া আর জন্মে খায়।
কলীর দেবল হয়ে কালী-গুণ গায়॥
প্রণমামি * * তোমার চরণে।
পেটভোরে পাঁটা দিও যত যাত্রিগণে॥
প্রণমামি সুখদাত্রী ছাগপ্রসবিনী॥
অদ্যাবধি না হইবা কন্যার জননী॥
প্রণমামি কালীঘাট যথা মাতা কালী।
প্রণমামি মুদি-পদে বেচে যারা ডালি॥
ধন্য ধন্য কর্মকার ধন্য তুমি খাঁড়া।
প্রণমামি তব পদে দিয়া গাত্র নাড়া॥
এমন সুখের ছাগে করে যেই দ্বেষ।
তাড়াইব তারে আমি ছাড়াইব দেশ॥
বাছিয়া পাঁটার হাড় গেঁথে তার মালা।
বানাইব কুঁড়াজালি দিয়া ছাগ-ছালা॥
নামাবলী বহির্ব্বাস নিয়া করতলে।
ভালকোরে ছোপাইব রুধিরের জলে॥
সাজাইব গোঁড়াগণে দিয়া রক্ত-ছাব।
পশু-গন্ধে পশুদের যাবে পশু-ভাব॥
ফের যদি করে দ্বেষ হোয়ে প্রতিবাদী।
ঘুচাব গৌঁড়ামি রোগ দিয়া ছাগনাদী॥
অনুমতি কর ছাগ উদরেতে গিয়া।
অন্তে যেন প্রাণ যায় তব নাম নিয়া॥
মুখে বলি গঙ্গা-নারায়ণ-ব্রহ্ম-হরি।
পাঁটামাস খেতে খেতে বিছানায় মরি॥
তাহাতেই মুক্তি লাভ মুক্তি নাই আর।
নিতাস্ত কৃতান্ত হয় পদানত তার॥
হায় একি অপরূপ বিধাতার খেলা।
শুদ্ধ গাত্র কিছুমাত্র নাহি যায় ফেলা॥
লোম তুলি করি তুলি রঙ্গে রঙ্গ ভরি॥
শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণ রূপ সুখে চিত্র করি॥
চিত্রকরে চিত্র করে দিয়া সূক্ষ্মরেখা।
দেবমূর্ত্তি অবয়ব সব যায় লেখা॥
নানারূপ যন্ত্র হয় ছাগলের ছালে।
শ্রীহরি-গৌরাঙ্গগুণ বাজে তালে তালে॥
ঢাক কাড়া নহবৎ মৃদঙ্গ মাদোল।
তবলা অবলাপ্রিয় ঢোল আর খোল॥
এক চর্ম্মে বহু যন্ত্র বাদ্য তায় কল।
নেড়ানেড়ী গৌঁড়াদের ভিক্ষার সম্বল॥
কোপ্নীধারী প্রেমদাস সেবাদাসী নিয়ে।
দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাকরে খঞ্জনী বাজিয়ে॥
সাধ্য কার এক মুখে মহিমা প্রকাশে।
আপনি করেন বাদ্য আপনার নাশে॥
হাড়িকাষ্ঠে ফেলে দিই ধোরে দুটী ঠ্যাং।
সে সময়ে বাদ্য করে ছ্যাড্যাং ছ্যাড্যাং॥
এমন পাঁটার নাম যে রেখেছে বোকা।
নিজে সেই বোকা নয় ঝাড়বংশ বোকা॥
ভ্রমণে যে ভাবোদয় নদনদী-পথে।
রচিলাম ছাগ-গুণ যথা সাধ্যমতে॥
প্রতিদিন প্রাতে উঠি কোরে শুদ্ধ মন।
ভক্তিভাবে এই পদ্য পড়িবে যেজন॥
বিচিত্র পুষ্পের রথে পাঁটা পাটা বোলে।
সাতান্ন পুরুষ তার স্বর্গে যায় চোলে॥

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৫০ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন