দ্বিতীয় সংসার
জয় গোস্বামী
তার সঙ্গে সংসার করেছি কতদিন-
তিন-চার ঘণ্টার সংসার।
স্বামীকে বিচ্ছেদ দিয়ে
সে থাকত একাই একটা ফ্ল্যাটে—
সেই ফ্ল্যাটে যেতাম।
কলেজে অফ ডে কবে সে জানাত ফোনে,
তার ফোন মানে আসতে বলা।
গেলেই আমার কোনও বই এনে সামনের পৃষ্ঠাটি
খুলে ধরে অনুরোধ: ‘সই করে দিন।’
আমার অবাক লাগত প্রথম প্রথম—
বলেছি: ‘কিনলেন কেন? আমিই তো দিতাম।”
তার উত্তর: ‘আমার ইচ্ছে আমি কিনছি, আপনি বাধা দেওয়ার কে?’
পরক্ষণে গলা পাল্টে: ‘দিন না বাবা একটু সই করে!’
হ্যাঁ আমরা পরস্পরকে আপনিই বলতাম
সারাক্ষণ ‘আপনি’। শুধু ওই সময়টুকু
‘তুমি’ হয়ে যেতাম দু’জন।
যে-সময়ে ঝড় হত। ঝড়ের সময় ‘তুমি’। ঝড়বাদল শেষে আমাকে শয্যায় রেখে, মেঝেতে লুটনো চুড়িদার
তুলে নিয়ে সে যেত স্নানঘরে।
বেরিয়ে জিজ্ঞেস করত: ‘চা খাবেন না কফি?’
ততক্ষণে পোশাক বদল করেছে সে
বলতাম: ‘কফিই করুন।'
আবার ‘আপনি’-তে ফিরে যাওয়া।
কফি শেষ হলে বলত: ‘ভাত চাপিয়েছি—
সঙ্গে সাদা আলুর তরকারি, লঙ্কা দিয়ে,
ডাল আছে, খেতে বসলে মাছ ভেজে দেব।
তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আসুন।'
কেমন যেন সংসার-সংসার মনে হত।
এখন সে চলে গেছে। সম্ভবত অন্য কারও কাছে।
আর কোনও যোগাযোগ নেই।
তবুও এখনও যেন মনে মনে শুনতে পাই, শুনি
দ্রুত নিশ্বাসের ফাঁকে ফাঁকে
চাপা স্বরে বলে যাওয়া তার:
‘দাও, দাও এবার।'
আমিও তো উল্কা ঢেলে দিতাম তক্ষুনি।
একদিন বলেছিল: ‘রোজই তো দুপুরে এসে সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে যান।
একটা পুরো রাত্তিরও তো আমাকে দিলেন না আপনি আজও।'
বলেছিল: ‘আমার কী ইচ্ছে করে জানেন? আপনার
কাঁধে মাথা রেখে
বৃষ্টির আওয়াজ শুনব, শুয়ে শুয়ে, অন্ধকার ঘরে।
বিদ্যুৎ চমকাবে জানলায়।”
বলেছিল: ‘থাকবেন আমার সঙ্গে? এই ফ্ল্যাটে?
বলুন, থাকবেন?
মাইনের টাকা আপনি সবটাই বাড়িতে দেবেন
তাতে কোনও অসুবিধে হবে না আমার
কলেজের চাকরি আছে। দু’জনের চলে যাবে ঠিক।’ বলেছিল।
আমারই সাহস হয়নি। পিছিয়ে এসেছিলাম আমি।
তারপরই তো চলে গেল। দশ পনেরো বিশ তিরিশবার
ফোন করে চললাম। আর ফোন ধরল না আমার।
চিঠি লিখলাম কত। একটারও উত্তর এল না।
পাঁচ বছর কেটে গেছে। আরও যাবে পাঁচ দশ বছর।
সে ফিরে আসবে না আর আমার জীবনে। তবু জানি-
তবু জানি লেখার ভেতর
একমাত্র লেখারই ভেতর এসে ঢুকে পড়তে থাকবে বারবার
তার সঙ্গে আমার সেই তিন-চার ঘণ্টার সংসার
প্রত্যেক সপ্তাহে পাওয়া সেই আমার তিন চার ঘণ্টার সংসার...
তিন-চার ঘণ্টার সংসার।
স্বামীকে বিচ্ছেদ দিয়ে
সে থাকত একাই একটা ফ্ল্যাটে—
সেই ফ্ল্যাটে যেতাম।
কলেজে অফ ডে কবে সে জানাত ফোনে,
তার ফোন মানে আসতে বলা।
গেলেই আমার কোনও বই এনে সামনের পৃষ্ঠাটি
খুলে ধরে অনুরোধ: ‘সই করে দিন।’
আমার অবাক লাগত প্রথম প্রথম—
বলেছি: ‘কিনলেন কেন? আমিই তো দিতাম।”
তার উত্তর: ‘আমার ইচ্ছে আমি কিনছি, আপনি বাধা দেওয়ার কে?’
পরক্ষণে গলা পাল্টে: ‘দিন না বাবা একটু সই করে!’
হ্যাঁ আমরা পরস্পরকে আপনিই বলতাম
সারাক্ষণ ‘আপনি’। শুধু ওই সময়টুকু
‘তুমি’ হয়ে যেতাম দু’জন।
যে-সময়ে ঝড় হত। ঝড়ের সময় ‘তুমি’। ঝড়বাদল শেষে আমাকে শয্যায় রেখে, মেঝেতে লুটনো চুড়িদার
তুলে নিয়ে সে যেত স্নানঘরে।
বেরিয়ে জিজ্ঞেস করত: ‘চা খাবেন না কফি?’
ততক্ষণে পোশাক বদল করেছে সে
বলতাম: ‘কফিই করুন।'
আবার ‘আপনি’-তে ফিরে যাওয়া।
কফি শেষ হলে বলত: ‘ভাত চাপিয়েছি—
সঙ্গে সাদা আলুর তরকারি, লঙ্কা দিয়ে,
ডাল আছে, খেতে বসলে মাছ ভেজে দেব।
তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আসুন।'
কেমন যেন সংসার-সংসার মনে হত।
এখন সে চলে গেছে। সম্ভবত অন্য কারও কাছে।
আর কোনও যোগাযোগ নেই।
তবুও এখনও যেন মনে মনে শুনতে পাই, শুনি
দ্রুত নিশ্বাসের ফাঁকে ফাঁকে
চাপা স্বরে বলে যাওয়া তার:
‘দাও, দাও এবার।'
আমিও তো উল্কা ঢেলে দিতাম তক্ষুনি।
একদিন বলেছিল: ‘রোজই তো দুপুরে এসে সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে যান।
একটা পুরো রাত্তিরও তো আমাকে দিলেন না আপনি আজও।'
বলেছিল: ‘আমার কী ইচ্ছে করে জানেন? আপনার
কাঁধে মাথা রেখে
বৃষ্টির আওয়াজ শুনব, শুয়ে শুয়ে, অন্ধকার ঘরে।
বিদ্যুৎ চমকাবে জানলায়।”
বলেছিল: ‘থাকবেন আমার সঙ্গে? এই ফ্ল্যাটে?
বলুন, থাকবেন?
মাইনের টাকা আপনি সবটাই বাড়িতে দেবেন
তাতে কোনও অসুবিধে হবে না আমার
কলেজের চাকরি আছে। দু’জনের চলে যাবে ঠিক।’ বলেছিল।
আমারই সাহস হয়নি। পিছিয়ে এসেছিলাম আমি।
তারপরই তো চলে গেল। দশ পনেরো বিশ তিরিশবার
ফোন করে চললাম। আর ফোন ধরল না আমার।
চিঠি লিখলাম কত। একটারও উত্তর এল না।
পাঁচ বছর কেটে গেছে। আরও যাবে পাঁচ দশ বছর।
সে ফিরে আসবে না আর আমার জীবনে। তবু জানি-
তবু জানি লেখার ভেতর
একমাত্র লেখারই ভেতর এসে ঢুকে পড়তে থাকবে বারবার
তার সঙ্গে আমার সেই তিন-চার ঘণ্টার সংসার
প্রত্যেক সপ্তাহে পাওয়া সেই আমার তিন চার ঘণ্টার সংসার...
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৫৮৯ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন