দ্য কিলার আউটসাইডার – ২৫
দ্য কিলার আউটসাইডার – ২৫
যুবক অনার্য

গল্প - দ্য কিলার আউটসাইডার – ২৫

লেখক: যুবক অনার্য
প্রকাশ - শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ ধরণ: রহস্য

টিটুকে বিদায় দিয়ে জিলম সেদিন বাসায় ফিরেছিলো অনেক রাতে।এই দীর্ঘ সময় সে কী করেছিলো!সে তো চাইলেই রাস্তা ধরে হাঁটতে পারে না চাইলেই যে-কোনো দোকানে বসে চা খেতে পারে না।তাকে চলতে হয় এমন ভাবে যেনো সে মানুষের কাছে থাকলেও মানুষ তাকে ছুঁতে না পারে কারণ সে একজন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ,সে নেলসন ম্যান্ডেলা কিংবা হো চি মিন নয়।সে আসলে একজন সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি সাধারণ কারণ সাধারণ মানুষ এমন অনেক কিছুই পারে যা সে পারবে না,যা করার সক্ষমতা সত্যিই তার নেই।সে এসবকিছুই বোঝে।সে বুঝতে পারে টিটু তাকে কী বোঝাতে চেয়েছিলো কিন্তু সে যা সে তো তাই,সে কি চাইলেই পারবে নিজেকে পরিবর্তন করতে কিংবা সে কি আদৌ নিজেকে পরিবর্তন করতে চায়!জিলম গাড়িতে বসে এসব ভাবছিলো।জন কিটসের একটি লাইন তার মনে পড়ে :

Adieu! the fancy cannot cheat so well
As she is fam’d to do, deceiving elf.

তবে কিটসের বাস্তবতা আর জিলমের বাস্তবতা এক নয়।তবু্ও এই বাক্যটাই জিলমের মনে পড়লো।কেনো যে!
জিলম ড্রাইভারকে বললো ৩৬ র‍্যাংকিন স্ট্রিটে যেতে।৩৬ র‍্যাংকিন স্টিট্রের একটা বাড়ির সামনে গাড়িটা কিছুক্ষণ দাঁড়াল।এই বাড়িটা তখন ৭ তলা দালান ছিলো না।পারুলরা যখন থাকতো তখন এটা ছিলো একটি একতলা বাড়ি।স্কুল জীবনে জিলম পারুলের মতো একটা সাধারণ ঘরের সাধারণ মেয়েকে ভালোবাসি বলার সাহস পায় নি।পারুলও কি তাকে ভালোবাসতো!জানা হয় নি জিলমের।জানাও হবে না কোনোদিন।কলেজে এসে কলেজ ফাইনাল শেষ হবার পর জিলম জেনেছিলো যে রেণু মেয়েটা তাকে পছন্দ করতো।রেণু ছিলো ডাকসাইটে সুন্দরী। আহা রেণু কেনো যে তাকে এপ্রোচ করলো না- এ নিয়ে আজো আফসোস রয়ে গেছে জিলমের। ইউনিভার্সিটিতে এসে জড়িয়ে গেলো রাজনীতিতে।জিলম কোনোদিন ভাবে নি যে রাজনীতিতে আসবে কিন্তু কীভাবে কীভাবে যেনো আসা হয়েই গেলো।ইউনিভার্সিটিতে বন্ধুবান্ধবের তো অভাব ছিলো না।আর কতো শতো মেয়ে জড়ো হয়ে থাকতো আশেপাশে যেনো চাইলেই আকাশ ছোঁয়া যায়।কিন্তু আকাশ যদি নিজেই জিলমকে ছোঁয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে তখন সেই আকাশের মূল্য হয়তো কমে যায়,নিজেকে মস্ত এক মহাকাশ মনে হতে থাকে।
গাড়িটা যখন ৩৬ র‍্যাংকিন স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে কলাতলার দিকে যাচ্ছিলো ঠিক তখনোই ব্যাক ভিউ মিররে তাকিয়ে জিলমের মনে হলো তাকে ফলো করছে কেউ। মনের ভুল নাকি আসলেই ফলো করছে!জিলম রেণুদের বাসার দিকে যেতে চাইছিলো কিন্তু ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার দিকে যেতে বললো।বাসার ঠিক ৫০ গজ কাছাকাছি আসবার পর সন্দেহজনক গাড়িটি হঠাৎ করে মোড় নিয়ে উধাও হয়ে গেলো।এরকম যে শুধু আজকেও হলো তা নয়, এর আগেও একাধিকবার এমন হয়েছে।জিলম ভাবছে প্রতিবারই কি মনের ভুল বা সন্দেহ হতে পারে!

বাসার কাছে এসে জিলম গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বাসার ভিতরে ঢুকে যেতে বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা সিগ্রেট ধরালো।দূরে কোথাও একটা রাতচরা পাখির অস্পষ্ট আওয়াজ।হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে জিলম আঁতকে উঠলো।
-কিরে ভয় পেয়েছিস!
আরে মা তুমি!এতো রাতে বেরিয়েছো কেনো?
-তুই রাস্তায় কেনো, বাসায় ঢুকবি না?
ঢুকবো মা।তুমি বাসায় যাও।আমি একটু পরেই চলে আসবো।

আশা বেগম কথা না বাড়িয়ে চলে গেলন।আশা বেগম চলে যাবার পরই দক্ষিণ দিকে একটি গাড়ি ডান দিকের গলিতে ঢুকে গেলো।জিলম নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারলো কিছুক্ষণ আগে উধও হয়ে যাওয়া গাড়িটাই ডান দিকে আবার উধাও হলো অথবা গা ঢাকা দিলো।না, এটা সন্দেহ হতে পারে না।আজ সে নিশ্চিত যে তাকে কেউ না কেউ বরাবরই নজরে রাখছে।দুইয়েক সময় সে টের পেলেও অধিকাংশ সময়ই টের পায় নি।জিলম মনে মনে ভাবলো- নাহ্, ডাইনিটা খেলতে চাইছে।ঠিক আছে -খেলা হবে।খেলা হবেই।জিলম ড্রাইভারকে হাঁক দিয়ে বললো- ভোলা, গাড়ি বের কর।

৫৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন