রহিমা বেগম খুব ফুরফুরে মেজাজে আছেন।একটি সফল অপারেশনের পর তিনি ক্ষমতা পেয়েছেন।এই ক্ষমতা তিনি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চান।কিন্তু তার মনের ভেতর সবসময় একটা অজানা অস্থিরতা কাজ করে।তিনি ক্ষমতা হারাবার ভয় পাচ্ছেন।না, ক্ষমতা হারানো যাবে না কিছুতেই।ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি সব কিছু করতে রাজি।তিনি মহামান্য অধীশ্বরের কাছে পাকা কথা দিয়ে এসেছেন।মহামান্য স্যার যেভাবে বলবেন তিনি সেইভাবেই চলবেন আর যা চাইবেন তিনি তাই দিতে বাধ্য থাকবেন।তাহলে বাকি দায়িত্ব স্যারের।যতদিন রহিমা বেঁচে আছেন ততদিন তাকে ক্ষমতায় রাখার দায়িত্ব স্যারের।স্যার যদি জীবিত নাও থাকেন, সমস্যা নেই,তিনি রহিমার জন্য পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে যাবেন যেনো রহিমা আমৃত্যু ক্ষমতার সুখ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।কিন্তু কী সেই পদ্ধতি যা অনুসরণ করলে রহিমা বসে থাকবেন আজীবন মসনদে? স্যারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- যথাসময়ে রহিমাকে জানানো হবে।রহিমার মনে একটা মারাত্মক প্রশ্ন জেগে উঠেছিলো।কিন্তু সেই প্রশ্ন করা বিপজ্জনক তাই করে নি।তাছাড়া এসব প্রশ্নের কোনো জবাব রহিমাকে দেয়া হবে না- তা সে জানে এবং বুঝে।রহিমাকে মাদারবোর্ড যখন বলেছিলো- স্যার না থাকলেও রহিমার ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে রাখা হবে,রহিমা তখন প্রশ্ন করতে চেয়েছিলো : তবে কি কথিত সেই স্যার একজন নয়,সেই স্যার কি স্যারগণ মানে একই সময়ে কি একাধিক স্যার বিদ্যমান থাকেন যেমন নাকি কোনো কোনো সাহিত্যবিদ বলেন- বাল্মিকী আসলে একজন নন।বাল্মিকী হলো একদল কবি বা কবি গোষ্ঠীর নাম যারা ধাপে ধাপে ‘রামায়ণ’ রচনা করেছিলেন।কিন্তু রহিমা প্রশ্ন করে নি কেননা বস্তুত এই প্রশ্নের উত্তর জানা তার জন্য জরুরি নয়।তবে সে শুধু এইটুকু আশংকা করে যে বর্তমান স্যারের অবর্তমানে নতুন কোনো মহামান্য এলে যদি রহিমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেন,তাহলে!
তবে এইসব ভাবনা রহিমার উপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না।সে বরং ক্ষমতা কীভাবে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা যায় সেই ধ্যানেই বিভোর হয়ে থাকে।মাঝে মাঝে সে ফাঁকা ঘরে হো হো হা হা করে শুধু হাসে।তার খুব মজা লাগে নিজেকে বিশ্ব বিজয়ী মনে হয়।এই বিজয়কে যাপন করার জন্য সে প্রায়শ ঘোলা জল খেয়ে খুব ডুবে যেতে পছন্দ করে।টাল হতে হতে মেঝেয় বা সোফাতেই টলে পড়ে।মনিষা এসে তাকে বিছানায় ঠিক মতো শুইয়ে দেয়। কয়েকদিন হল মনিষা নেই।ছুটিতে আছে।দেশের বাড়ি গেছে।আজ রহিমা একটু বেশি টাল ছিলো।মেঝেতেই টলে পড়লো।কেউ এসে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো না।একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার তার সেল ফোনে কয়েকবার বেজে উঠলো। সে টের পেলো না।তার নাক নির্জন রাতকে স্তব্ধ করে দিয়ে ডেকেই চললো – ঘৎঘৎঘররর ঘররর ঘৎ ঘো ঘো ঘররর…
দ্য কিলার আউটসাইডার – ৩০


০
০
সেভ বা রিয়েক্ট করার জন্য লগইন করে নিন!
২৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন