কবিতা - নিশিফোনে মুঠোজীবন ফিরেফিরে দেখা (দুই)

মোঃ আব্দুল মজিদ এনডিসি

পৃথিবীর অমর শিল্পীরা ঐ যে গেয়েছেন- ‘আমার দিন কাটে না
আমার রাত কাটে না, স্মৃতিগুলো কিছুতেই পিছু হটে না’…

এমনই পিছু না হটা কিছু স্মৃতির দুর্বহ বোঝা নিয়ে
সহস্র বিনিদ্র দিবস-রজনী পেরিয়ে পেরিয়ে
আমি কবি চলেছি পৃথিবীর পথে-পথে সারাটি জীবন…

হেলাল হাফিজের হরেক রকম কষ্টের মতন
আমিও কবি পসরা সাজিয়েছি হরেক রকম স্মৃতির-
কিছুটা বক্ষ-লালিত ভেজা-ভেজা প্রীতির
মেরুণ-রঙা ঘাসফুল, অন্যরা বন্য বরাহ,
তাই নিয়ে করেছি ফেরি আমি পৃথিবীর ঘাটে-ঘাটে অহরহ…
 
আমি সে-ই যে জন্মের জংলী-ঘ্রাণ নিয়ে কাটিয়েছি কাঁটাবন
শিশুকাল-কৈশোর, যার দগদগে হিরোশিমা-ক্ষত, রক্ত-ক্ষরণ
আজও জেগে আছে আমারই কালো রক্তের গভীর ভেতরে…

নচিকেতা-যৌবনের বারবার মূল্যপতন নিয়ে বন্দরে-বন্দরে 
ভেসেছি, পথে-পথে হেঁটেছি, যে পথে কেবলই সংসারী মানুষেরা যারে
মুখ ফিরিয়েছে বারেবারে,
আমি যেন সেই নচিকেতা…

কত সরব স্বপ্ন, আর কত নিস্তব্ধ কথকতা
নিয়ে যৌবনের পাশে-পাশে
স্বপ্নের ঝাউবন-গলি ধরে অনেক ভেসেছি আমি সৈকত বাতাসে…

পৃথিবীর তিনশো কোটি মানবীর শুধু একজনের
জন্য আমি যে ছয়শো কোটি পুরুষ সেজেছি বারবার রকমফের,
তবুও সে মুখ ফিরিয়ে নিলো কুয়াসা-মানবী…

অবশেষে আমি কবি-
জীবনানান্দিক বনলতা সেনের কাছে এসে
জীবনের সকল লেনদেন চুকিয়ে দিয়ে শেষে
কেবলই প্রেমহীন সম্পর্কের রশি ধরে থিতু হতে চাই যেন হায়!

তবুও শেষ কোথায়!
হায়! অবাক বিশ্বের অবাক ধরণীতল!
অবাক তার মানব-মানবী দল!
তবুও শেষ কোথায়!

নচিকেতা-যৌবন আমার কেবলই দীঘল হয়;
ভেসে চলে সৈকত বাতাস ঠেলে-ঠেলে
দূর থেকে আরো দূরে ঝাউবন-ছায়া পিছে ফেলে ফেলে…
 
মনে পড়ে বারবার- স্মৃতির কাব্যজুড়ে
আমার কেবলই জলপাই-রং সহস্র চিত্রকল্প উড়ে…

সেই সে মুঠোফোনে ইতিহাস হয় হাজারটি নিশি যাপন…
পৃথিবীর সুদূর দূর দুটি প্রান্তে দুটি অবুঝ যৌবন,
পাগলপারা দুটি অস্থির মন
মুঠোফোনে করেছে চলে শুধুই নিশি যাপন…

আমি কবি বলি – এ যেন অনুভবের শুধু অণুক্ষণ,
যেন কেবলই নিশিফোনে মুঠোজীবন
ফিরেফিরে দেখা…

দুজনে ‍দুজন আছি কেবলই একা,
কেবলই একা…

পরে পড়বো
৬৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন