ঢাকির ছেলের দূর্গা পূজা
ঢাকির ছেলের দূর্গা পূজা
মানব মন্ডল

গল্প - ঢাকির ছেলের দূর্গা পূজা

মানব মন্ডল
বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ জীবনবাদী, ভালোবাসা

তখন জমিতে ধান বোনার কাজ শেষ। ফলে আবার পান্তা পস্টি খেয়ে দিন কাটাতে হবে কিছুদিন। আমার অবশ্যই পেঠের ভাত জোগাড় হয়ে যাতো তখন স্কুলে যেতে শুরু করেছি । ওখানকার দিদি মুনির বাড়িতে গিয়ে বেগারে খেটে আসতাম মাঝে মাঝে।তাহলে কিছু ভালো মন্দ খেতে দিতো, মানে ওরা বড়লোক, রাতের বেচে যাওয়া খাবার গুলো দিতো আমাকে।
সেবার  ওখানে গিয়ে ও বাড়ির মেয়ে মামপির মূখে শুনতে পেলাম, ওর নাকি পূজায় চার চারটে নতুন জামা হয়ছে। আমার ছেড়া জামা দেখেই বললো আসলে। জামাটা দোষ কি ওটা তো অনেক পুরাতন।
ওর কথায় আমার কষ্ট হয়নি। বরংচ খুশিই হলাম, দূর্গাপূজা মানেই তো মজা। না আমার নতুন জামাও হয় না, ক্যাপ ফাটানো পিস্তল ও কেউ কিনে দেয় না, কোথাও ঘুড়তে যাওয়া হয় না।  কিন্তু শহর যাওয়া হয় বাপের সাথে। না ঘুড়তে নয়। তোমারা যেমন খাট কিনে চাদর ফ্রি চাও। আমিও ফ্রীয়ের মাল। বাপ ঢাক বাজায় , আমি ঘন্টা বাজাই। তবে এবার শহরের গেলে নিশ্চয়ই আবার আমার ছেড়া জামা দেখে কেউ নতুন জামা দেবে সেটা ভেবেই খুশি ।
বাড়ি এসে, সন্ধ্যায় বাপকে জরিয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করলাম “কবে পূজা গো, ওরা বললো সামনে পূজা তো। তুই ঢাক বেড় করলি না বাপ..”
বাপ মুখ কালো করে বললো ” এবার তো যাওয়া হবিনি আর শহরে। ভুলে গেলি সেবার ঢাকটা  ফাটিয়ে দিয়েছিলো বাবুরা”
আমি বললাম ” তার জন্য তো ওরা হাজার টাকা দিয়ে ছিলো”
বাপ বললো “হাজার টাকায় ঢাক সরানো হয় নাকি, আমি বললাম ” হাজার টাকা নিলে কেন? ”
বাপ বললো ” তোর মায়ের পড়ার মতো শাড়ি নেই, বোনকেও কোন জামা কিনে দেওয়া হয় নি। তাই নিয়ে নিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম, ভাগারে তো গুরু মহিষ পড়বেই ওর চামড়া দিয়ে ঢাক সারিয়ে নেবো।”
আমি চুপ করে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসলো না। ভোর উঠে মাঠের দিকে যাবো, কোথা থেকে রামু এসে গুতো মারলো। ওকে একটু আদর করে দিতেই খুশি। ও পাঠা হলেও খুব বুদ্ধি রাখে। আমি ওর পীঠ চড়ি মাঝে মাঝে, নিজেকে রাজপুত্তুর মনে হয় পিঠে চড়ে। ও আমার পিছু নিচ্ছিলো। আমি ওকে তাড়িয়ে দিলাম। আমি কখন বাড়ি ফিরবো ঠিক নেই তো।
আসলে আমাদের গ্রামের ভাগারে, গরু, মহিষ মরা পড়লেও এখন থাকে না। নদীর পারে কোথা থেকে কিছু রোহিঙ্গা মুসলমানরা জুটেছে। ওরা গরু মোষ শুয়োর সব খায়। মরা পশু পড়লে সাথে নিয়ে চলে যায় ওরা। রোহিঙ্গারা একটি ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী যারা রাখাইন রাজ্যের আদিবাসী। মায়ানমার মানে রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত মুসলিমদের আমরা রোহিঙ্গা বলি। এরা এখন একটি রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বাস করছে কিন্তু দেশটির বেশিরভাগ বৌদ্ধ জনগণ তাদের বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করছে। ।
এরা রোহিঙ্গা ভাষায় কথা বলে, যা বাংলা ভাষা বলয়ের একটি উপভাষা।  ২০১৬-১৭ সালে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের দ্বারা তাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়।যার ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গার  পালিয়ে এসেছে বাধ্য হয়ে।
তাই আমি ঠিক শিবানীপুরের ভাগারে যাবো। ওটা হিন্দু গ্রাম গরু মরা নিশ্চিত পাবো। আর পেলামো।  চামড়া কেটে ফিরে এসে, চামড়া টা ধুয়ে বাগানে শুকাতে দিয়ে, নদীর জলে চান করে ফিরছি। আমার বোন পুটি আমাকে জরিয়ে ধরে কি কান্না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। কি হয়েছে। ও বললো, রামুকে নিয়ে বাপ রহিম কষাইএর কাছে নিয়ে গেছে।
আমি বাড়ি তে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শরু করতেই মা বললো ” আমি তোদের ঠিক মতো খেতে দিতে পারি না, ও অবলা জীব ও মানবে কেন?? রোজ এর বাগানে ওর বাগানে ঢুকছে, রোজ রোজ ঝগড়া, তাই পাপকে বিদায় করলাম। তোর বাপ ঐ পয়সায় ঢাক সারাবে বলছে। মা দূগ্গা যদি এবার মুখ তুলে চায় অনেক টাকা পাবো। করোনায় পূজা বন্ধ হলো বলেই তো আমাদের এতো অভাব। এবার জগদ্ধাত্রী পূজা অবধি তোর বাপ শহর থাকবে। অখিল কাকার হোটেলে কাজ করবে, পূজা ছাড়া দিন গুলোতে। ‘
দূরে থেকে ঢাকের আওয়াজ শোনা গেলো। বাপ ফিরছে। ঢাকের আওয়াজ ছাড়া তোমাদের দূর্গা পুজা, দূর্গা পূজা নাকি। ঢাক বাজাবো আমরা তোমার নাচা নাচি করবে, আনন্দ করবে। দুই টো পয়সা পেলেই আমাদের আনন্দ।

পরে পড়বো
৮৪
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন