পূজার মার্কেটিং
পূজার মার্কেটিং
মানব মন্ডল

গল্প - পূজার মার্কেটিং

মানব মন্ডল
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫ জীবনবাদী, ভালোবাসা

দক্ষিণেশ্বর শ্রী স্বয়ম্ভু বুড়ো শিবের মন্দির

শ্মশান ঘাট লাগোয়া রয়েছে এক বুড়ো শিব মন্দির, কথিত আছে এই শিব নাকি স্বয়ম্ভূ। পাশাপাশি এই শিবের নাম দক্ষিণেশ্বর হওয়ার কারণেই জায়গার নাম দক্ষিণেশ্বর হয়েছে। জায়গার ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় স্বয়ং শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও নিজে এই দেবাদিদেবের পুজো করেছিলেন। মূলত দক্ষিণেশ্বরের শিব মন্দিরের উৎপত্তি রহস্যে ঢাকা তথাপি কিংবদন্তি তথ্যকে আড়াল করেও বলা যায়। প্রবেশ পথের উপরে আধুনিক সাইনবোর্ডে ঘোষণা করা হয় বর্তমানে যে লিঙ্গটি অবস্থিত তার পুজো শুরু হয়েছিল এক নির্দিষ্ট বান রাজার আমলে।

প্রচলিত বাংলায় বান রাজার কিংবদন্তি প্রাচীনত্ব প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয় যা মান্ধাতার আমল। আনুমানিক যা দু হাজার বছরেরও বেশি পুরনো হতে পারে এই মন্দিরের ইতিহাস। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে, ওই এলাকার ব্রাহ্মণের একটি গরু প্রতিদিন বনে যেত, এবং যখন সে ফিরে আসত তখন ব্রাহ্মণ দেখতে পান তার সমস্ত দুধ শেষ হয়ে গিয়েছে। একদিন সে জঙ্গলে গরুটিকে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেখানে দেখতে পায় গরুটি তার সমস্ত দুধ এক শিলা খণ্ডের ওপর জমা করছে। সেই রাতেই ব্রাহ্মণ স্বপ্ন দেখেন শিব আবির্ভূত হয়ে তাকে লিঙ্গটি সরিয়ে নদীর তীরে একটি মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন। ‌

যদিও বর্তমান মন্দিরটি দেওয়ান হরনাথ ঘোষালের নির্মিত। ১৭০৮ সালে সুসম্পন্ন হয় এই মন্দির নির্মাণের কর্মকান্ড। ১৮৯৬ সালে মন্দির থেকে একটি সাধারণ পাকা ঘর হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা বর্তমানে দশ বর্গফুট এবং প্রায় কুড়ি ফুট উচ্চতা সম্পন্ন। মন্দির ঘিরে রয়েছে দুটি দরজা একটি প্রবেশ পথের দিকে মুখ করে একটি ঘাটের দিকে মুখ করে। সবচেয়ে মজার বিষয়, এই লিঙ্গের প্রকৃতি দেখতে মোটেও প্রচলিত লিঙ্গের মতো নয়! প্রচলিত পাথরের লিঙ্গ একটি বৃহৎ প্রক্ষিপ্ত পাথরের টুকরো।

স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে যেহেতু ভক্তরা জল ঢেলে লিঙ্গের পুজো করেন সেই সময়ের সঙ্গে লিঙ্গ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। পাশাপাশি মন্দিরের বাইরের দিকের ফলকে ১৯৯০ সালে মিত্র পরিবারের সদস্যদের দ্বারা এই মন্দিরে সংস্কার কাজের বিবরণ রয়েছে। সময়ের ভারে হারিয়ে যাওয়া এই দক্ষিণেশ্বর শিব মন্দির এখন অবহেলিত। স্থানীয়রা ছাড়া খুব কম লোকই এখানে আসেন এবং পুজো করেন। এমনকি খুব কম লোকই জানেন, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস নিজে মন্দিরে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। রানী রাসমনির কালীমন্দিরের খ্যাতি এতটাই যে এই মন্দিরের ইতিহাস আজ লুপ্তপ্রায়।

২৩
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন