বৃষ্টির পড়ার আওয়াজটা কি সুন্দর! বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। আসরটা জমবে। কিন্তু আমি আমার বাড়িতে রাজী হয় নি কোনো দিন এরকম আসরের জন্য। কারণ নীচের ফ্লোরে তিনটে চারটে মেয়ে ভাড়া থাকে। আমি একা মানুষ। নয় মাসে ছয়মাসে বাড়ি আসি। মেয়েগুলোকে ভাড়া দিয়ে একেবারে নিশ্চিন্ত। ভাড়াটা রাখে, ভাড়া নেওয়া আসলে আমার উদ্দেশ্য নয়। বাড়িটা ওরাই দেখা শোনা করে দেয়। ট্রাক্স থেকে ইলেকট্রনিক বিল , সব ওরাই দিয়ে দেয়।বাগানের গাছগুলো দেখে। ফ্যামেলি ভাড়া দিলে অনেক ঝামেলা ছিলো। এটা ওরাই মেসের মত ব্যবহার করে। প্রতিবছর এগ্রিমেন্ট এর ঝামেলা নেই । নাই ভাড়াটে তোলার ঝামেলা। তবে এই যা বন্ধু বান্ধবদের বাড়িতে ডাকতে পারিনা।আজ সুযোগ পেলাম।ছায়া ছাড়া কেউ বাড়ি নেই। সবাই ছুটিতে বাড়ি গেছে। আর ছায়ার ও নাইট ডিউটি যাবে।
অভিকে দেখেই ছায়ার চোখে একটা ভয় খেলে গেল। আর অভির চোখ একটা দুষ্টু হাসি খেলে গেলো। রহস্যটা জানতেই ওর গল্পে সন্ধ্যাটা রঙিন হয়ে গেলো। ওর পৌরুষত্ব এর গর্বের গল্প। অভির শরীরের শিরা উপশিরা নীল রক্ত বয়ে চলেছে। কোনো মেয়ের শরীর ভোগ করা ওর বাঁ হাতের খেলা। ছায়া তখন ন্যার্সের কাজে ঠুকেছে ওর নার্সিং হোমে। একটা মাইনোর অপরেশন থিয়েটারে রোগীকে অজ্ঞান করে ,ওকে প্রথম বার ধর্ষণ করেছিলো অভি। ওর নার্সিং হোমে নতুন নার্স এলে, এটা ও করেই থাকে কারন O.T. থেকে বেড়াতে গেলেই ভয় দেখানো হয় । রুগী মারা গেলে দায়ী থাকবে নার্স।তবে ছায়ার ব্যাপারটা একটু আলাদা। তাই এখনও অভি ছায়াকে ভুলতে পারিনি। ওর কথায় আসলে পাখি শিকার তো সবাই করতে পারে বাঘানীর শিকার তো আসল।
হঠাৎ চোখ খুলেই দেখি চারিদিকে শুভাকাঙ্ক্ষীর ভিড়। সবাই কতো উপদেশ দিলো। গল্পটা যা বুঝলাম। সবাই জানে আমি , আমার শিরা কেটে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। ছায়া ছিলো বলে বেঁচে গেলাম এ যাত্রায়। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার বিবাহ বার্ষিকী ছিলো কাল। সবাই ভাবলো অতো বছর পরেও, নীলাঞ্জনাকে আমি ভুলতে পারি নি। তাই হয়তো আত্মহত্যার চেষ্টা করছি আমি। আমার মামিমা ছায়ার দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। উনি সবার সামনে বললেন” সঠিক মানুষ পেলে শুধু প্রথম ভালোবাসা কেন পুরো অতীত ভুলে যাওয়া যায়। এই ছায়াকেই তো ও বিয়ে করে নিতে পারে। একা থেকে খালি খালি কষ্ট পেয়ে কী হবে। আর তোকে শেষ বয়সে কে দেখবে?”
তিন চারদিন হয়ে গেলো বাড়িতে এসেছি। ছায়া আমাকে সেবা করে যাচ্ছে মুখ বুজে।ওর এই ব্যবহার আমার শিরা উপশিরায় একটা যন্ত্রনা বেয়ে বরাছিলো। আমি ওর হাতটা ধরে ফেললাম। বললাম ” মামিমার প্রস্তাবটা নিয়ে কিছু ভাবলে?”
ও বললো ” ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছেন!”
আমি বিপদে পড়ে ইতস্ততঃ হয়ে বললাম
” ক্ষতিপূরণ নয়। তুমি জানো আমি ভুল করে ফেলেছি । আমি এরকম নয় সেটা কি অজানা তোমার । কিন্তু আমার তোমাকে আগে থেকেই ভালো লাগে। সেই দিন সাহস পেয়ে ছিলাম তাই।”
ও আমাকে চূপ করিয়ে ” সাহস পেলেন তখনই যখন জানতে পারলেন , আমি নষ্ট মেয়ে। ক্ষতি আমার হয়নি ।আপনার হয়েছে। আপনাকে সন্মান করতাম সেটা নষ্ট করলেন। এখন আপনাকে ঘৃনা করি।”
আমি বললাম ” ঘৃনা করো। তাহলে বাঁচাতে গেলে কেন? পুলিশ কেস হলে তো , বলতে পারতে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরি চালিয়েছি।”
ও বললো ” পার্থক্যটা এখানেই। আপনারা যারা উচ্চ তালার মানুষ তাদের শিরা উপশিরায় নীল রক্ত বেয়ে চলেছে। আইন কাউকে অপরাধী বললেই সে অপরাধী নয়তো বেকুসুর খালাস। আমাদের মতো মানুষের গায়ের শিরা উপশিরায় হয়তো এখনো মানুষের রক্ত বেয়ে চলেছে। তাই আপনাকে বাঁচালাম। আইনের পথে গিয়ে হয়তো সাজা দিতে পারতাম। কিন্তু আপনার অপরাধী মনটাকে সুস্থ করতে পারতাম না।”
সত্যি অভির বিরুদ্ধে ছায়া আইনি ব্যবস্থা নিয়েছিলো।কিন্তু কিছুই হয়নি। এ সমাজে পুরুষ উপভোগ্যক্তা । মেয়েরা পন্য। তাই সমাজ ধর্ষকের ঘৃণা করে না। ঘৃনা করে ধর্ষীতাকে। মেয়েদের আমরা সবসময় উপভোগ্য পন্যের মতোই ভেবে এসেছি। বিজ্ঞাপন থেকে মা বাবার পোশাক নির্বাচন সবকিছুতেই একটি মেয়েকে সুন্দর বানানোর চেষ্টা করে , তা আসলে মেয়েদের পন্যায়নের চেষ্টার নামান্তর। খেলনা বাটি দেওয়া থেকে মেয়েদের হাতে পুতুল দেওয়া। বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাঁর শুধু পুরুষের হাতের খেলনা। খেলার বস্তু , পুরুষ এর সেবা করাই ওদের ধর্ম। ধর্ম বলে মেয়েদের বোরাখা ঢেকো লজ্জা। পুরুষকে বলেনা নিজের লোভ সামলাতে। বরং পুরুষকে দিয়েছে তালাক দেবার ঘৃন্য ক্ষমতা।
ও চলে গেল ঘর থেকে। সেই দিনের সকালের কথাটা মনে পরলো। অভি ওর শরীরের নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছিলো।অভির কথায় ” কোরআন এর আয়তো চেয়ে সুন্দর ওর শরীর”। মেঘলা সকালের একটা নেশা জরানো আলো। স্নানের পর ওকে শিশির ভেজা গোলাপের কুঁড়ির থেকে সুন্দর লাগছিলো। ব্রেকফাস্ট একসাথে করার বাহানায় রান্নাঘরে ঢোকালাম ওকে। অভির পরিকল্পনা অনুসারে ওষুধ মেশানো চাটাও ও খেয়ে নিলো।সরল ভাবেই বিশ্বাস করে ও আমায়। সুযোগ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমি। দশপোনোর মিনিট উপভোগ করলাম শরীরটাকে। শিরা উপশিরায় তখন জয়ের আনন্দ। কিন্তু ও দমবার মেয়ে নয়। ওর হাতের ছুরিতে কেটে আমার হাত টা।শুনেছি অনেকেটা রক্ত বেরিয়ে গেছে। হয়তো পুরোটা ই নীল রক্ত। তাই এখন শিরা উপশিরা শুধু মাত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে অনুশোচনার যন্ত্রনা।
,,,,
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন