দুই নম্বর ঘোষ পাড়া
দুই নম্বর ঘোষ পাড়া
মানব মন্ডল

গল্প - দুই নম্বর ঘোষ পাড়া

মানব মন্ডল
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ভালোবাসা

আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু সত্যিই এর আগে আমি কোন দিন আমার শশুর বাড়ি আসি নি। তবে এখানে যে কারণে এসেছিলাম সেই উদ্দেশ্যেটা বৃথা হয়ে গেলো আজ। এবং নিজের কাছে  নিজে অনেক ছোট হয়ে গেলাম।
আমি প্রথমা স্ত্রী বা প্রাক্তন স্ত্রীকে এখনো আমি ভালোবাসি। বাবা অসুস্থ হওয়ায় প্রায় অনিচ্ছায় দ্বিতীয় বিয়েটা করেছি। হু মা বাবা ইন্দিরাকে দেখেছে। মেয়েটি ভালো  এবং  শিক্ষিত দুই টি কথাই আমার কাছে যথেষ্ট ছিল ।  আলাপ পরিচয় করার আমার আগ্রহ ছিলো না।
তবে বিয়ের আগে উনি আমাকে ফোন করেছিলেন। উনার একটা অতীত ছিলো ওটা নিয়ে উনি আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো। তখন আমি উনার কথা শুনি নি। আমার একটা কথা আমার ও একটা কলঙ্কিত অতীত আছে। তাই বিয়ের পূর্বে যদি উনি কিছু ঘটিয়ে থাকেন সেই ঘটনা নিয়ে জবাব দাহি করার প্রয়োজন কোথায়??
উনি তো তখন আমার অপরিচিত। উনার অতীত যাই ঘটে থাকুক তা নিয়ে মাথা ব্যথা থাকার কারন নেই। কারণ উনি না বললে সেটা আমার অজানা থাকবে। বলতে চেয়েছে সেটাই উনার সততার প্রমাণ। উনি বিয়ের পর বিবাহের সম্পর্কের মর্যাদা দিলেই চলবে, সম্পর্কটায় অনুগত থাকলেই চলবে বলে ফোন রেখে দিয়েছিলাম।
বিয়ে করে উনি যখন আমার বাড়িতে এলেন কি পেলেন ঠিক জানি না। তবে আমার বাড়িতে আমার বাবা অসুস্থ সে হিসেবে উনি বাবার সেবা করার জন্য উনার শিক্ষকতা পেশাটা ছাড়লেন, আর  এ বাড়িতে আয়ার চাকরি টাই নিলেন।
চাকরি বলছি কারণ সাধারণত আমি মনে করি পৃথিবীর সব সম্পর্ক কিছু শর্তে ওপর দাড়িয়ে থাকে। যেমন এই ধরুন উনি আমাকে বিয়ে করেছেন বৌ ভাতের দিন ভাত কাপড় নামক অনুষ্ঠানে ওনার ভরন পোষণের দায়িত্ব নিয়েছি । সেটাতো একটা অলিখিত চুক্তি।
আমি যেমন চাকরি করি তারপর অর্থ  উপার্জন করি  তেমনি যুগ ধরে স্ত্রীরা ঘর কন্যা সামলায় বিনা পয়সায় শুধুমাত্র সামাজিক নিরাপত্তা পেতে। একটা ভালোবাসার মানুষ পেতে।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে উনি কখনোই ভালোবাসা পান নি। বরং এ বাড়ির , মানে আমার এই শশুর বাড়ি আসার আগে পর্যন্ত উনাকে আমি একটু সন্দেহ চোখে দেখতাম মনে মনে কিছুটা ঘৃণা করতাম আমার অতীত দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে।

বিয়ের পর থেকে আমার তেমন কথা হয় নি। ফুলসজ্জার রাতে কিছু কথা বলেছিলাম আমি।সে গুলো কথা না বলে শর্ত বলতে পারেন। যদিও বিয়ের পূর্বে একই কথা বলে ছিলাম আমি উনাকে ফুলসজ্জার রাতে বিষয়টি পরিস্কার করে দিয়েছিলাম।
আমার সবচেয়ে বড় শর্ত ছিলো। উনি আমার কাছে থেকে দাম্পত্য সুখ পাবেন না। কারণ আমি আমার অসুস্থ বাবার মানসিক শান্তির জন্য বিয়ে করেছি। ভালোবাসাহীন শারিরীক সম্পর্কে শুধু মাত্র যৌনতা চাহিদা মেটে সেটা আমি বাজার থেকে কিনতে পারি। তাই যতদিন না ভালোবাসি ততদিন উনি রাতে আমার ঘরে যেনো না আসে।
তবে এ নিয়ে আমার বাড়ির লোক জন কিছু বুঝতে পারি নি। কারণ আমি তিন মাস পর আমি এক মাস ছুটিতে আসি। আমি আমার নিজের বাড়িতে অতিথির মতো। বরং আমার বাড়িতে উনার বেশি
কতৃত্ব  চলে। যেমন সেইদিন মা বললেন ” ইন্দুকে একটা স্কুটি কিনে দে। তুই ওকে কিছুই দিস না।ও ওর টিইসানি গুলো ছেড়ে দিয়েছে। নয়তো নিজেই কিনে নিতো। ও ওর জমানো টাকায় নেবে বলছিলো আমি নিতে দিই নি । ”
স্কুটি কিনে দেবার পর থেকেই আমার উনার প্রতি একটা ঘৃণা জন্ম নিলো। না ওনার বিরুদ্ধে আমার আগে কোন অভিযোগ ছিলো না। আমি বড়ো অগোছালো। কিন্তু আমার ঘরে উনার প্রবেশ অধিকার নেই আমার উপস্থিতিতে তবুও ঘরটা উনি  গুছিয়ে রাখেন, পড়ার টেবিলে ঠিক সময় চা, জল,  টিফিন রেখে যান।
কিন্তু রোজ বিকালে কোথাও একটা বেড়িয়ে যেতেন উনি। উনাকে সন্দেহ করার সময় আগে আমি পাই নি বা ইচ্ছা হয়নি আমার। কিন্তু আজকাল কেন জানি না জানতে ইচ্ছা করে কোথায় উনি যান রোজ বিকালে। এবার খোঁজ নিয়ে দেখেছিলাম বাড়িতে , মা বলেছিলো ও আমার শশুর বাড়িতে যায়।
তাই শশুর বাড়িতে এলাম আজ প্রথম এটাই আবিষ্কার করতে  উনি কার সাথে দেখা করতে আসেন এখানে রোজ।
আবিষ্কার করলাম একটি মেয়েকে যে নিজের যৌবনটা ব্যায় করেছে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হওয়া বাবার সংসার সামলাতে। ওনার বাবা ট্রাম কোম্পানির বাস ডাইভার ছিলেন। এমনি বাড়ির অবস্থা ভালোই ছিলো কিন্তু দুর্ঘটনার  ধাক্কাটা  সামলাতে অসুবিধা হয়েছিল। ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছিলো ওনি নিজে দাড়িয়ে থেকে।  তারপর মা বাবার ইচ্ছা রাখতেই উনি আমাকে বিয়ে করেন। ওর ভাইয়ের বৌ ওর বাবা মা দেখতে পারবে না বলে দেওয়ায়। সকালে ওনার ভাই আর বিকালে ওনি আসেন এ বাড়িতে।

আজ রাত আমি থেকে গেলাম ইচ্ছা করেই আমার শশুর বাড়ি।  এ বাড়ি নীচের তলা ভাড়া দেওয়া হয়েছে।একটা খায়পড়ার কাজের লোক রাখার জন্য। তাই ঘরের সংখ্যা যেহেতু কম। তাই উনি আমার সাথে ঘর শেয়ার করতে বাধ্য।

উনি রাতে বেলায় এসে  বলেন। আজকের দিনটা রাতের বেলায়, উনি আমার সাথে থাকতে চান। আমি বললাম ” একটা শর্তে, আমাকে আপনাকে একটা হ্যাগ করতে দিতে হবে। ”

উনি দরজায় চিটাকানি দিয়ে বললেন ” একটা কেন দশটা করুন। কিন্তু নিজের মনে মনে প্রশ্ন করুন এই স্পর্শে ভালোবাসা আছে কিনা। কারণ আপনার বাড়িতে বড়ো বৌমা হিসাবে আমার একটা সম্মান আছে। সাময়িক সুখের আশার আমার শরীরটা অত সস্তায় কাউকে স্পর্শ করতে দেবো না।'”

আমি উনাকে জরিয়ে ধরলাম। আদরে আদরে মুছে দিতে চাইলাম উনা মনে জমে থাকা সব অভিমান।

পরে পড়বো
৭৬
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন