নীলখামে সাদাচিঠি
নীলখামে সাদাচিঠি
মানব মন্ডল

গল্প - নীলখামে সাদাচিঠি

মানব মন্ডল
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ জীবনবাদী, ভালোবাসা

আমি বরাবর একটু ভীতু মানুষ  , স্বাদ থাকলেও সাধ্য হয়  নি, কোন আশা মেটানোর । আসলে সামার্থ্য  হয়নি বলতে পারেন। ছেলেবেলাটা যে ভালো ছিলো বলবো না, কারণ আপনাদের মতো বায়না করলেই খেলনা পেয়ে যাওয়া জীবন আমার ছিলোনা। ছোট বেলা থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম আমার গরীব আমাদের স্বাদ আল্লাদ থাকতে নেই।

কিশোর বয়সে একটা ভালো লাগা ছিলো। কিন্তু অনেক গুলো না পাঠানো চিঠিতে শুধু লিপিবদ্ধ আছে অনুভূতি গুলো। কেউ খবর পাই নি আমার হৃদয়ের। এদিকে কিশোর বয়সে খরচ করলাম পড়াশোনার জন্য।

যৌবনটা খরচ হলো, সরকারি চাকরি পাওয়ার প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার বসে বসে।
বারবার পরীক্ষা অসফল হয়ে। শেষ মেস একটা বিপিও চাকরি নিলাম। কিন্তু রাজার হাট নিউটাউন অঞ্চলে। আমার বাড়ি থেকে অনেক দূর ।অনেক সকালে উঠি, ফিরতে অনেক রাত্রি হয় যায়।

রাত্রি হয়ে যাওয়ার ফলে একটা জিনিস ভালো হলো।  রোজ আমার সাথে টালিগঞ্জ মোর ছায়ার সাথে দেখা হতো  ছায়ার। ও আমার পাড়ায় থাকে। ছোট বেলা থেকেই কথা বলার সাহস পেতাম না। চিঠি দিতে অনেক চিঠি লিখে রেখেছি কিন্তু দেবার সাহস হয় নি।

সেই দিন রাতে শ্যামল দাদার সাথে বাড়ি ফিরলাম এক অটোতে।  অটো স্ট্যান্ডে যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষণ আমি ছায়াকে দেখতে থাকলাম। ও একা গাছতলায় দাড়িয়ে ছিলো। রোজকার মতো কারো জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সেই সুযোগ ওর সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। শ্যামল দা সব লক্ষ্য
করছিলো। ও কিছু বুঝতে পেরে হাস ছিলো। ”
ও হঠাৎ করে বললো। ” শোন বুবাই তুই ভালো ছেলে, একটা চাকরি পেয়েছিস শেষ বয়সে। বাড়িটা গোছা একটু। ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে কর। টুম্পাদের মতো মেয়েদের খপ্পরে পরিস না। ও বাজে মেয়ে। ”
আমি বললাম ” আমি ওকে ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসি, তাই বোধহয় হ্যাবালার মতো তাকিয়ে ছিলাম। আমি ওর সাথে কথা বলতে পারি নি কোন দিন। ”
শ্যামল দা বললো ” কথা বলতে ও হবে না। ও আগে  ওর নাম ছিলো ছায়া এখন হয়ে গেছে টুম্পা। তুই হয়তো জানিস না ও আমার, ঠাকুর দার ভাইয়ের নাতনী।সে হিসেবে ও আমার বোন। ওর ডিভোর্স হবার পর। কাজ খুজছিলো। ও আমাকে স্টুডিও কাজ চেয়েছিলো আমি দিই নি। আসলে আমি জানতাম এই ফ্লিম ইন্ড্রাস্ট্রি প্রথম এতো খারাপ ছিলো না। কিন্তু এখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে এই লাইনটাকে ।  তাই কোন মেয়ে যদি এখানে কাজ করতে আসে ওই দুই ভাইকে খুশি করতেই হবে। আর কেউ যদি বুঝতে পারে মেয়েটা ঘরে হাড়িতে  জল বসিয়ে, ইন্ড্রাস্ট্রিতে কাজের জন্য এসেছে তাহলে তো টেকনিশিয়ান হেল্পার থেকে প্রোডিউসার সবার বিছানা গরম করতে হবে মেয়েটাকে। এভাবেই ও ছায়া থেকে টুম্পা হয়ে গেলো। ”
পরদিন আমি রাতের বেলায় আমি ছায়ার কাছে গেলাম সাহস করে।  ও নিজে থেকেই কথা বললো। বললো ” কিছু বলবি, তুই তো ভীতুর ডিম। আমি সাধারণত কাস্টমারদের  ফ্লাটে যাই। আমার বাড়িতে নিয়ে যাতে পারবো না তোকে। ওয়াইও বুক কর। মজা দেবো অনেক তবে পাড়ার ছেলে বলে কম নেবো কিন্তু দুই হাজার লাগবেই । ”
আমি বললাম ” না আমি তোমার কাস্টমার হতে আসে নি। তোমার সাথে কথা বলতে চাই। এতোদিন সাহস পারনি ।শ্যামল দা কাল তোমাকে নিয়ে কাল অনেক কিছু বললো তাই সাহস পেলাম।”
ছায়া বললো ” ও ঘটু দা  বললো ও বাজারে মেয়ে তাই সাহস পেলে। কিন্তু আমি কারো কথা সময় মতো সময় নেই ফেলো কড়ি মাখো  তেল। আমার সব বাধা কাস্টমার। একঘেয়ে হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম তোর সাথে রাত কাটালে নতুন স্বাদ পাবো। অনেক মজা হবে। তাই যেতে বললাম। ”
আমি বললাম “শরীরের বাইরে, ভিতরে মন বলে একটা জিনিস  আছে।  আমি ছোট বেলা থেকেই তোমাকে ভালোবাসি, সেটা কেউ না জানুক না জানুক সেটা তুমি জানো নিশ্চিত।  তোমাকে কেন্দ্র করে, আমার অনুভুতি, কতো স্বপ্ন কথা বন্দী আছে  তোমার জন্য, এই না পাঠানো চিঠিতে। তুমি এ গুলো পড়ো বুঝতে পারবে।  ”
ও বললো ” হাসলে এ বয়সে প্রেম প্রস্তাব?? ”
আমি বললাম ” আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে বিয়ে করতে চাই। নতুন একটা জীবন শুরু করতে চাই। ”
ও বললো ” আমি যদি রাস্তা দাড়িয়ে যে কোন লোকের সাথে শুতাম তাহলে আমাকে খানকি বলতো লোকজন। এখন বলবে এসকর্ট। আসলে আমি ব্যেশাই। আর ব্যেশাদের ঘর বাধা হয় না। কারণ বিয়ে পর এক দুই দিন আদর করতে ভালো লাগবে তারপর আবার ঘৃণা চোখে দেখবে। সেটা কি ভালো?? ”
আমি বললাম ”  গত সপ্তাহে আমার বিয়ের জন্য দেখাশোনা হয়েছে।আমি আজ মায়ের দেখা মেয়েটার বিয়ে করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছিলাম। জানো মেয়েটা জানিয়েছ। ওর আগে দুই টো বয়ফ্রেন্ড ছিলো। প্রথম জনকে ও ভালোবাস তো। ব্রেক আপের পর প্রথম জনকে  জ্বালাতে দ্বিতীয় প্রেম করেছিলো। দুই জনের সাথে ওর সবকিছু হয়ে গেছে। তবুও আমি বিয়ে করতে রাজি ছিলাম কেন জানো?? ”
ও হাসে বললো ” আমি জেনে কি করবো! ”
আমি বললাম না ” কথা গুলোর মধ্যে তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। আসলে তোমার বা মেয়েটার অতীত নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। কারন তখন তো সে আমার সাথে সম্পর্ক আসে নি তাই সে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এমনটা নয়। সে যদি আমাকে ভালোবাসতে পারে সেটাইতেই হবে। কারণ শরীর সব কিছু নয় একটা সম্পর্কে।”
ও বললো ” বুঝলাম ”
আমি পকেট থেকে আঙটির  বাক্সটা বের করে বললাম ” ওইল ইউ মেরি মি? ”
এমন সময় বিকট আওয়াজ করে,একটা রয়েল ইনফিল্ট এসে হাজির হলো কোথা থেকে।  একটা কম বয়সী ছেলে। গলায় অনেক গুলো সোনার চেন।  বললো ” টুম্পা অনেকক্ষণ ফোন করছিলাম  তুললে না। ফ্রি  থাকলে বাইকে চলে এসো। ”
ও আমার উওর না দিয়ে চলে গেলো।

খুব  অপমানিত বোধ হলো আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হলো। মাইনে বেড়ে গেছে। আমি এখন মেট্রো করেই চলাফেরা করি। বাড়িতে তাড়াতাড়ি ফিরি। সেইদিন মেট্রো ভীষণ লেট হলো। কেউ সুসাইট করছে শুনলাম। বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দেখলাম। আমাদের ভেঙে যাওয়া লেটার বক্সে একটা নীল খাম পড়ে আছে আমার নামে। আজকাল তো চিঠি পত্র আসেই না। আবার নীলখাম মানে তো প্রেমপত্র।

ঘরে এসে খামটা  খুলে দেখলাম সাদা একটা কাগজ পাঠিয়েছে। কেউ রসিকতা হয়তো করেছে।
মা এসে বললো ” টিফিন খাবি না, রাতের খাবার খাবি? তোর আজ অনেক দেরি হলো। কিছু হয়ছে নাকি অফিসে। ”
আমি বললাম ” না না, মেট্রোতে কেউ একটা সুসাইট করেছে। ”
মা বললো ” কেউ একটা বলছিস কেন? ঐতো  ঘোষাল বাড়ির মেয়েটাই সুসাইট করেছে। কি ফুট ফুটে সুন্দর মেয়ে। সিরিয়ালে টিরিয়ালে অভিনয় করছিলোতো কিছু দিন। কি হলো কি জানি। আত্মহত্যা করলো কি দুঃখ পেয়ে। ”
মা চলে যেতেই ফোন টা খুলে ওর আন রিডি মেসজ তিনটে পড়লাম।
ছায়া লিখেছে। তোমার মতো চিঠি লিখতে আমি পারলাম না। সাদা কাগজ পাঠালাম। কি বলতে চাই বুঝে নিও।  অনেক কথা ছিলো। তবে আমিও তোমাকে ভালোবাসি  এই ছোটো কথাটাও লিখতে সহাস পেলাম না। আগে যদি তোমার চিঠিগুলোর উত্তর দিতে পারতাম ভালো হতো। কিন্তু হলো না।
ভালো থেকো তুমি।
নীলখামে সাদাচিঠি কারো করা রসিকতা নয়। বরং আমার জীবনটার সাথে রসিকতা করে যাচ্ছে আমার ভাগ্য।

,,,,

পরে পড়বো
১২০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন