মোঃ রাশেদুল ইসলাম (অরণ্য)

আলোচনা - উন্নয়নের ছদ্মবেশে ধ্বংস

লেখক: মোঃ রাশেদুল ইসলাম (অরণ্য)
প্রকাশ - সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মানুষের সৃষ্টি যেন এক দ্বৈত অস্তিত্ব—সৃষ্টির বিপরীতেই যেন ধ্বংস। সভ্যতার ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, যা কিছু মানুষ সৃষ্টি করেছে, তার অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিজয়গাথা, রাজনীতির কৌশল, বিনোদনের রঙিন মায়াজাল—সবই কোনো না কোনোভাবে মানবজাতিকে ঠেলে দিচ্ছে এক অনিবার্য মহাধ্বংসের দিকে।

বন্দুক আর যুদ্ধের বন্ধুত্বের গল্প নতুন কিছু নয়। এই বন্ধুত্বে মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। মানুষ প্রথম যখন আগুন জ্বালতে শিখল, তখন থেকেই আত্মরক্ষার নামে গড়তে লাগলো ধ্বংসের হাতিয়ার। লোহার অস্ত্র বানাল শিকার করতে, অতঃপর সেই ধারালো অস্ত্রই বসিয়ে দিল নিজের ভাইয়ের বুকে।

অস্ত্রের শক্তিকে ব্যবহার করল ক্ষমতা বিস্তারে, আর ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে শুরু হলো প্রাণের বলি। সেই সূচনার রক্তের দাগ আজও শুকায়নি—বোমারু বিমান, মিসাইল, ড্রোনের যুগে তা আরও রঞ্জিত, আরও জাঁকজমকপূর্ণ। এক হাতে সভ্যতা গড়ে তোলা, অন্য হাতে তা ধ্বংস করা—এই দ্বৈত যাত্রাই মানবজাতির চিরন্তন নিয়তি।

আধুনিক উন্নয়ন আমাদের জীবন সহজ করেছে, কিন্তু! কিন্তু তার ছায়াতলে লুকিয়ে আছে এক অদৃশ্য দানব। কৃত্রিমতা আমাদের চারপাশে এমনভাবে বিস্তার করেছে যে, আমরা প্রাকৃতিক জীবনযাত্রা ভুলে যাচ্ছি। এ যেন উন্নয়নের ছদ্মবেশে ধ্বংস।

ধোঁয়ার শহর, প্লাস্টিকের সমুদ্র, বিষাক্ত বাতাস—এগুলোই আমাদের সভ্যতার উপহার। মানুষের শ্বাসে এখন প্রকৃতির সতেজতা নেই, বরং আছে যান্ত্রিকতার ভার। দিন দিন আমরা হারিয়ে ফেলছি প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সহজাত সংযোগ, নিজ হাতে গড়ে তোলা ধ্বংসের ফাঁদেই যেন বন্দি হয়ে পড়ছি।

সৃষ্টি আর ধ্বংসের এই দোলাচলে মানুষ কি সত্যিই উন্নতির দিকে এগোচ্ছে, নাকি নিজের ভবিষ্যতকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে? প্রযুক্তির জয়যাত্রা, অস্ত্রের দানবীয় উত্থান, পরিবেশের করুণ অবস্থা—এসব কি আমাদের এক নতুন সূর্যোদয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, নাকি এক অনিবার্য অন্ধকারের দিকে?

সময়ের পরিক্রমায় মানুষ কি কখনও এই দুষ্টচক্র ভাঙতে পারবে, নাকি এই যাত্রার শেষ গন্তব্য কেবলই ধ্বংস?

©_অরণ্য
#অনিকেত_কান্তা

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৬৪ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন