কাপুরুষের স্মৃতিচারণ

নির্মলেন্দু গুণ নির্মলেন্দু গুণ

মৃত্যুঞ্জয়ী নই জানি, তবু মৃত্যুভয় মনে হয়
হাতের আঙুল কিংবা বাউলের চুল হয়ে
ঝুলে আছে সংলগ্ন বাহুর মতো কাঁধের দু’পাশে।

যখন রাত্রি হয়, অন্ধকারে চক্ষু মুদে আসে
অথবা আলোয় ভরা ঠোঁট-ফাটা শীতের বাতাসে
সূর্য ঢাকা থাকে কুয়াশার পশমী চাদরে,
আমি ভয় পাই প্রকৃতিকে,
হয়তো আকাশই শেষে আল-বদরের মতো
ঝোপ থেকে অকস্মাৎ কোপ দেবে ঘাড়ে।

আমি ভয় পাই, আকাশের তারাগুলো অন্ধকারে জ্বলে,
যেন আমাকেই কেন্দ্র করে পাকসেনাদের সিদ্ধান্তের
সভা হচ্ছে আকাশের গোপন গুহার কালো মাঠে।
আমি ভয় পাই, জানি আমি মৃত্যুঞ্জয়ী নই,
তাই ভীত হই বন্ধুর উত্যক্ত ব্যবহারে।

হয়তো কিছুই হবে না,
তবু যদি অপঘাতে মৃত্যু লেখা থাকে,
যদি কেউ শত্রু ভেবে আমার বুকের মধ্যে
সন্ত্রস্ত আত্মার চোখে মৃত্যু-নকশা আঁকে!
এই ভয় আজীবন, আশৈশব কাপুরুষ করে
রেখেছে আমাকে।

আমি কাপুরুষ, মৃত্যু-ভয়ে ভীত,
প্রতিবাদে সন্দিগ্ধ, সংযত হয়ে কথা বলি।
এমন কি যখন মিছিলে যাই আমি থাকি মাঝখানে,
অনেক লোকের ভিড়ে নিরাপদে নিজেকে সাজাই।
সতর্ক দু’চোখ থাকে আশেপাশে
কে জানে কখন আসে ঘাসে ঢাকা শিরস্ত্রাণ,
মৃত্যুর মুখোশপরা সৈনিকের দল।

এইসব প্রাত্যহিক ভয়ে মোটামুটি কেটে গেছে
কেটে যাচ্ছে না প্রেমিক না বিপ্লবী পঁচিশ বছর,
কেটে যাবে আরো কিছুদিন।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৭৬ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন