আলোকে অভিযুক্ত করে দাঁড় করানো হলো অন্ধকারের আদালতে…
সেই দিনটি ছিল মেঘলা,
শহরের ট্রাফিক জ্যাম যেন জমাট রক্ত।
অন্ধকার—বিশাল কালো এক বটগাছের মতো,
যার শিকড় নেমে গেছে
নাগরিকের কঙ্কালসার ফুটপাত ধরে।
—
বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট, ধানের শিষ, হলুদ ট্যাক্সি—সবাই স্তব্ধ।
আকাশ থেকে ঝরে পড়ছিল না বৃষ্টি,
বরং সস্তা কফিনের ধোঁয়া।
অন্ধকারের এজলাসে বসে আছে
জনা কয়েক কাদা-মাখা উলঙ্গ দেবতা—
যাদের পোশাক, জিহ্বা, আর থাবার নিচে
চাপা পড়ে আছে জনপদের ঘুম।
—
ওরা ধর্মান্ধতা নয়,
ওরা নিছকই তেলচিটে, নোংরা এক ভাঙা আয়না—
যেখানে শুধু গোঁয়ার্তুমি আর মূর্খতার প্রতিবিম্ব খেলা করে।
এদের হাতে এখন মাইক,
এদের হাতে এখন সস্তার চশমা।
আলোর দিকে আঙুল তোলে—
“তুমিই সব নষ্ট করেছ, হে সচ্ছল সূর্য!”
—
শহরের ক্লান্ত, উদাস, বিকেলের দিকে তাকানো মুখগুলো সাক্ষী—
কিভাবে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে
মানুষ হেঁটে যায় ভয় আর অভ্যাসে।
রবীন্দ্রনাথের গানের কলি
এখন শহরের দেয়ালে এক জং-ধরা পেরেক,
যা ধরে ঝুলছে সামান্য প্রতিবাদ,
আর তার নিচে ছেঁড়া পুরোনো স্বপ্ন।
—
আলোর অপরাধ:
সে কেন স্পষ্ট দেখায়, কেন সে প্রশ্ন করে?
কেন সে ভালোবাসার মতো সরল একটি কথাকে
জটিল করে না?
আলো নাকি নাগরিকের ঘরদোর থেকে
চুরি করেছে রাতের শান্ত ঘুম,
আর পুঁতে দিয়েছে সন্দেহের বীজ,
অনাস্থার টুপটাপ শব্দ।
—
অথচ দেখুন—
নদী এখনও বয়ে যায়,
তারাপদ রায়ের মতো সরল হেসে।
কিন্তু নদীর জল এখন বর্জ্য,
তার স্রোত এখন গোয়েন্দার মতো গতিহীন।
মুক্তিযুদ্ধের পতাকাটা যেন এক ছেঁড়া লুঙ্গি,
উড়ে যাচ্ছে কোনো এক জীর্ণ দালানে।
—
অন্ধকার ফিসফিস করে বলে—
“আলো, তোমার আর দরকার নেই।”
আমাদের এই বাংলায় এখন শুধু
জমাট বাঁধবে সস্তা শ্লেষ ও ভয়।
মুক্ত ছন্দ নয়,
এখানে এখন শুধু শাসকের হাঁকডাক আর তর্জনী,
এবং এক ফতোয়া—
যা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায়,
মানুষের বিরুদ্ধে যায়।
—
দীর্ঘ শুনানি শেষে,
যখন রেললাইন পেরিয়ে গোধূলি নামছে,
আর শেষ হয়ে আসা দিনের আলো
তখনও কাঁপছে শেষ ইচ্ছার মতো—
বাংলাদেশের রায় হলো—
আলো অপরাধী।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন