আমাকে তোমরা যা ভাবো আমি তা নই,
আমাকে আমি যা ভাবি তাও নই,
তার মানে এই নয় যে আমি কিছুই নই!
তার মানে আমি এমন কিছু
যা দেখার ক্ষমতা কারো চোখের হয়নি,
এমনকি আমার নিজেরও চোখ নেই তা দেখার।
এমন শব্দ আছে যা শোনার ক্ষমতা নেই কানের,
এমন দৃশ্য আছে যা দেখার ক্ষমতা নেই চোখের
তার মানে এই নয় যে তা নেই।
দূরের কোনো গ্রহ থেকে
এই পৃথিবীর সব বস্তু ও প্রাণকে কি নক্ষত্রের মতো লাগে?
যখন তারা শিখা হাতে হেঁটে যায়
অথবা গভীর অন্ধকারে জ্বলে থাকা জোনাকী!
প্রানের রহস্যময় কুহকের মতো
জাহাজীরা যখন ভেসে থাকে সমুদ্রে –
মনে হয় তা দেখতে নক্ষত্রের মতই লাগে
সেটা নিশ্চিত হতেই সমুদ্রের শরীরে খসে পড়ে তারা;
যদিও বড় বড় শহরগুলো যখন তার বাতিগুলো জ্বেলে দেয়,
মনে হয় এটা কোনো বদ-নক্ষত্র – ষড়যন্ত্র শুরু করেছে মৃত্যুর;
এবং যখন আলো জ্বেলে অন্ধকারে
ছুটে চলে কোনো দূরপাল্লার গাড়ী।
পৃথিবীকে একদিন মেনে নিতেই হবে –
একজন রাষ্ট্রনায়কের চেয়ে একজন কৃষক গুরুত্বপূর্ণ,
একজন যাজকের চেয়ে একজন মেথর
এবং কোনো কর্পোরেট সিইও এর চেয়ে একজন শ্রমিক
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের চেয়ে একজন ভবঘুরে কবি।
তোমাদের পরমসত্তার পকেটে থাকা
মানিব্যাগের মতো শয়তানের প্ররোচনায়;
আমাকে তোমরা যতই হীনমন্য করে তুলতে চাও না কেনো;
কোনোভাবেই বিশ্বাস করাতে পারবে না আমি ছোট আর সামান্য।
আমি এসবের চেয়ে অনেক বড় কিছু যার কাছে এখনো যেতে পারিনি,
আর তার কাছে যাবার জন্যই বেঁচে আছি ।
এখন বলতে পারো,
আপনি ইতিমধ্যেই যা তার কাছে কেন যেতে হবে?
হ্যা আমি মানিও তাই।
তোমাদের সাথে সঙ্গতি নামক জেলখানায়
পাশাপাশি থাকতে গিয়ে নিজেকে অনেক ছোটো করেছি।
স্বাভাবিক ভাবে আমি যা ছিলাম,
তার থেকে যেহেতু অস্বাভাবিক ভাবে ছোটো হয়েছি,
তাই উদ্যমী হয়ে আমাকে আবার বিশালের কাছে যেতে হবে,
ফসিল থেকে এক ডাইনোসরের
তার প্রাচীন দেহের কাছে আবার ফেরার মতো।
আমরা যতই বলি না কেনো
অনেক জাহাজ ছেড়ে গেছে অগনণ বন্দর থেকে,
মনে হয় কোনো জাহাজই ভাসেনি কোনো সমুদ্রে,
যা ভেসেছে তা অমাবস্যার তিথিতে কফিন ভেসে যাবার মতো,
আর তাদের গন্তব্য ছিলো না কোনো।
আমাকে ভাসতে হবে আবার সেই
আশ্চর্য সূর্য, নক্ষত্র আর অবিরাম জোয়ার-ভাটার কাছে,
আর মানতেই হবে সমুদ্রের উপরে যা দেখা যায়
তারচেয়ে অনেক বেশী কিছু আছে সমুদ্রের নিচে।
তোমরা অবশ্যই মৃত আগ্নেয়গিরি দেখে
ভাবতে পারো তার ভেতর লাভা নেই আর!
আর এই ভাবনায় যখন সদলবলে ঘুরতে যাবে তার জ্বালামুখে,
উদ্গিরিত হবে সেই লাভা – তোমরা পুড়ে যাবে মূহুর্তেই,
মাংস পুড়ে বেরিয়ে আসবে কংকাল
আর ঠিক তখনই তোমাদের পুনর্জন্ম হবে।
ইচ্ছাশক্তি আর জিঘাংসায় তোমাদের কংকালের উপর
সবুজ তৃণের মতো এত মাংস ফলবে
তখন টের পাবে তৃণচ্ছাদিত পর্বতের চেয়ে তোমরা কম বিরাট নও।
এখানে এই পৃথিবীতে চক্রান্ত চলছে
শুধু তোমাদেরকে কেটে ছেটে টুকরো করার জন্য,
কেননা তারা নিজেরাও খণ্ডবিখণ্ড তাদের অনিয়ন্ত্রিত কামনায়।
তোমাদেরকে নিঃশেষ করার জন্য
তোমাদেরকে বলা হচ্ছে পরিশ্রমী হতে,
অবশ্যই হাড়খাটুনে পরিশ্রম ছাড়া
প্রাণের আর কোনো নিয়তি নেই,
কিন্তু ভুল পরিশ্রমে জীবন কাটিয়ে দিলে
পরিশ্রমের ফসল যে অবসর তা কখনো মিলবে না আর।
ঐ যে আমি বলছিলাম আমি কি তা জানি না,
এটা লিখতে লিখতেই জেনে গেলাম, আমি সেই স্বর্গীয় অবসর।
এভাবেই শুণ্য থেকে যাত্রা শুরু করলেই কেবল
জেনে যাওয়া যায় আমি কি,
কেননা এই যে আমি আমার গন্তব্যে এসে পড়েছি ।
আকাশ থেকে ঝুলে থাকা সব আধিবিদ্যক দঁড়ির ফাঁসে
এমন ঝুলে আছো কেন আত্মহত্যাকারীদের মতো!
বরং যারা তোমাদের ঝুলিয়ে রেখেছে
তাদেরকেই ঝুলিয়ে দেবার জন্য তোমাদের জন্ম হয়েছিলো!
নিশ্চয় জানো পাহাড়ের শিখরে
কে তোমাদের আত্মার সুরে বেহালা বাজাচ্ছে,
কানে ঢেলে রেখেছো সীসা তাই তা শুনতে পাচ্ছো না,
যদি একটু শুনেই থাকো তা দূরাগত সুরের মতো লাগছে,
যা তোমার ভেতরে বাজছে তাকে কিভাবে মনে হয় দূরাগত!
আমি এগিয়ে যাচ্ছি, তোমরাও এগিয়ে চলো,
না আমি বলছি না আমাকে অনুসরণ করো,
নিজেকে অনুসরণ করা ছাড়া কখনোই
সেই বেহালাবাদকের কাছে যাবার আর কোনো উপায় নেই ।
লবণের ক্ষেতে গোঙ্গাচ্ছে এক মুমূর্ষু হাঙ্গর,
তাকে উদ্ধার করার দায়িত্ব তোমার নয়।
আমি জানি তাকে উদ্ধার করতে গেলে
তোমরা তার মাংসে লালায়িত হবে,
তারপর লবণে ক্ষারিত হয়ে
তোমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হয়ে উঠবে বিষাক্ত লবণ,
এবং এরপর তারাও এসে লবণ হয়ে যাবে।
এইভাবে অনন্তকাল নক্ষত্ররা হয়ে উঠবে লবণক্ষেতের বিষাক্ত লবণ।
এমন এক অভিশপ্ত ক্ষেতে তোমরা নিশ্চয়
কোনো মহীরুহর উদ্গম আশা করতে পারো না!
জন্মগত ভাবেই তোমরা যা।
এসো নিজের হাত ধরো, বিশ্বাস করো নিজেকে,
তাহলে হয়তো আমাদের বিশ্বাস আবার ফিরতে পারে
যা হারিয়েছিলাম নিজেদের কারণে;
এসো নিজ ব’লে এখন পর্যন্ত যা কে জানো তাকে ঘৃণা করো,
এ এক অপর-প্রেতের ছায়া ছাড়া আর কিছু নয়,
এক বানানো কলের পুতুল যা নিজেকে দম দেয় অন্যের প্রশ্বাসে।
এসব অস্বীকার করা ছাড়া নিজেকে ভালোবাসার আর কোনো পথ নেই;
তুমি তাই হও যা তুমি – এবং যে অন্য কেউ হয়ে আছে;
দূর নক্ষত্র থেকে যাকে অপর-নক্ষত্রের ছায়ার মতো লাগে ।
এভাবে পঙ্গু হয়ে কেনো পড়ে আছো
আর অন্যের কাছ থেকে আশা করছো ক্র্যাচ
আর না পেলে অভিশাপ দিচ্ছো অন্যদের কে!
এই অভিশাপ তো লাগছে তোমার গায়ে
আর খসে পড়ছে তোমার মাংস, হৃৎপিণ্ড, কলিজা, মুখ;
আর সব এসে খেয়ে যাচ্ছে দূর পর্বতশিখর থেকে উড়ে আসা শকুন
পুনরুত্থানের জন্য কোনো দেহ আর অবশিষ্ট থাকছে না তোমার কাছে।
এসো নিজের হাত ধরো,
নিজের ধড়হীন শূন্যদেহে ফোটাও আবার চোখ,
যেন তুমি নিজেকে আবার দেখতে পাও;
এসো নিজের অবয়বহীন দেহে বানাও হৃৎপিণ্ড
যা নাচে মহাকালের হৃদস্পন্দনের সাথে।
কানকে করো গভীর কোনো গহবর
যা শুনতে পারে তোমার কণ্ঠের অশ্রুত সব গান;
তোমার এই শূন্যপাঁজরের নিচে এমন হৃদয় গড়ো
যার ভেতর অনন্ত জোয়ার ভাটায় নেচে যেতে পারে মহাসমুদ্র।
তখনই মিলবে সেই অবসর
যে অবসরে মহাজগত বানিয়েছিলো ঈগল
আর তাদের শরীরে জুড়ে দিয়েছিলো
মহাসময়ের দিকে অনন্তরাত উড়ে যাবার ডানা!
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন