বোহেমিয়ানের মৃত্যু

প্রবর রিপন প্রবর রিপন

বোহেমিয়ান মরে গেলে পৃথিবীর কি ক্ষতি
বোহেমিয়ান খুন হলে মানুষের কি এসে যায় !
তোমাদের জমির মালিকানার পথে বাঁধা দূর হলো
যে এসব চায়নি তার জায়গা জমির নিচেই হওয়া উচিৎ ।
মৃত মানুষ এক মিথ সাথে তাদের ভালোত্বও
তাদের দ্রুত কবরে চাপা দিতে হবে
যেন মৃত্যুর পরেও তারা খারাপ না হয়ে যেতে পারে;
তার শীতল গ্রীবা যেন তোমাদের ষড়যন্ত্র টের না পায়
মৃতের কাছে ভালো সাজতে তার দেহে ছেটাও পবিত্র তীর্থের জল ।

হৃদয়কে বিলুপ্ত ঘোষণা করো
বিরাট বিরাট ডাইনোসরের মত
পৃথিবীতে একসময় বিরাট বিরাট হৃদয় ছিলো
বজ্রপাত চিত্রিত আকাশে মৃদু বৃষ্টিতে
যারা দেবতাদের আগুনে আত্মার মত নাচতো;
নির্জন পাহাড়ী হ্রদে তাদের প্রতিবিম্ব দেখে উল্লসিত হতো
মধ্য বসন্তে যেমন এখনও ফুলেরা
পাখির সাথে তাদের হৃদয় বদল করে !
এত তীব্র ভাবে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরতো
দূর বনের মানুষখেকো শ্বাপদেরা চোখে নেভাতো রক্তিম বজ্র !
সেই সময় আলো অন্ধকারের সহোদরা ছিলো
যারা কখনো পাহাড় ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া করতো না ,
কখনো তারা নিজেদের রক্তও দেখেনি
যেমনটা দেখে এখন তোমরা ড্রাকুলা হয়ে উঠেছো !
যেসব হৃদয়ের ডাকে সবুজ হতো অরন্য
এখন বোহেমিয়ান বলে যাদের চেনো
এরা সেইসব প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়
যারা হেঁটে বেড়ায় ফসিলের মত
তোমাদের ড্রাকুলা গিজগিজে ভীড়ে ।

মানুষের ভেতর আর মহাজগতের কিছুই নেই
নক্ষত্রের আলো এসে পড়ে না এমন অন্ধকার বস্তু মানুষ;
এক টুকরো জমির মত কবরের অন্ধকারে এমন নির্বাসিত তারা
যেখানে তারা একে অপরের মাংস খেয়ে বাঁচে;
প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়ের দোষে এতটুকুই ভালোবাসে অবশিষ্ট আছে যে
তারা জীবিত নয় বরং জীবিতকে মেরে মৃতের মাংস খায় ;
স্মৃতি ভুলিয়ে দেবার জন্য তো আগুন আছে !

এই সব মানুষ নিয়ে যত গালভরা বড় বড় কথা আছে
তার কোনোকিছুই আমি বিশ্বাস করিনা
এই অবিশ্বাসের জন্যই টের পাই সেই প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়কে
মানুষ বর্বর ছিলো না যেমনটা বলে সভ্যতার ধান্দাভরা লাইব্রেরী
মানুষ ধীরে ধীরে বর্বর হচ্ছে যার শেষ হবে নিজের মাংস খাওয়াতে ;
যে মাংসের বাজারে কসাইয়ের অবশিষ্ট চোখের মনির ভেতর
কান্নার জল খুঁজে বেড়ায় বোহেমিয়ান ।
তাকে দ্রুত খুন করো মানুষের সব লজ্জা, কান্না লুকিয়ে ফেলতে
যদিও মৃতদেহ দেখার মত কোনো মানুষ আর বেঁচে থাকবে না
মানুষ তার ক্ষুধার সামর্থ্যের চেয়েও ক্ষুধার্ত এখন
এবং তারা জানে না কেন তারা এত ক্ষুধার্ত !
যা তাদের পাকস্থলীর সামর্থ্যের চেয়েও অনেক অনেক বেশী ;
সেই ক্ষুধা নিজেকে খাওয়ার ক্ষুধা
যা মেটানোর জন্য তাদের চোখ পড়েছে
তাদের সহোদর বোহেমিয়ানের দিকে
এই জন্য তারা কঠোর পরিশ্রমী হয়ে উঠেছে
এতটা ব্যস্ত যেন সে যে নিজের
মাংসের দিকে;রক্তের দিকে ধাবিত ড্রাকুলা
তা বুঝে ওঠার সময় না পায়।

বলো মা , আমাকে চিনতে পারছো ?
আমি কি তোমার ক্ষুধার গ্রাস কোনো শিশু
যা তোমার ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয় অনন্তবেলা !
বলো বোন, তুমি কি আমার কবরের জমি
আর শেষমেশ নীল নঁকশা করছো
যেন সেখানেও আমার জায়গা না হয় ?
বলো ভাই , তুমি কি আমার পিঠের ছুরি
যা তোমাকে আমিই বানিয়ে দিয়েছিলাম শ্বাপদের অজুহাতে !
বলো আমার সন্তান, আমি কি শুধু তোমার জমির দলিল ?
সেই সব প্রাগোইতিহাসিক হৃদয়কে
এখনও স্মৃতিতে আনতে পারি বলে
আমি সেই বোহেমিয়ান যাকে তোমরা সবাই মিলে
মাটির নিচে ধামাচাপা দিতে চাও ?
আমি জানি আমাকে মারার পর তোমরা
এরপর নিজেরাই নিজেদের দিকে পরবর্তী শিকারের ভেবে তাকাবে
এভাবেই নিঃশেষ হবে সেই সব হৃদয়ের শেষ স্মৃতি ;
বলো মানুষ, তোমাদের কতটা চাওয়া
তা না জানায় তোমাদের রাক্ষুসে ক্ষুধার কারণ ?
এই যে বিরাট বিরাট শহর আর শৌধ
সেই সব প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়ের ফসিল
এই সব ফসিলের নিচেই চাপা পড়ে তোমরা মরবে
যাকে বলে সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ
এ কোনো খুন হওয়া বোহেমিয়ানের লাশের অভিশাপ নয়
তোমাদেরই অভিশাপ যা আমাকে দিতে গিয়ে
ভুলে নিজেদের দিয়ে ফেলেছো !

তোমাদের এসব স্থাবর সম্পত্তির লোভের দামী পাথর আমি চাইনি
যা ঘষে ঘষে তোমরা পোড়াও তোমাদের
কিন্তু জন্ম নেবার জন্য তো আমাকে
কোনো মায়ের গর্ভকে বেছে নিতেই হয়েছিলো
যে মায়ের কোলের থেকে দূরে
শুন্যতার কবরের কোলের ভেতর শুয়ে আছি
যে কবর সামান্য এক টুকরো জমি এই পৃথিবীর
সেই পৃথিবীর যেখানে এক বোহেমিয়ানের মৃত্যুতে
পৃথিবীর কি আর যায় আসে !

যদিও তোমরা না জানলেও হয়তো পোষ্টমর্টেম এর জন্য কাটা
এক বোহেমিয়ানের খোলা বাম বুক হয়ে যেতে পারে
তোমাদের নরকের দিকে যাওয়ার খোলা দরজা ;
যে বাম বুকে প্রাগৈতিহাসিক বিরাট হৃদয়েরা
এতদিন আত্মগোপন করে ছিলো
আর মৃতদের কি আর ক্ষতি হয় কারো মৃত্যুতে !
মৃতদের হৃদয় থাকা আর না থাকা নিয়ে কি আর এমন যায় আসে !
গোরখোদকের কোঁদালে কবর হবার জন্য
তাদের এক টুকরো জমি থাকলেই হবে
যেখানে কোনো মানুষ নয় কবর দেয়া হবে
আমার পিঠে গেঁথে থাকা ছুরিটাকে।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৭৪০ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন