রাইসুল রাকীব

গল্প - ভালোবাসা একটি বিষন্ন বাস্তবতা

রাইসুল রাকীব
বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫ অন্যান, ভালোবাসা

ভালোবাসার একটা শক্তি আছে জানেন তো?
মুঘল সম্রাট মির্জা হুমায়ুন তখনও সম্রাট হননি তাঁর পিতা জীবিত, তিনিই সম্রাট। একদা হুমায়ুন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, ডাক্তার-কবিরাজ কিছুতেই কিছু হয়না। সময়ের সাথে সাথে তাঁর অসুস্থতা আরও বাড়ে। উপায়ন্তর না দেখে হুমায়ুনের পিতা সম্রাট বাবর এক আশ্চর্য কান্ড করে বসলেন। যেটা হয়তো দুনিয়ার সকল পিতাই করতে প্রস্তুত।
সম্রাট বিশ্বাস করতেন জীবনের বদলে জীবন দেয়া সম্ভব। তাই তিনি (বাবর) হুমায়ুনের পালঙ্কের চারপাশে তিনবার হেঁটে যান এবং প্রার্থনা করেন, “হে পরওয়ারদিগার, যদি জীবনের বিনিময়ে জীবন দেয়া যায় তবে আমি বাবর, আমার পুত্র হুমায়ুনের জীবনের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করলাম।”
কথিত আছে যে, এই ঘটনার পর বাবর ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং হুমায়ুন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
বাবরের প্রার্থনা কবুল হয়েছিল অন্যদের হবে কিনা জানিনা তবে এই ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে এটাকে কী বলবেন? এটা কী ভালোবাসার শক্তি নয়? প্রকৃত ভালোবাসা শুধু জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে না, জীবন বদলিয়েও দিতে জানে। ভালোবাসা একটা টনিকের মতো কাজ করে।
আমার পরিচিত একজনকে দেখেছি ভালোবাসার জোরে জীবন নিয়ে সিরিয়াস হতে। কিছুদিন আগেও যে কিনা ছিল ভবঘুরে-আত্মভোলা, ভালোবাসার জোরে হয়ে গেল ‘সিরিয়াস ম্যান’! ভার্সিটি লাইফের শেষ দিকে প্রচুর পড়াশোনা করে ভালো একটা চাকরি পেয়ে কিছুদিনের মধ্যেই ওই মেয়েকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

তবে এর উল্টো পিঠও দেখা যায়। অনেককে ধ্বংস হতে দেখেছি। ভালোবেসে ক্যারিয়ার-জীবন সব খোয়ানোর পথে। কে জানে, শুমারী করলে হয়তো দেখা যাবে এদের পরিমানই বেশি! এটা হতে পারে, আমরা হয়তো সঠিকভাবে ভালোবাসতে জানি না অথবা সঠিক মানুষটাকে খুঁজতে জানি না।
কয়েকদিন আগের ঘটনা, খবরের কাগজে দেখলাম এক সহকারী পুলিশ সুপার নিজের পিস্তল দিয়ে আত্নহত্যা করেছেন। সুইসাইড নোট দেখে অনুমেয় তার পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। মা এবং স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা, যেটা বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ঘরেই উপস্থিত। এখানেও কিন্তু ভালোবাসার ব্যাপারটি এড়িয়ে যাওয়া চলে না। মা’কেও তিনি ভালোবাসতেন এবং স্ত্রীকেও, তবে কেন এই আত্মহনন? তিনি হয়তো আত্নহত্যা করে বাঁচতে চেয়েছেন কিন্তু সমাজে এমনও অনেক জীবন্ত লাশ ঘুরে বেড়াচ্ছে যারা কিনা ভালোবেসেছিল।

তবে যাই বলুন আর তাই বলুন, জগৎ সংসার কিন্তু টিকে আছে ভালোবাসায়। আসুন সকলেই মনে ধারণ করি একটি স্লোগান
“ভালোবাসা বৃদ্ধি পাক,
যুদ্ধ-কলহ নিপাত যাক”।

পরে পড়বো
৩০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন