মানুষের মানচিত্র ৫

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

গেল বছরের দেনা এ-বছর নিয়ে গেল খোরাকির ধান। এই সনে দেনা হবে আরো, হালের বলদ গাই যাবে ব্যাঁচা, কার্তিকের অনটনে সংসারে ডাকবে ঘোর অভাবের প্যাঁচা। মহাজন ভালো লোক, দেনার বদলে দেবে নাড়ি ধ’রে টান-

দশানা ছ’আনা ভাগ, ধানের মাড়াই শেষে থাকে না কিছুই, রাজভাগ মহাজন, বাদবাকি দায়-দেনা, তবু ঋন থাকে। জীবন জড়ায়ে গেছে জীবনের এই অন্ধ অন্যায়ের পাঁকে, যতোই টানো না কেন, এক তিল এগোবে না, টানবে পিছুই।

উপরে যে আছে তার বাড়ছে প্রশাখা-ডাল-পাতা-ফল-ফুল, নিচের তরুটি আর বাড়ে নাকো, দিনে-দিনে খসে তার দেহ। এমনি নিয়ম নাকি, ওরা বলে- নিয়তির এরকমই স্নেহ, ভালোরা উপরে থাকে, অধমের চিরকাল ভেঙে যায় কূল।

এ-কথা বিশ্বাস কোরে এতকাল বেঁচে আছে মাঠের চাষারা, তামাদি হয়েছে সুখ, নোনা ধ’রে গেছে সারা জীবনের গায়, মজ্জায় জমেছে শীত, আন্ধার বেঁধেছে জট বুকের খাঁচায় ভাঙতে ভাঙতে কূল ঠেকে গেছে ভিতে,শুধু বাঁচার আশারা

বেঁচে আছে, তাই নিয়ে প্রতিদিন জীবনের সাথে হয় দ্যাখা। মৃত স্বজনের হাড় মাঝরাতে জেগে উঠে শোনায় কাহিনী, মাংশের ভেতরে সেই কাহিনীরা জমা হয়, রক্তের ধমনী সেই কথা শোনে, আজ শুনে রাখে- যে-কাহিনী হয় নাকো লেখা।।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৮৪ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন