শৃঙ্খলা-বিশৃঙ্খলা

সলিল চৌধুরী সলিল চৌধুরী

একটা চার দেওয়ালে বদ্ধ গা বমি করা ভ্যাপসা গন্ধ।
একটা টাকমাথা সংস্কৃত পন্ডিতের চাবুক আস্ফালন।
মন্ত্রীদের রেডিও ভাষণ,
পায়ে পা ফেলে সৈন্যদের মার্চ।
শৃঙ্খলা কথাটার মধ্যে একটা চালাকি অাছে।
কথাটা সমান জমিতে দাড়িঁয়ে বলা যায় না।
উচুঁ প্লাটফর্মে উঠতে হয়।
শ্রোতারা সবসময় নিচু শ্রেণীর
আর উপদেষ্টা হলেন বক্তা।
বিশৃঙ্খলা কথাটা কিন্তু শৃঙ্খলার ঠিক বিপরীত নয়।
শৃঙ্খল থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়,
ওর মধ্যেও শৃঙ্খলের একটা ঝনঝন অাছে
তবে সেটা বাজে বেতালায়।
ওর মধ্যে একটা ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছা অাছে।
আগাছার বেপরোয়া গন্ধ।
ওটা যদি স্বতঃস্ফূর্ত হতো,
তাহলে ওর মধ্যে অরণ্যের সম্ভাবনা ছিলো।
আমার মায়ের হাতে সাজানো সেই ছোট্ট বাঙলোটার মধ্যে কিন্তু
শৃঙ্খলা-বিশৃঙ্খলা এ দুটোর কোনোটাই ছিলো না।
যদিও একটা পাপোশ পর্যন্ত সরাতে গেলে মনে হতো
বাড়িটার ভারসাম্য বুঝি নষ্ট হলো।
বাড়িটার মজা কিন্তু এই ছিলো যে
পা টিপে টিপে চলার কথা কখনো মনে হতো না।
ও ঘরের সব জিনিসপত্র ব্যবহারের স্পর্শে অগোছালো হবার জন্য প্রতীক্ষা করে থাকতো।
আশা করে থাকতো অাবার কখন তাতে মায়ের হাতের ছোয়াঁ পড়বে।
মা'র বকুনি তারা শুনবে, তারপর দুরন্ত দামাল ছেলের মতো যে যার বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।
বাবা মারা যাওয়ার পর ঘরদোর ভীষণ গোছানো থাকতো।
বাবার ফেলা ছেড়া কাগজ, সিগারেটের টুকরো মেঝেয়ে অার পড়ে থাকতো না।
পড়ার টেবিলে ব্রেকফাস্টের খালি থালা, খাবার টেবিলে বই,
একটা জামা বের করার পর কাপড়ের তোলপাড় অালমারী
এসব কিছুই অার হতো না।
মা'র,যেন কোনো কাজই থাকতো না।
আমার মনে হতো, মা'র সঙ্গে সঙ্গে ও ঘরের সব জিনিসপত্র
ব্যবহারের স্পর্শে অগোছালো হয়ে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাদঁতো।
আবার আমি অনেক বড় বড় সাজানো বাড়ি দেখেছি।
সাজানো কিন্তু ঠিক গোছানো নয়।
ওটা ইংরেজির টিপটপ।
ওর মধ্যে মাইনে করা চাকর বাকরদের হাত অাছে।
কিন্তু গোছানোর মধ্যে যে ভালোবাসা অাছে,
শৃঙ্খলার মধ্যে সেটা নেই।
অগোছালোর মধ্যে যে প্রত্যাশা অাছে,
বিশৃঙ্খলার মধ্যে সেটা নেই।
শৃঙ্খলা কথাটা পুরুষ
গোছানো কথাটা স্ত্রী
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৪১ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন