সমরেশ মজুমদার

গল্প - বেঁচে থাকা

লেখক: সমরেশ মজুমদার
প্রকাশ - রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ধরণ: অন্যান

ট্র্যাঙ্গুলার পার্কের সামনে অবনীভূষণ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। আশেপাশের দোকানগুলো বন্ধ হচ্ছে। যে দোকানটায় ও তড়কা রুটি খায় সেটা ঝাঁপ টেনে দিচ্ছে, চেয়ারগুলো টেবিলের ওপর পা তুলে শোয়ানো। অতএব আজ রাত্রে খাওয়া হল না। অবনীভূষণ অবশ্য খাওয়ার জন্যে তেমন কোনও কিছু বোধ করছিল না। একটু আগেই শেষ বাসটা গড়িয়াহাটার দিকে গেছে। সেটা থেকেই নামল অবনী।

বসন্ত রায় রোড এখন চুপচাপ। ফুটপাত ধরে হাঁটছিল অবনী। আর একটা দিন কাটল। কলেজ স্ট্রিট থেকে রাত দশটায় বেরিয়ে হেঁটে নন্দন রোড। তারপর এই শেষ বাস-এর ভিড়ে মিলেমিশে আসায় একটাও পয়সা খরচ হল না। অবশ্য দশ পয়সার রিস্ক ছিল। ওটা নিতেই হয়। কাঁহাতক আর হাঁটা যায়। রাসবিহারীর মোড় থেকে এই তিনটেস্টপেজ অবশ্যই ফাউ।

আর একটা দিন কাটল, অথচ কিছুই হল না। পরমেশটার কথা বুলি হয়ে যাচ্ছে ইদানীং। ওকে। আর বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু না করেও উপায় নেই। লাইনে নামডাক আছে। মোটরসাইকেলটা কভার করেছে সম্প্রতি। আজকের অপারেশনে পরমেশ ওকে এড়িয়ে গেল। ঠিক হ্যায়। অবনী। চারমিনারটা ছুঁড়ে ফেলল। এই সময় ও কুকুরগুলোর ডাক শুনতে পেল। ক-শশা কুকুর আছে এ পাড়ায়? শালারা রোজ রাত্রে ওকে দ্যাখে, অথচ। অবনীর চারপাশে কোনও লোকজন নেই অথচ সম্মিলিত সারমেয় চিৎকার ওকে কিছুক্ষণ স্তব্ধ করল। এ-পাড়ায় কোনও নেড়ি কুত্তা নেই। দামি কুকুরগুলো যারা চিৎকার করছে তারা কেউ রাস্তায় বেরুবে না। কিন্তু অরুণদার কাছে রিপোর্ট। হয়ে যেতে পারে। তাহলে এখানকার আস্তানা থাউজেন্ড ভোল্ট হয়ে যাবে। প্রথমদিন অরুণদা বলেছিল, এখানে আসতে চাও; আমার আপত্তি নেই। আমার অফিস দশটা টু আটটা। এই টাইমটা অ্যাভয়েড করবে। আর ওপরের ফ্ল্যাটের বাড়িওয়ালা যেন কোনও কমপ্লেন না করে। বাংলায় এম এ দেওয়ার পর অরুণদার সঙ্গে আলাপ। তখন দু-একটা গল্প লিখত অবনী। আর। অরুণদা একটা কাগজ করত। ব্যাস। অরুণদার এই অফিসটা শালা মি: আইচ-এর টাকায় চলে। কালচারাল ব্যাপার সব। মারো গাড়ু। অরুণদা অবশ্য ওকে স্নেহ-টেহ করে। এম এ-র পর তিনটে বছর ফিউজ হয়ে গেল। অরুণদা কি চেষ্টা করলে একটা চাকরি দিতে পারত না? আজ দেড়মাস এখানে আছে, অরুণদার সঙ্গে দেখাই হয় না। অবশ্য এখন আর চাকরির জন্যে ওর কোনও নোলা নেই। কারণ বয়েসটা থাউজেন্ড হর্স পাওয়ার নিয়ে ছুটছে। এজ লিমিট বার।

অরুণদার অফিসের সামনে ছোট্ট বাগান। লম্বা লোহার গেট। ওপর বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাট। অবনী দেখল গেট বন্ধ। দশটায় তালা পড়ে। একবার চারপাশে চোখ বোলালো ও, কোনও মানুষ বা রাউন্ডের পুলিশের মুখ দেখতে পেল না। খাঁজে-খাঁজে পা রেখে ও লোহার গেটটার ওপর উঠতেই বাড়িওয়ালার কুকুরটা হাউমাউ করে উঠল। অবনী ধীরেসুস্থে নেমে বাগানটা পেরিয়ে অরুণদার দেওয়া ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে অফিসের দরজা খুলল। আশেপাশের সমস্ত বাড়ির আলো নেবাননা। এ-পাড়ার লোকগুলো তাড়াতাড়ি বিছানায় যায়, আর তিন প্রহর রাত্রে যারা ফেরে তাদের গাড়ি আছে।

বিরাট হলঘর। দেওয়ালে দামি-দামি ছবি। এসব ছবির মানে বুঝতে পারে কী করে লোকে অবনীর বোধগম্য হয় না। ডিম লাইটটা জ্বালালো ও। অনেকগুলো ঘর। সব ঘরেই ছবি, ম্যাগাজিন। অবনী জামাপ্যান্ট ছেড়ে বাথরুমে গেল। সারাদিন ধরে হাঁটাহাঁটি। গেঞ্জি আন্ডারওয়ারে বোঁটকা গন্ধ ছাড়ছে। দারুন বাথরুম। মোজায়েক করা, শাওয়ার বাথটব সব আছে। অবনী বিবস্ত্র হয়ে যাওয়ার খুলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর অরুণদার মার্গো সোপ দিয়ে গেঞ্জি আন্ডারওয়ার কাচতে শুরু করল।

এখন রাত একটা। মেঝেতে শব্দ হচ্ছে গেঞ্জি কাঁচার। সাবানটায় ভালো ফেনা হয় না। শব্দটা একটু আস্তে-আস্তে করার চেষ্টা করল সে। দারুণ ফোর্সে শাওয়ার থেকে জল পড়ে। আগে যে মেসটায় ছিল সে সেখানে কল দিয়ে বাচ্চা ছেলের পেচ্ছাপের থেকেও সরু জল পড়ত। বড়লোকদের কেতাই আলাদা।

স্নানটান সেরে অফিসঘরে এসে দুটো টেবিল জোড়া দিয়ে স্টোররুমের কোণায় গোঁজা বিছানাটা নিয়ে এসে ভালো করে পাতল। এখন একটু খিদে-খিদে পাচ্ছে। অবনী আর একটা চারমিনার। ধরাল। ধরিয়ে অরুণদার বসার ঘরটায় ঢুকল। দারুণ সাজানো। এই ঘরটা রাস্তার দিকে। কাঁচের জানলা দিয়ে বাইরের আলো ঢোকে। টেবিলে পেপারওয়েট চাপা দেওয়া একটা চিরকুট। অবনী পড়ল, টেলিফোনটা অফিসের জন্যে। তার মানে? এটা কি অবনীকে উদ্দেশ্য করে? কী বলতে চায় অরুণদা? শালা ফরেন মানি নিয়ে অফিস, তার ফুটুনি! খুব উত্তপ্ত হয়ে উঠল অবনী। একবার ভাবল অরুণদার বাড়িতে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, এভাবে ইনসাল্ট করার কারণটা কী? ও রিসিভার তুলে ডায়াল করল। রিং হচ্ছে ওপাশে। কেউ ধরছে না। এখন রাত কটা? দেওয়াল। ঘড়িটার দিকে তাকাল অবনী, একটা কুড়ি। নিশ্চয়ই অরুণদা ঘুমোচ্ছে। ওর বউটা যা মুটকি। রিং হচ্ছে। অবনী চারমিনার টানতে-টানতে শুনল ওপাশে কেউ এসে রিসিভার তুলল। মেয়েলি গলা। ঘুম-জড়ানো। হ্যালো-হ্যালো!

অবনী দু-বার হ্যালো শুনে বলল, কাল সকালেই যেন মালটা আসে, বুঝলেন?

মাল! কীসের মাল? ভদ্রমহিলার অবাক গলা।

রসগোল্লা। এটা কি কে সি দাসের দোকান নয়?

রং নাম্বার। বলে ঘটাং করে লাইন কেটে দিলেন ভদ্রমহিলা। অবনী প্রাণখুলে কিছুক্ষণ হাসল, তারপর আবার রিসিভার তুলল। কাকে ডায়াল করা যায়! কোনও নাম না পেয়ে এমনি কয়েকটা নাম্বার ঘোরালো ও! এবার বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একটা হেঁড়ে গলা ধরল, হ্যালো।

অবনী বলল, ইয়েস, আপনার স্ত্রী কোথায়?

ওপারের গলায় বিস্ময়, স্ত্রী কেন বলুন তো?

দরকার, জরুরি দরকার। লালবাজার থেকে বলছি।

লালবাজার? ও-ও তো বাপের বাড়িতে।

না, সেখানে নেই।

নেই মানে?

আপনি ইমিডিয়েটলি ডাফরিন হসপিটালে চলে যান। সিরিয়াস অবস্থা। হারি প্লিজ। অবনী ফোনটা কেটে দিল। অবনী আন্দাজ করল, লোকটা এখনই ডাফরিনে ছুটবে। এবং গিয়ে দেখবে ওটা একটা বাচ্চা হওয়ার হাসপাতাল। লোকটার মুখের চেহারা তখন কেমন হবে? হো-হো করে হাসতে-হাসতে অবনী উঠতেই টেলিফোন বেজে উঠল। একি হল। অবনীর দু-চোখে বিস্ময়। এত রাতে কোনওদিন ফোন আসে না তো। নাকি ওর মতো কোনও পার্টি মজাকি করছে। রিসিভার তুলল ও, হ্যালো।

হ্যালো, আপনি কি করছেন? কড়া গলার স্বর।

মানে?

মানে এত রাত্রে মেঝেতে কি আওয়াজ করছেন। আপনার মনে রাখা উচিত এটা ভদ্রলোকের বাড়ি, আমি কমপ্লেন করব। ওধারে গলা উত্তেজিত।

শালা বাড়িওয়ালা। অবনী একটু ঘাবড়ে গেল। তারপর কাটা-কাটা গলায় বলল, আপনি কি ড্রাঙ্ক?

মানে?

রং নাম্বার। ফোনটা নামিয়ে রেখে পা টিপেটিপে এসে টেবিলের ওপর শুয়ে পড়ল অবনী। আঃ, আরাম! আর একটা দিন কাটল অবনীভূষণের। আগামীকাল কিছু বিজনেস আছে। নাটে-নাটে লাগলে বাড়িওয়ালার থোড়াই কেয়ার। মনে-মনে গুনগুন করতে লাগল, শালার চামড়ায় বানানো ঢাক, তেরে কেটে তাক। অবনীভূষণ ঘুমিয়ে পড়ল।

উল্টোডাঙায় তিন নম্বর লাল বাড়িটার পরমেশকে পেয়ে গেল অবনী। কাল রাত্রে খাওয়া হয়নি কিছু। আজ ঘুম থেকে উঠেই স্নানটান সেরে বেরিয়ে পড়েছে। বেরোবার সময় গেটে বাড়িওয়ালার সঙ্গে দেখা। লেক থেকে চেনবাঁধা কুকুরকে নিয়ে বেড়িয়ে ফিরছেন। অবনী মুখোমুখি হতেই হেসে বলল, ভালো আছেন মেসোমশাই! ভদ্রলোক দুটো কুঁচকে ভেতরে ঢুকে গেলেন। অবনী মনে মনে একটা সুন্দর খিস্তি করে নিল। তারপর পাঞ্জাবির দোকানটা থেকে পেটপুরে খেয়ে উল্টোডাঙ্গায় চলে এল পরমেশকে ধরতে। এখন ওর পকেট খালি। পরমেশকে এখানে পেয়ে গেল।

পরমেশ টেবিলের ওপর উপুড় হয়ে লিখছিল, অবনীকে দেখে সরিয়ে নিল কাগজপত্র। এই বাড়িটার মালিক মাড়োয়াড়ি। বহুত ব্যবসা আছে। নিচে কাঠের আড়ত। পরমেশ ওকে দেখে বাঁ চোখ কুঁচকে কী ভাবল, তারপর বলল, যাক ভালোই হয়েছে তুই এসে পড়েছিস।

অবনী একটা চেয়ার টেনে নিল, কালকে তুই শালা আমাকে বাতেলা দিলি কেন?

বাতেলা? তোকে! ধৎ, ধৎ, ওসব ফালতু কাজ তুই করবি কেন? আমি তো তোকে জানি। পরমেশ হাসল।

কাজটা কী ছিল?

ওই আর কী! থ্রি-বি রুটের একটা স্টেট হাম্পু করতে হল।

কত মাল ছেড়েছে?

দুই। পাঁচটা সাকরেদ ছিল। হাতে কিছু থাকে না দিয়ে-থুয়ে। পরমেশ নির্বিকার। মনে মনে অবনী পরমেশকে জরিপ করল। হাতে কিছু না রাখার মাল পরমেশনয়। শালা। কোনও রিস্ক ছিল না কাজটায়। আলিপুরের মোড়ে বাস থামিয়ে দুটো আওয়াজ দিলেই প্যাসেঞ্জাররা পালাবে। তারপর টিনটা উপুড় করে ট্যাঙ্কের মুখটা খুলে দিয়ে দেশলাই ছুঁড়ে দেওয়া। ব্যস। সিংজি নগদ পেমেন্ট করে। পার স্টেট বাস দু-হাজার। পুলিশ আসার আগেই পরমেশনিশ্চয়ই পার্ক স্ট্রিটে বসে বিয়ার টানছিল। একটা স্টেট বাস পুড়লে দু-হাজার খরচ, আসবে হাজার গুণ। আরও। একটা প্রাইভেটের পারমিট পাবে সিংজি। শালা। দেখল টেবিলের ওপর খবরের কাগজের ফার্স্ট পেজে পোড়া বাসের ছবি।

অবনী বলল, আছিস ভালো। কিছু ছাড়ো এবার।

কত।

পাঁচ।

অসম্ভব। দুশো দিতে পারি। অ্যাডভান্স। পকেট থেকে টাকা বের করল পরমেশ।

অ্যাডভান্স কেন?

আজকের অপারেশনটার জন্যে। ভালো দাঁও আছে। আমি ভেবে দেখলাম তোকে নিয়েই করব। তেওয়ারিকে ও মাল আমি নিতে দেব না। অবনীর সামনে দুটো একশো টাকার নোট রাখল। পরমেশ।

কাজটা কী? অবনী টাকাটা পকেটে রাখল।

তেওয়ারি তিন নম্বরের লাইনে আজ রাত্রে যাবে। কেন যাবে খবর পাইনি। এমনি যাওয়ার মাল ও নয়। এসব ব্যাপার লিক হলে অবনী–। পরমেশ থমল হঠাৎ।

বলতে হবে না। হাসল অবনী, ওয়াগনের ব্যাপার নাকি গুরু!

না, ওসব ব্যাপার না। তুই এক কাজ কর। একটা মাল ডেলিভারি আছে। আমিই যেতাম, তুই এসেছিস, ভালো হয়েছে। ট্যাক্সি নিয়ে ঠিক দশটায় গ্লোবের সামনে যাবি। তেওয়ারির লোক। থাকবে ওখানে। বাঁ-হাতে রুমাল জড়ানো। তোকে দেখে রুমালটা খুলবে আর বাঁধবে। মালটা দিয়ে চলে আসবি।

তেওয়ারির লোক?

হ্যাঁ বস। তেওয়ারি আমার বহুদিনের দোস্ত। বলে পরমেশ টেবিলের নিচ থেকে ছোট এয়ারব্যাগটা বের করে অবনীর সামনে রাখল। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পাঁচমাথার মোড়ে কফি হাউসের সামনে চলে আসিস।

এয়ার ব্যাগটা নিয়ে অবনী ঠিক কাঁটায়-কাঁটায় দশটায় গ্লোবের সামনে পৌঁছোল। এখন এদিকটায় বেশি লোজন নেই। ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিয়ে ব্যাগটা দোলাতে-দোলাতে ও গ্লোবের কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বেশ ভারী ব্যাগটা। ট্যাক্সিতে আসতে-আসতে ও খুলে দেখেছে অন্তত গোটা কুড়ি গ্রেনেড আছে। কোথা থেকে যে পায় পরমেশ। আর এইসব অস্ত্র ও তেওয়ারির হাতে তুলে দিচ্ছে, যে তেওয়ারিকে আজ রাত্রে প্রয়োজন হলেই হাপিস করে দেবে পরমেশ। তাজ্জব ব্যাপার সব। এইজন্যেই পরমেশকে গুরু বলতে ইচ্ছে করে।

অবনী চোখ রাখছিল রুমাল বাঁধা হাতে কেউ আসছে কিনা। মিনিট তিনেক কাটল। শালা এ অবস্থায় যদি পুলিশ ধরে নির্ঘাত তিন বছরের জেল। মারাত্মক অস্ত্রসহ সমাজবিরোধী গ্রেপ্তার কাগজের হেডিং হয়ে যাবে। ইচ্ছে করলে তো পরমেশই ওকে এখন ধরিয়ে দিতে পারে। একটু ঘাম জমল ওর শরীরে। ঠিক এই সময় ওর চোখে পড়ল একটা ডাঁসা মেয়ে গ্লোবের ভেতরে ঢুকল। বাঁ-হাতের কবজিতে রুমাল বাঁধা। ও একটু অবাক হল। এই মেয়েটা কি তেওয়ারির লোক? ইম্পসিবল, হতেই পারে না। মেয়েটা রুমাল খুলছে আর বাঁধছে। এক-একবার এদিক ওদিক দেখছে। তেওয়ারির, রিক্রুট তো দারুণ জিনিস। অবনী এগিয়ে গেল মেয়েটির দিকে। তারপর ফিসফিস করে বলল, চলুন।

কপালে ভাঁজ ফেলল মেয়েটি, মানে?

তেওয়ারি? অবনী আস্তে করে কথাটা ছেড়ে দিল।

মেয়েটি হাসল, হ্যাঁ, দিন।

এখানেই নেবেন? চলুন না কোথাও বসা যাক। অবনী উদার হল।

মেয়েটি হাসল, আমার শুধু নিয়ে যাওয়ার কথাই ছিল কিন্তু।

আমার শুধু দেওয়ার। একটু অবাধ্য হই না, আপত্তি আছে?

বেশ চলুন। কোথায় বসবেন?

অবনী মেয়েটিকে নিয়ে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ঢুকল, সলিড স্বাস্থ্য মেয়েটির। কথাবার্তা চটপটে। অবনীর পাশে বসল ও। অবনী একটা হাত মেয়েটির পেছনে চেয়ারের হাতলে রেখে জিজ্ঞাসা করল, কদ্দিন লাইনে?

লাইনে? মেয়েটি চোখ তুলে দেখল অবনীকে, ও তিন মাস।

সব শালাই তাই বলে। মনে-মনে ভাবল অবনী।

ভালো লাগে? অবনী গাঢ় করতে চাইল গলার স্বর।

এই আরম্ভ করলাম তো। সেদিন এক ভদ্রলোক অনেকক্ষণ পেছন ঘুরে আলাপ করলেন। শুরুতেই আমি বললাম, দেখুন আমি কিন্তু প্রফেসনাল। শুনেই ভদ্রলোক চম্পট।

বাঃ, তিন মাসেই বেশ কথা শিখে গেছেন তো। এরপর কত মাস কত হাজার মাস চলে যাবে দেখতে-দেখতে।

মোটেই না। আমি বেশিদিন এ কাজ করব না।

কী নাম?

বীথি।

আসল নামটা!

বীথি।

অবনী একটা হাত এবার বীথির কাঁধে রাখল। বীথি জিজ্ঞাসা করল, আপনার নাম?

অবনী হেসে পরদা সরিয়ে বেয়ারাকে ডাকল, খাবার দিতে বলল, তারপর ঘাড় ঘুড়িয়ে বলল, পরমেশ।

ও আপনি? মেয়েটি চোখ চকচকে হল, আপনার কথা তেওয়ারির কাছে শুনেছি।

অবনীর হাত মেয়েটির গলায় নেমে এল। টগবগে স্বাস্থ্য মেয়েটির। অবনীর খুব ইচ্ছে হল মেয়েটার বুক ছুঁয়ে দ্যাখে।

তুমি প্রফেসনাল, না!

কেন? মেয়েটি হাসল।

কত নাও?

কেন, যাবেন?

যদি যাই?

বেশ তো, মালটা ডেলিভারি দিয়েই আমি ফ্রি।

একটু আদর করল অবনী, কত নাও?

পঁচিশ, আর ঘরভাড়া পনেরো। পুলিশের ঝামেলা নেই। যাবেন?

উমম আগে একটু গরম হই।

বাব্বা!

থাকো কোথায়?

টালিগঞ্জে। বাড়ি ছিল পাকিস্তানে।

আবার পাকিস্তান কেন, উমম! বাবা আছে?

হুঁ! মেয়েটি অবনীর কোলের কাছে সিঁটিয়ে এল। গদগদে ভাব। অবনীর মনে হচ্ছিল ও মরে যাবে।

তোমার মা দারুণ দেখতে, না?

অ্যাঁ। আবার মেয়েকে ছেড়ে মাকে কেন?

উমম, তোমাকে দেখে। দারুণ দেখতে তুমি। দারুণ জিনিস। উমম, তোমার বাবা আছে তাহলে। কী করেন? উমম।

বাবা! মেয়েটি হাসল, বাবা রাস্তায়-রাস্তায় হাঁকে–চা-ই-ই সি-টকা-পড় চা-ই-ই। প্রায় অবিকল বুদ্ধের গলা নকল করে মেয়েটি চিৎকার করে উঠল। থতমত খেয়ে গেল অবনী। বেয়ারাটা ছুটে এসে পরদা ফাঁক করে দেখে সরে গেল। আর অবনীর পা থেকে মাথা অবধি চিৎকারটা পাক খেতে লাগল। ওর মনে হল একজন বৃদ্ধ কাঁধে সস্তা ছিট কাপড় ফেলে হাতে একটা লোহার সিক নিয়ে রোদজ্বলা দুপুরে গলিতে-গলিতে ঘুরছে আর কুঁজো শরীর বেঁকিয়ে চিৎকার করছে, ছিট কাপড় চাই। আর তার মেয়ে ওর পাশে বসে গদগদে শরীরে বলছে, চাই, মাংস চাই?

মেয়েটির চোখে বিস্ময়, কী হল!

কিছু না! অবনী বলল, কিন্তু মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ওর সমস্ত শরীর গুটিয়ে আসছিল, হঠাৎ ও বলল, চলুন উঠে পড়ি।

কেন, খাবেন না?

না, ভালো লাগছে না।

আমার সঙ্গে যাবেন তো!

আজ থাক। অবনী হাসল, আজ বোধহয় আর গরম হব না।

মেয়েটি অবাক চোখে কিছুক্ষণ দেখল, তারপর ব্যাগটা তুলে নিল। অবনী বলল, সাবধানে যাবেন। ওতে কি আছে জানেন না বোধহয়। মেয়েটি কোনও কথা না বলে গটগট করে বেরিয়ে গেল। অবনী বেয়ারাটাকে দুটো টাকা গুঁজে দিয়ে দেখল মেয়েটি ব্যাগ দোলাতে-দোলাতে এমনভাবে যাচ্ছে যাতে যে-কোনও মুহূর্তেই কারওর সঙ্গে ওর ধাক্কা লেগে যেতে পারে। আর তারপরেই–অবনী কিছুক্ষণ বিস্ফোরক বয়ে নিয়ে যাওয়া মেয়েটাকে দেখল। হঠাৎ তার মনে। হল ব্যাপারটা খুব ছেলেমানুষি হয়ে গেল। তার ক্রিয়াকাণ্ডের পেছনে কোনও যুক্তি খুঁজে পেল না। শালা সব মানুষই তো ফেরিওয়ালা। তা নিয়ে ন্যাকামো করার কি আছে। অবনী দু-চোখ দিয়ে মেয়েটাকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু মেয়েটাকে আর দেখা গেল না। অবনীর খুব আফসোস হল, নিজেকে জুতোতে ইচ্ছে করল ওর।

সোদপুরের একটু আগে যেখানে রেললাইনটা বাঁক নিয়েছে সেখানটায় মোটর সাইকেল থামাল পরমেশ। সারাটা রাস্তা পরমেশ সমানে খিস্তি করেছে অবনীকে। বহুত দেরি করে এসেছে ও কফি হাউসে। অবনী বোঝাতে চেয়েছে ওর কোনও দোষ নেই। দুপুর থেকে সারা কলকাতা জুড়ে। বোমাবাজি। বাস-ট্রাম বন্ধ। ট্যাক্সি আসতে চায় না। কিন্তু রমেশ অবনীর মুখে হুইস্কির গন্ধ পেয়েই খিস্তি করতে শুরু করল। বলেছে, শালা, তোকে টাকা দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে। শেষপর্যন্ত অবনী স্বীকার করেছে, হ্যাঁ আজ দুপুরে ও চার পেগ মাত্র খেয়েছে ব্লু ফক্সে বসে। সেটা এমন কিছুই নয়। কিন্তু পরমেশ এখনও গরম। বি টি রোড ধরে আসতে-আসতে সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। খুব জোরে চালাচ্ছিল পরমেশ। পেছনের সিটে বসে ঘাম ছুটে গিয়েছিল অবনীর। পরমেশটাইট প্যান্ট আর গেঞ্জি শার্ট পরেছে। দুটোই কালো। ভালো মানিয়েছে। সেন্ট মেখেছে নাকি! দারুণ গন্ধ ছাড়ছে। গলায় সোনার চেনটা চিকচক করছে। শালা!

এখান থেকে স্টেশনে হেঁটে যেতে হবে। ঠিক স্টেশনে নয়। তার আগেই ইয়ার্ড। লম্বা কয়েকটা মালগাড়ি সব সময়েই সেখানে পড়ে থাকে। এসব জায়গা ওদের জানা। মোটর সাইকেল একটা দোকানের সামনে রেখে পরমেশ দোকানদারকে কী যেন বলল ফিসফিস করে। তারপর ওরা হাঁটতে লাগল। একটু এগিয়ে পরমেশ পকেট থেকে একটা গ্রেনেড বের করে অবনীকে দিল, এটা রেখে দে। দরকার না হলে ইউজ করিস না। অবনী গ্রেনেডটা পকেটে রেখে দিল। ওরা নিঃশব্দে হাঁটছিল। ছোট একটা কালভার্ট পেরিয়ে এল এরা। এদিকে জনবসতি নেই বললেই হয়। ওরা রেললাইন থেকে দূরত্ব বাঁচিয়ে হাঁটছিল। পরমেশ কথা বলছেনা এখন। মাঝে-মাঝে নজর বুলিয়ে নিচ্ছে চারধারে। এদিকটায় ছোট জঙ্গল মতন। এরপরেই ইয়ার্ড। ওরা একটা বড় নর্দমা পেরিয়ে এল। সন্ধে হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। ওরা রেললাইন ধরে হাঁটতে লাগল এবার। দারুণ জোনাকি জ্বলছে চারধারে। অন্ধকারটা তাই একটু পাতলা। হাওয়া দিচ্ছে মৃদু-মৃদু। পরমেশ দাঁড়াল একটা ঢালু জায়গা দেখে। তারপর বলল, অবনী, তুই এখানে শুয়ে পড়। শিষ দিলে গুঁড়ি মেরে উঠে আসবি। বলে ও রেললাইনের পাশ ঘেঁষে অন্ধকারে চলে গেল। আসবার সময় পাখি পড়া করে ও অবনীকে বুঝিয়েছে কী-কী করতে হবে। মোটা টাকার ব্যাপার। অবনী শুয়ে পড়ল। খোয়াবিছানো মাটিতে।

পকেটে অবনী গ্রেনেডটার অস্তিত্ব অনুভব করল। একটা মাত্র গ্রেনেড ওর সঙ্গে। পরমেশ ইচ্ছে করেই ওকে বোধহয় বেশি কিছু দিতে চায়নি। পরমেশের কাছে রিভলভারটা নিশ্চয়ই আছে। সব জায়গায় শালা বেইমানি। একটা আলাদা দল করবে যে পরমেশকে ছেড়ে তারও উপায় নেই। পার্টির ব্যানারে না গেলে আজকাল লাইন বন্ধ। এম-এ পাশ করার পর বেকারির দিনগুলোতে পরমেশ তাকে হাত ধরে বাঁচার রাস্তা দেখিয়েছে। তবু শালা ওকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না। তেওয়ারির সঙ্গে পরমেশের দোস্তি আছে এ কথা সবাই জানে। তেওয়ারির পেটো গ্রেনেড সাপ্লাই করে। ওর স্টক শর্ট পড়ে গিয়েছিল বলে পরমেশের কাছ থেকে কিছু মাল কিনল ও। তেওয়ারিটা শালা এক নম্বরের হারামি।

অবনী চিত হয়ে শুল। আকাশভরা তারা। উঃকত যে তারা আকাশে! দারুণ লাগে দেখতে। অবনীর মনে পড়ল ছেলেবেলায় তমলুকে ওদের বাড়ির উঠোনে বসে ও তারা গুনবার চেষ্টা করত। বাবার কথা মনে পড়ল। তিন মাস আগে চিঠি পেয়েছিল, এম-এ পাশ করিয়া এখন অবধি একটি চাকুরি জোটাইতে পারিনা!

অবনী হাসল।

পরপর দুটো লোকাল ট্রেন চলে গেল। মাটিতে কাঁপন অনুভব করল সে। ঠিক সময় শিষ শুনতে পেল অবনী। মাথা তুলে দেখল। সমস্ত জায়গাটা অন্ধকার। গুঁড়ি মেরে জঙ্গলটার পাশে গিয়ে বসল ও। ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। একটা মাত্র গ্রেনেড। ছোট-ছোট কয়েকটা ঝোঁপ এখানে।

পরমেশের গলা শুনতে পেল ও। ফিসফিস করে ডাকছে, এদিকে আয় বাঁ-দিকে।

অবনী বাঁ-দিকে সরে এল। পরমেশাঁটু গেড়ে বসে কী যেন দেখছে। অবনী দেখবার চেষ্টা করল। সামনে ফাঁকা রেললাইন। ইয়ার্ডে মালগাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ অন্ধকারে কিছু। নড়তে দেখল সে। মূর্তি দুটো স্পষ্ট হল। আর একটু পরে ও বুঝতে পারল ওদের মধ্যে একজন। তেওয়ারি। ওরা উত্তেজিত হয়ে কথা বলছে। পরমেশ চাপা স্বরে কী একটা বলল। তারপর এগিয়ে গেল গুঁড়ি মেরে। এখন অবনীকে একটু বাঁ-দিক দিয়ে পরমেশকে ফলো করতে হবে। পরমেশ আচমকা ফায়ার করবে। করে মাল হাতাবে। থলিটা নিয়েই অবনীকে দেবে। অবনী সেই মাল নিয়ে বাঁ-দিক দিয়ে ছুটবে। পরমেশ ডানদিক দিয়ে ঘুরে মোটর সাইকেলের কাছে ফিরে যাবে। অবনী যেমন করেই হোক মালটা নিয়ে ডানলপ ব্রিজের তলায় পরমেশের জন্যে ঘণ্টাখানেক বাদে অপেক্ষা করবে। এই নির্দেশ। কিন্তু মালটা কী হতে পারে? পরমেশ খবর। পায়নি বললেও অবনীর দৃঢ় বিশ্বাস পরমেশ সব নাড়িনক্ষত্র জানে। অবনী আরও কয়েক পা এগোল। তেওয়ারিরা মালগাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে। একটা টর্চ জ্বললো দূর অন্ধকারে। সম্ভবত রেল পুলিশ।

পরমেশ এগিয়ে যাচ্ছিল গুঁড়ি মেরে। হঠাৎ সমস্ত নিস্তব্ধতা খান-খান করে পর-পর তিনটে ফায়ারিং হল। সঙ্গে-সঙ্গে দুটো গ্রেনেড অবনী ডানদিকে ফাটাল। জায়গাটা মুহূর্তের জন্যে আলোকিত হয়ে উঠল। অন্ধকারটা যেন ঝলসে গেল। আর সেই স্বল্প আলোয় অবনী দেখল পরমেশ মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। দূরে স্টেশনের দিকে হইচই শুরু হয়ে গেছে সঙ্গে-সঙ্গে। কারা যেন দুপদাপ করে ছুটে বেরিয়ে গেল অবনীর পাশ ঘেঁষে। অবনী হতভম্ব হয়ে পড়েছিল প্রথমটায়। তারপর দৌড়ে পরমেশের দিকে এগিয়ে গেল। রেললাইনের ওপরে পরমেশ পড়ে আছে। বাঁ হাতটা উড়ে গেছে। প্যান্টটা পুড়ে গেছে। ফিকে জোনাকির আলোয় অবনী দেখল পরমেশের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত। আচমকা গুলি এবং গ্রেনেড খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। অবনী হাঁটুগেড়ে বসে পরমেশকে চিত করে শুইয়ে দিল। পরমেশের ঠোঁট কাঁপছে। বুকে হাত দিল অবনী। ভিজে গরম রক্ত তাতে। অবনী কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। ওকে এখান থেকে কী করে সরানো যায়। পরমেশকে বাঁচানো দরকার। অবনীর কান্না পাচ্ছিল।

স্টেশনের দিকে চিৎকারটা বাড়ছে। মূহুর্মুহু টর্চ জ্বলছে। পরমেশ গোঙাচ্ছে। কানটা মুখের কাছে নিয়ে গেল অবনী। শা-লা-সা-জা-নো–বেইমানি–। অবনী শুনল। অবনীর বলতে ইচ্ছে করল গুরু আমি আছি, তেওয়ারিকে আমি জবাব দেব। অবনী পরমেশকে তুলতে চেষ্টা করল। অসম্ভব ভারী। এত ভারী শরীর নিয়ে অবনী এক পা হাঁটতে পারবে না। কারা যেন সম্ভবত রেল পুলিশের দল টর্চ জ্বালিয়ে ছুটে আসছে দেখতে পেল অবনী। দু-তিনবার রাইফেলের আওয়াজ করল পুলিশগুলো। ওরা এগিয়ে আসছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকার অর্থ–অবনী উঠে কয়েক পা এগিয়ে গেল। তারপর ঘুরে পরমেশকে শেষবার দেখল। আর সেই সময় ওর নজরে পড়ল পরমেশের গলার সোনার চেন চিকচিক করছে অন্ধকারে। অবনী পরমেশের মাথার কাছে এগিয়ে গিয়ে এক ঝটকায় ছিঁড়ে নিল হারটা। রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে। ছেঁড়ার সময় পরমেশের মাথাটা ঝাঁকুনি খেল। অবনী পরমেশের খোলা চোখের সাদা মণি অন্ধকারেও দেখতে পেল।

পুলিশগুলোও প্রায় এগিয়ে এসেছে। অবনী ছুটতে আরম্ভ করল এবার। তিন-চারটে রাইফেলের গুলি ওর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। হঠাৎ ওর মনে হল পরমেশটা যদি না মরে যায়, ও যদি হাসপাতালে চাঙ্গা হয়ে যায় ও সব ফাঁস করে দেয়–অবনীর নাম-টাও! বেইমান কাকে বলল? অবনীকে? হার ছেঁড়ার সময় পরমেশের চোখ খোলা ছিল। অবনী হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল। তারপর পকেট থেকে পরমেশের দেওয়া গ্রেনেডটা বের করে পরমেশের রক্তাক্ত শরীরটা যে দিকে শুয়ে আছে সেইদিকে ছুঁড়ে দিল। প্রচণ্ড শব্দে গ্রেনেডটা ফাটল। অবনীর শব্দটা ভালো লাগল।

অবনী আবার দৌড়তে লাগল। পুলিশগুলো এগিয়ে আসছে। ফায়ারিং হচ্ছে। ও সেই বিরাট নর্দমার কাছে এসে পড়ল। রক্তাক্ত হারটা কোথায় রাখবে ভেবে না পেয়ে মুখে পুরে নিয়ে অবনী নর্দমার মধ্যে লাফিয়ে পড়ল। নর্দমার পচা স্রোতে অবনী ভেসে যাচ্ছিল। এই পাঁক এবং

পূতিগন্ধে অবনী এক সেকেন্ডেও থাকতে পারত না, কিন্তু পরমেশের রক্তমাখা হারের নোতা স্বাদ ওর জিভ মুখ শরীরকে একটা আলাদা জগতে নিয়ে যাচ্ছিল। বেঁচে থাকার জন্যে দারুণ লোভে অবনী বুঝতে পেরেছিল যে এই নর্দমার স্রোতেই ও সবচেয়ে নিরাপদ।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৬ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন