পর্ব-১ঃ
ফাটল ধরা দেয়াল,
তবুও ভেতরে শিকড় গেড়ে আছে স্বপ্নের ক্ষুদ্র চারা;
যে চারা কখনো ফুল ফোটায় না,
কারণ বৃষ্টির আগে এসে পড়ে
ভাড়ার কাগজ,
ঋণের নোটিশ,
আর ক্ষুধার তীব্র নখর।
রাস্তার ধুলোয় লুটিয়ে থাকা ছেলেটা
জানেই না, রঙিন বইয়ের পাতা
শুধু স্কুলে থাকে না—
মনেও থাকে,
যদি পেট ভরে একবেলা খাওয়া যায়।
শীতের রাতে ফুঁসে ওঠা হাওয়া
দরজার ফাঁক দিয়ে ঢুকে
হাড় পর্যন্ত জমিয়ে দেয়—
কিন্তু হাড় গলানো উষ্ণতা
পয়সার দোকানে বিক্রি হয় না।
আমি দেখেছি—
অভাব কখনো গলা টিপে মারে,
কখনো স্বপ্নের চোখে ছুরি বসায়,
কখনো মুখে বিষ ঢালে
যাতে আর কেউ
আকাশের দিকে তাকানোর সাহস না পায়।
তবুও,
এই মাটিতে জন্ম নেয় কবি,
যে নিজের ক্ষুধার উপর লিখে রাখে—
“কাল হয়তো বৃষ্টি হবে,
তখন এই মাটি কিছুটা নরম হবে,
আমরা আবার বাঁচব।”
গল্পের সূচনাঃ(আসফাক আবির)
বৃষ্টি পড়ছিল না সেদিন।
ঢাকার আকাশ ধূসর, হালকা ধুলো ভাসছে বাতাসে, আর রোদ যেন শহরের গায়ে রঙচটা সোনালি চাদর মুড়ে রেখেছে।
আবির ছোট্ট ঘরের মেঝেতে বসে ডায়েরি বন্ধ করল।
পাতার ভেতর শুকনো কালির গন্ধ, আর বাইরে চায়ের দোকানের ফুটপাথ-গন্ধ এক হয়ে যাচ্ছে।
ঘরের ফ্যানটা ঘুরছে ধীরে, শব্দ করছে—ঝর ঝর ঝর—যেন হাড়কাঁপানো কোনো পুরনো কবিতার সুর।
তার সামনে ছড়িয়ে আছে তিনটা খাতা, কিছু ছেঁড়া পাতা, আর এক কাপ চা—যেটা অনেক আগেই ঠান্ডা হয়ে গেছে।
আবির চায়ের কাপ হাতে নিয়ে জানালার দিকে তাকাল। গলির মোড়ে কয়েকটা ছেলে মার্বেল খেলছে, আর রাস্তার ওপাশে এক বৃদ্ধা চটের বস্তায় বসে ভিক্ষা করছে।
তার চোখে এই দৃশ্যগুলো কবিতায় রূপ নেয়, কিন্তু তার পকেটে সেসব শব্দ ছাপানোর টাকা নেই।
আজ সকালে ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালা এসে বলেছে—
“আগামী সপ্তাহে ভাড়া না দিলে, ভাই, রুম খালি করে দিয়েন।”
আবির শুধু মাথা নেড়েছে। উত্তর দেওয়ার মতো কথা ছিল না।
তার হাতে কবিতা আছে, কিন্তু কবিতা দিয়ে ভাড়া মেটানো যায় না।
প্রথম অনুচ্ছেদঃ
সকালে ঊষার ফোন
কলে ঘুম ভাঙে আবিরের। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, হালকা শীতল পরিবেশ। অলস মানুষদের জন্য যাহা অতি উত্তম আবহাওয়া, যাদের কোনো কাজকর্ম নাই তাদের কাছে এই আবহাওয়ায় দুপুর ২ টার আগে বিছানা ছেড়ে ওঠা অপরাধ।
আবির যদিও নিজের ইচ্ছায় বেকার না, প্রতিনিয়ত ইন্টারভিউয়ের পর ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে, হচ্ছে না।
তার কবিতা লেখার পিছনেও রয়েছে পর পর তিনটি ছ্যাকা খাওয়ার ইতিহাস, সেগুলো না হয় পরেই বলি!
-হ্যালো!
-কই তুমি? এখনো ঘুমাচ্ছ? ১১টা বাজে সে খেয়াল আছে?
-তুমি কই?
-পাল্টা প্রশ্ন করবা না। কোথায় থাকার কথা ছিল?
-ওহ শিট! তুমি বসো আমি আসছি ১০ মিনিট।
হাতমুখ কোনোভাবে ধুয়ে রিক্সা নিয়ে আবির চলল কাছে। আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে ঊষা কে? আবিরের প্রেমিকা?
হ্যা প্রেমিকা তবে তা সদ্য তিনমাস যাবৎ। এর আগে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের। ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হওয়া তবে তখন প্রেম ছিল না তাদের মধ্যে।
ঊষা এর আগে কোনো সম্পর্কে জরায়নি। আবিরই তার প্রথম এবং শেষ। কিন্তু আবিরের চতুর্থ প্রেমিকা ঊষা। ঊষা আগে থেকেই আবিরকে পছন্দ করতো কিন্তু ওভাবে বলা হয়ে ওঠেনি তাই প্রেম ও হয়ে ওঠেনি, আর আবির ওকে আগে ওই নজরে কখনো দেখেনি যখন না তৃতীয় প্রেমিকা তার মন ভেঙে চলে গেছে এবং ঊষা তার মনের ভাব প্রকাশ করছিল।
-২০ টাকা দাও, মামার ভাড়া দিব।
-এতো গরীব ক্যা তুই! নে ধর।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন