বুদ্ধি
শংকর ব্রহ্ম
দেবাদিদেব মহাদেব দেখলেন, যা বুদ্ধি দিয়ে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল, হিংসা-দ্বেষের বসে, নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে করে মানুষের বুদ্ধি-সুদ্ধি একেবারে লোপ পেয়ে বসেছে।
তাই তিনি ঠিক করলেন, পুনরায় একদিন মানুষের মধ্যে বুদ্ধি বিতরণ করতে হবে । এবং তিনি সেই ভাবনা মতো ঘোষণা করেদিলেন যে, মানুষের মধ্যে পুনরায় বুদ্ধি বিতরণ করা হবে কোনদিন, কোথায়।
নির্দিষ্ট দিনে তিনি নারায়ণকে পাঠালেন সেখানে। বুদ্ধি বিতরণ করতে এসে নানয়ণ দেখলেন যে , বুদ্ধি বিতরণের লাইনে শুধু পুরুষেরা উপস্থিত , কোন মহিলা সেখানে উপস্থিত নেই ।
(নারাযণ বিস্মযে ভাবলেন, একী অবাক কান্ড !)
মহিলারা সেখানে উপস্থিত না থাকার ফলে সমস্ত বুদ্ধি পুরুষদের মধ্যে বিতরণ করে দিয়ে তিনি চলে গেলেন ।
আসলে মহিলারা সেদিন লাইনে দাঁড়াবে বলে বিউটি পার্লারে সাজগোজ করতে গিয়েছিলেন। সাজগোজ শেষ করে বুদ্ধি বিতরণ কেন্দ্রে আসতে তাই তাদের বেশ দেরী হয়ে গেছে।
ততক্ষণে নারায়ণ সমস্ত বুদ্ধি পুরুষদের মধ্যে বিতরণ শেষ করে চলে গেছেন । সব মহিলাদের নজরে পড়ল একটি পোস্টারে লেখা – ” বুদ্ধির মজুত শেষ ”
মহিলারা পোস্টারের লেখা দেখে চিৎকার , চেঁচামেচি করে যাচ্ছেতাই কান্ড শুরু করলেন ।
নারায়ণ তখন দ্বার রুদ্ধ করে যোগনিদ্রায় বিলীন। মহিলাদের দাপাদাপি আর চিৎকার চেচামেচি তাঁর কানে গেল না। কিন্তু তা শুনতে পেলেন পিতামহ ব্রহ্মা। তিনি মহিলাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে, খুব বিরক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন ।
এক মহিলা তখন ব্রহ্মাকে দেখতে পেয়ে একগাল হেসে তার কাছে গিয়ে বললেন,
“হে পিতামহ , এ কেমন বিচার হলো? আমরা কি একেবারেই বুদ্ধিহীন হয়ে থাকব এরপর থেকে চিরকাল ?”
ব্রহ্মা হেসে বললেন, “মোটেই না , তোমাদের এই মধুর হাসিতেই পুরুষের বুদ্ধি সব লোপ পাবে। কোন কাজে আসবে না ।”
ব্রহ্মার এই কথা শুনে, অপর এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে এসে বললেন,
“হে প্রভু , আমি তো হাসতে জানি না , আমি যে চিরদুঃখী , শুধু কাঁদতে জানি । আমার কী উপায় হবে ?”
ব্রহ্মা এবার একটু থমকে গিয়ে, বললেন, “তোমাদের এই কান্নাতেও পুরুষের বুদ্ধি ঘায়েল হয়ে যাবে। তখন তাদের বুদ্ধি কোন কাজে আসবে না ।”
ব্রহ্মার এই কথা শুনে, এবার আরেক মহিলা চিৎকার করতে করতে এগিয়ে এসে বললেন : “হে ভগবান , আমি তো হাসতেও পারি না , কাঁদতেও পারি না । আমি পারি শুধু ঝগড়া করতে। এ ছাড়া আর কোন কিছুই করতে জানি না আমি। আমার কী হবে তবে ?”
ব্রহ্মা এবার তার কথা শুনে বললেন, তোমাদের এই ঝগড়াঝাঁটিতেও পুরুষের বুদ্ধি বিগড়ে যাবে। কোন কাজ আসবে না তখন তাদের কোন বুদ্ধি।”
মহিলারা সকলে খুশি হয়ে ফিরে গেলেন।
অগত্যা, তারপর থেকে ব্রহ্মার কথায়,
ওই হাসি , কান্না আর ঝগড়ার মাধ্যমে পুরুষদের কাবু করার বুদ্ধি লাভ করলেন মহিলারা ।
আজও তারা ওই তিনটে বুদ্ধি দিয়েই পুরুষদের কাবু করে রাখেন ।
পুরুষের কোন বুদ্ধিই মহিলাদের ওই তিনটে বুদ্ধির সঙ্গে পেরে ওঠেনি আজও।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন