অণুগল্প স্বপ্ন সংকট
স্বপ্ন সংকট
শংকর ব্রহ্ম
——————————-
আমার নাম কখনও সত্যচরণ, কখনও জনিওকার আবার কখনও গুলমোহর।
আদালতে একদিন এক বাবুর মুখে শুনেছিলাম,কোন এক বিখ্যাত কবি নাকি বলেছেন,নামে কিবা আসে যায়? গোলাপকে যে নামেই ডাকো না কেন? সে সুন্দর।
বন্ধুরা আমাকে গুলবাজ বলে ডাকে, আমার কোন আপত্তি নেই। তাতে আমি মোটেও রাগ করি না। কারণ আমি নিজে তো জানি, জীবনে ক’টা সত্যি কথা বলেছি। আদালতে আমাকে প্রায়ই মিথ্যে সাক্ষী দিতে যেতে হয়। কাল এক মালদার পার্টির হয়ে মিথ্যে সাক্ষী দিতে যেতে হবে। ভালই কামাই হবে। এভাবে মামলায় মিথ্যে সাক্ষী দিয়ে ভালই চলছিল আমার। হঠাৎ কাল রাতে দেখা স্বপ্নটা সব গোলমাল করে দিয়ে গেল একেবারে।
দেখলাম, আমি আদালতে সাক্ষী দিতে যাচ্ছি। বাস থেকে নেমে আদালতের দিকে এগোতে গিয়ে দেখলাম।আমি আর মোটেও মানুষ নেই। সাপ হয়ে গেছি একটা। আদালতে ঢুকতে যেতেই প্রহরীরা লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে এলো আমাকে মারতে ।শেষে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচি আমি । কিন্তু চিন্তা হলো, এবার এ অবস্থায় বাড়ি ফিরবো কি করে আমি? ভাবলাম রাত একটু গভীর হলে, লোক চলাচল কমে গেলে, লুকিয়ে বাড়ি ফিরবো। রাত একটু গভীর হতে আমি দেখলাম, একজন সন্ন্যাসী রাস্তা দিয়ে এদিকেই আসছে। তাঁর সারা শরীর দিয়ে যেন জ্যোতি ফুটে বের হচ্ছিলো। আমি তার কাছে গিয়ে লেজ গুটিয়ে বললাম, প্রভু কিভাবে আমি এর থেকে মুক্তি পেয়ে আবার মানুষ হবো?
সে বলল, বেটা শোন, এই জগৎ সত্যের অধীন। সত্যই এই জগতের প্রভু। সত্যই এ জগতের নিয়ন্ত্রক শক্তি। জ্ঞানীর নিকট সত্যই পরম ধর্ম।নতোর সত্যে আশ্রয় নেওয়া উচিৎ। সত্যের থেকে শ্রেষ্ঠ আর কিছু নেই। সত্য পরমাত্মা রূপে সকলের হৃদয়ে বাস করে। সত্যই সকলের গতি। সত্যই অব্যক্ত রূপে সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত হয়ে আছে। সত্যই অব্যয় অমৃত,শাশ্বত ধর্ম এবং ঐকান্তিক সুখের আশ্রয়। মিথ্যাচারী ব্যক্তির মুক্তি নেই। সব রকম মিথ্যে পরিত্যাগ করে কেবল মাত্র সত্যের শরনাগত হ’ বেটা। তাতেই মুক্তি পাবি। আচ্ছা আমি তোকে আশীর্বাদ করছি, আর কোন মিথ্যেকথা তোর মুখ দিয়ে বের হবে না কাল থেকে। তুই পুনরায় মানুষ হয়ে যাবি।
এইসব কথা বলে, সন্ন্যাসী আমার মনটা কেমন বিগড়ে দিয়ে চলে গেল। মুখ দিয়ে যদি আর কোন মিথ্যে কথা না বেরোয়, তাহলে কাল থেকে আমার চলবে কি করে?
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন