শংকর ব্রহ্ম

গল্প - সুখ শান্তি

লেখক: শংকর ব্রহ্ম
প্রকাশ - রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০২৪ ধরণ: জীবনবাদী

সুখ শান্তি
শংকর ব্রহ্ম

অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে পিতৃহারা মেয়ে অতসীকে বিয়ে দিলেন অনীতাদেবী। অতসীকে বিয়ে দেয়ার পর যখন সে আবার অষ্টমঙ্গলার দিন বাপের বাড়ি এলো তখন তার মা অনীতা দেবী খুব আগ্রহ ভরে জানতে চাইল ,অই বাড়িতে তোর কেমন লেগেছে রে?
অতসী জবাবে বলে-
“আমার ওখানে মোটেও ভাল লাগছে না মা। মানুষগুলো কেমন যেন? পরিবেশটাও আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না”।
মেয়ের ভেতর এক ধরণের হতাশা দেখতে পেল অনীতা দেবী।
দেখতে দেখতে কয়েকদিন কেটে গেল এখানে অতসীর। তারপর চলে যাবার দিন এগিয়ে এলো। চলে যাবার ঠিক আগের দিন অনীতা দেবী অতসীকে নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন। তারপর হাড়িতে জল চরিয়ে দিয়ে তা গরম করতে লাগলেন। একসময় যখন জল ফুটতে শুরু করেছে, তখন তিনি হাড়িতে গাজর,ডিম আর সোনামুগ ডাল ছেড়ে দেন। এইভাবে কিছুক্ষণ ফোটার পরে তিনি স্টোভ নিভিয়ে দেন।
গাজর, ডিম এবং সোনামুগ ডাল একটি বাটিতে নামিয়ে ঢেলে রাখেন।
তারপর তিনি অতসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন- “তুই এখান থেকে কি কিছু বুঝতে পারলি , আমাকে বল” ?
অতসী বিস্ময় প্রকাশ করে বলে- “আমি দেখলাম তুমি গাজর, ডিম আর সোনামুগ সিদ্ধ করলে মাত্র”।
মেয়ের কথা শুনে মা হেসে ফেললেন, আর বললেন-“হ্যাঁ, তুই ঠিকই দেখেছিস।
তবে তুই কি আর কিছু লক্ষ্য করেছিস?”
মেয়ে বলে- “ না- তো,”
অনীতা দেবী বললেন-“গাজর মোটামুটি শক্ত ধরনের, ডিম খুব পলকা আর সোনামুগ খুবই শক্ত। কিন্তু যখন এ’গুলিকে গরম জলে দিলাম তখন তিনটি জিনিসের তিন রকম অবস্থা হল। গাজর খুব নরম হয়ে গেল, আর ডিম শক্ত হয়ে গেল আর সোনামুগ ডাল গলে সুন্দর ঘ্রাণে আর স্বাদে জলে মিশে গেল”।
বলে এবার অনীতা দেবী অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন, যেন অনেক অতীতে চলে গেলেন। তারপর আবার বাস্তবে ফিরে এসে মেয়ের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন- “আমি তোকে এখন যে কথাগুলি কথা বলব, আমার মাও ঠিক এই ভাবেই আমাকে এই কথাগুলি বলেছিলেন।
আমি জানি না কথাগুলি তোর কোন
উপকারে আসবে কিনা , তবে কথাগুলো আমার জীবনকে অনেক প্রভাবিত করেছিল”।
তিনি একটু বিরতি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন,“তুই যদি তোর স্বামীর বাড়িতে নিজেকে কঠিন ভাবে উপস্থিত করিস, তবে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তোর সংঘর্ষ হবে- তোকে দুর্বল করে দেবে, ঠিক গাজরের মতই নরম করে ফেলবে আর তোর ব্যক্তিত্বকে ভেঙে চুরমার করে ফেলবে। আর যদি একবার তুই নিজেকে নরম-ভঙ্গুর করে উপস্থাপন করিস, তবে প্রতিকূল পরিবেশ তোকে সহজেই কব্জা করে ফেলবে আর তারপর আঘাতের পর আঘাত এসে তোর হৃদয়কে একসময় কঠিন করে ফেলবে ঠিক ওই ডিমের মত।
কিন্তু তুই যদি তোর ভালবাসা দিয়ে নিজেকে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে, নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে তার অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে নিতে পারিস তবে পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠবে ঠিক যেমন সোনামুগ ডাল জলের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে জলকে সুস্বাদু করেছে আর তার চারপাশ সুন্দর ঘ্রাণে ভরিয়ে দিয়েছে”।

পরের দিন যখন অতসী তার স্বামীর বাড়িতে যাচ্ছিল তখন তার ভিতর এক আশ্চর্য শান্ত ও দীপ্ত ভাব আর এক দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ পাচ্ছিল।”
অতসী মনে মনে ভাবছিল, আমাদের চারপাশের পরিস্থিতি সবসময় আমাদের অনুকূল থাকবে না ঠিকই, তাই বলে নিজে পরিস্থিতির দ্বারা কাবু না হয়ে , র্ধৈয্য , ভালবাসা, সহমর্মিতা নিয়ে পরিস্থিতিকে কাবু করতে হবে । সুখ-শান্তি সব সময় নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। বাইরে থেকে তা কখনই আসে না। আসতে পারে না।

[ শোনা কাহিনীর উপর ভিত্তি করে লেখা।]

৬৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন