তুমি চেয়েছিলে একটি ঘর আর একটি বর,
নিশ্চিত জীবনের ঠিকানা,
সমাজের চোখে বৈধ সুখের ছায়া।
তোমার চাওয়ার তালিকায় ভয় ছিল না,
অন্যায় ছিল না, শুধু ছিল নিরাপদ ভবিষ্যৎ।
আর আমি চেয়েছিলাম একজোড়া হাত;
যে হাত ধরে রাখবে ভাঙনের মুহূর্তেও,
যে হাত ছাড়ার আগে দু’বার ভাববে।
আমি চেয়েছিলাম একজোড়া চোখ,
যেখানে তাকালে আমাকে মেপে দেখা হবে না,
যেখানে আমার দুর্বলতা অপরাধ হয়ে উঠবে না।
আর আমি চেয়েছিলাম
টোলপড়া একগাল হাসি,যার ভেতর আমার সমস্ত ক্লান্ত দিনগুলি
আস্তে আস্তে মানুষ হয়ে উঠবে।
আমি কোনোদিন ঘর চাইনি, দুয়ারও চাইনি,
আমি চাইনি সমাজের সিলমোহর।
আমি শুধু চেয়েছিলাম রাত গভীর হলে-
কারো কাছে অকারণে ভেঙে পড়ার অধিকার,
নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ।
এই দুই চাওয়ার মাঝখানে
নীরবে কেটে গেল আমাদের দশটি বছর।
নিজের ইচ্ছেগুলো এক এক করে গুছিয়ে রাখা,
নিজের স্বপ্নকে অন্য কারো স্বাচ্ছন্দ্যের নিচে চাপা দেওয়া।
এই দশের এক তুমি নিয়ে গেলে সব!
ভবিষ্যৎ, পরিচয়, নতুন সকাল, নতুন নাম,
আর আমাকে দিয়ে গেলে শুধু শূন্য।
এই শূন্য কোনো ফাঁকা জায়গা না।
এই শূন্য বুকের ভিতর ধীরে ধীরে জমে থাকা
একটা অদৃশ্য পাহাড়।
যা রাতে শ্বাস আটকে দেয়, দিনে হাসতে শেখায়
ভাঙা মানুষের অভিনয়।
এই শূন্যের সাথে সংখ্যাবিহীন যেমন অমূল্য;
ঠিক তেমনই আমি রয়ে গেলাম মূল্যহীন,
মানুষের ভিড়ে একটা মানহীন উপস্থিতি,
যার দাম কেউ জানে না,
কিন্তু যার ভার নিজেকেই বয়ে নিতে হয়।
তুমি চলে গেলে অন্যের জীবনে সুখের পায়রা উড়াতে”
ভালো রাঁধতে,
ভালো রাখতে,
করো চোখের অভিনাসী জল মুছতে,
হাসাতে আর হাতে।
আমি শুধু রয়ে গেলাম নিজেকে বোঝাতে বোঝাতে,
হয়তো একজোড়া হাত—-”
আমার চোখের জল মুছার ভাগ্যে ছিল না।
হয়তো যাদের হাত ধরে ভেঙে পড়া যায়,
তাদের কপালে সবাই জোটে না।
হয়তো একজোড়া চোখ, যেখানে তাকালে
নিজেকে লুকাতে হয় না,
আর টোলপড়া একগাল হাসি,
যা বুকের ভেতর আলো জ্বালায়।
হয়তো সব চোখের জন্য আমিও যথেষ্ট হয়নি।
কিছু চাওয়া খুব ছোট,
তবু ভাগ্যের তালিকায় তার কোনো ঘর থাকে না,
তাই হয়তো তোমার সঙ্গে আমারও ঘর হয়নি।
আজ আর অভিযোগ করি না,
শুধু জানি,
আমি যা চেয়েছিলাম খুব ছোট ছিল,
কিন্তু হারানোর পর সেই ছোট চাওয়াগুলোই
আমাকে সবচেয়ে বড় শূন্যতায় ডুবিয়ে দিয়েছে।
২০

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন