আমি—
ছিলাম না কোনো বিপ্লব, কোনো রাজনীতি,
আমি ছিলাম শুধু একজন ছাত্র।
সকালবেলা চুলে তেল দিয়ে মা বলেছিল—
“বেশি দুষ্টুমি করিস না স্কুলে।”
আমি হেসে বলেছিলাম—
“তোমার জন্য একটা ফুল আঁকবো আজ খাতায়।”
আজ খাতা নেই, আমি নেই,
ফুলটাও নেই—
শুধু একটা আধপোড়া স্কেল,
একটা পেন্সিল, আর মাটিতে লেগে থাকা
একচিলতে ছায়া—
আমার।
বিমানটা যখন ছুটে এলো আমাদের দিকে,
তখন আমরা ঠিক করছিলাম
কে প্রথম পড়বে কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতায়।
আমরা জানতাম না—
আমাদের জীবনটাই পাঠ হবে আজ,
একটি রক্তাক্ত কবিতা,
যার পাঠক পুরো জাতি,
আর যার শব্দ—
অঙ্গার, আর্তনাদ, অনন্ত অন্ধকার।
তুমি জানো মা?
আমি চিৎকার করেছিলাম,
তবে কাঁদিনি।
কারণ আমি জানতাম তুমি কাঁদবে
আমার জায়গায়।
আমি কেবল চেয়েছিলাম
তুমি যেন জানো—
তোমার আঁকা টিপ, তোমার শাড়ির ঘ্রাণ,
আমার শেষ শ্বাসেও ছিল।
রাষ্ট্র,
তুমি নামাবে পতাকা,
তবে কি জানো কারা নামল সবচেয়ে বেশি?
আমার ছোট বোন,
যে এখনো বলে—
“ভাইয়া ফিরে আসবে তো?”
আমার খেলার সাথিরা এখন
শুয়ে আছে আগুনের পাশ ঘেঁষে,
তাদের চোখ খোলা—
তারা এখনো বোঝে না
মৃত্যু মানে কী।
তুমি বলো, কেমন দেশ এটা,
যেখানে একটি ছাত্র তার মৃত্যুর আগে
চাইতেও পারে না
আরো একটু সময়?
আমি ছিলাম আলো,
তোমরা আমাকে ছুঁড়ে দিলে ছায়ার অতলে।
আমি ছিলাম সকাল,
তোমরা আমাকে বিকেলের শেষ সূর্যের মতো
ধূসর করে দিলে।
আজ আমি শুধু মৃত নই—
আমি সেই নিরব প্রতিধ্বনি,
যা প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে অনুপস্থিতির নামে ডাকা হবে—
“রোল নম্বর ২৩… নেই।”

০
০
সেভ বা রিয়েক্ট করার জন্য লগইন করে নিন!
৫০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন