ন্যায়ের খোঁজ—
এক অনন্ত শুকনো নদীর কাছে ঢেউ চাওয়ার আরেক নাম;
যেখানে বালুর ঢিবির মতো বদলায় সংজ্ঞা, আর দুধভাতের ভেতর মেশানো আফিম—
যেন নেশার স্বাদে মাতাল করে।
সেখানে বিচারালয় মানে
একটি ঠান্ডা পাথরের প্রাচীর,
যেন নদীর তলদেশের বিষাক্ত কুমীর—
উপর থেকে শান্ত জোছনা ভাসে,
যেখানে রক্তের দাগ মুছে ফেলা হয়
কালির দাগ দিয়ে।
যেখানে সাক্ষ্য হয়ে ওঠে
টাকার গন্ধে লুটিয়ে পড়া আরেকটা মুখ-
আর অভিযুক্তর আসনে
শুধু বসে থাকে দুর্বল মানুষের কঙ্কাল।
ন্যায়ের খোঁজ সেখানে
একটা ভাঙা কম্পাসের মতো—
উত্তর-দক্ষিণে ঘুরতে ঘুরতে
নিজেই নিজেক সন্দেহ করে।
কোথাও নেই দিশা, সবুজ নেই, কাশফুলের নাচ,
শুধু আছে প্রতারণার অন্ধ চোখ।
আমি হাঁটি—
অসীম শূন্যতার ভিতর দিয়ে,
হাতে রক্তে ভেজা প্রশ্নের মশাল,
বুকে মৃত প্রতিজ্ঞার কবর ফুল।
প্রতিটি পদক্ষেপে শুনি
অসহায়ের আর্তনাদ—
যা শোনা যায় না শহরের প্রাচীরে,
যা ভেসে যায় নদীর ঘোলা জলে।
ন্যায়ের খোঁজ মানে
একটি নির্বাসিত স্বপ্নের যাত্রা।
কেউ বলে, ন্যায় আছে আকাশে,
কেউ বলে, বইয়ের ভাঁজে;
কেউ খুঁজে ফেরে মন্দিরে-মসজিদে,
কেউ চেয়ে থাকে নেতার ঠোঁটে।
কিন্তু আমি জানি—
ন্যায় নেই কোথাও বাইরে,
সে লুকিয়ে আছে এক আহত মানুষের
নিঃশব্দ চোখের ভেতরে।
ন্যায়ের খোঁজ মানে
শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একাকী বৃক্ষ,
যার পাতায় আগুন লাগে,
তবুও শেকড় মাটিকে ছাড়ে না।
ন্যায়ের খোঁজ মানে
রক্তাক্ত আঙুল দিয়ে
ভবিষ্যতের দেয়ালে লিখে রাখা সত্য—
যেটা মুছে ফেলা যায় না কোনোদিন।
তাই আমি খুঁজি—
জেনেও খুঁজি,
যে ন্যায় হয়তো কখনোই মিলবে না।
কিন্তু খোঁজার মধ্যেই
আমার অস্তিত্ব, আমার জেদ,
আমার অবিনশ্বর বিদ্রোহ।
কারণ মানুষ ন্যায় পায় না বলেই মরে,
কিন্তু ন্যায়ের খোঁজ ত্যাগ করলে
সে মানুষের আকারও মানুষ হারায়।

পরে পড়বো
২৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন