আকাশে আজ সূর্য ওঠেছে, মেঘেদের সাদা পর্দা ভেদ করে। তা জড়িয়ে ধরেছে সমগ্র ভূগর্ভ। সকালে মায়ের ডাকে ভাঙল ঘুম, কোমল স্পর্শে জেগে ওঠল স্বপ্নদর্শী এক দুরন্ত শিশুর চোখে রাঙা, আলোকিত অদূর ভবিষ্যৎ।
মা-বাবার হৃদয়ে এক গভীর ভালোবাসা আর মস্তিষ্কে উইপোকার মতো ঘিনঘিন করা স্বপ্নের প্রাঞ্জলতা।
কে জানতো, এই স্পর্শই হবে শেষ স্পর্শ।
এই ভালোবাসা আর স্বপ্নই রূপ নেবে পুড়ে যাওয়া ভস্ম,
আর তরতাজা দেহ হবে জ্বলন্ত অগ্নীয়’কুন্ডলীর শিকার।
পাখি আর প্রজাপতিরা উড়ে চলছে তাদের বাগানে। গায়ে তাদের লেগে ছিলো শিশিরভেজা মাটি আর ফুলের সুবাস।
হয়তো কোনো দুর্ঘটনা বা ষড়যন্ত্র,
কে জানতো?
গাছ জানতো, কিন্তু সে তো বলতে জানতো না।
অন্তর্দহনে তার পাতা গুলো ঝড়ে যেতে পারলো না।
সবুজ ঘাসের দেহে আর ক্যাম্পাসের চারু প্রাঙ্গণে তারা মেতে ছিলো উল্লাসে,
তবে কে জানতো, এই হাসিই হবে তাদের শেষ কান্নার ইঙ্গিত।
হয়তো কোনো দুর্ঘটনা বা ষড়যন্ত্র,
কে জানতো?
ঘাস জানতো, কিন্তু সে তো বলতে জানতো না।
বাকরুদ্ধ তাই কথা বলতে পারলো না।
যে স্বপ্ন বুনতো মনে মনে,আকতো রঙিন সব চিএ
আর জাগতো হরেক রকম কৌতূহল,
যে নরম আঙুল তাক করে থাকতো ঐ স্বপ্নের দিকে,
যে ভেবেছিলো মনে মনে বড় হলে হবে চালক,
জানতো কে সে স্বপ্ন নায়ক, কেরে নেবে তার জীবনের পালক।
বাতাসে দুলতে থাকা সবুজ পাতার মতো প্রাণ চঞ্চলতা,
আর সূর্যাত্নক আকাশের মতো এক সুদীর্ঘ রশ্মির মতো এক বুক স্বপ্ন।
হয়তো কোনো দুর্ঘটনা বা ষড়যন্ত্র,
কে জানতো?
আকাশের পাখিরা জানতো, কিন্তু তারা তো কথা বলতে পারতো না।
ক্ষোভে নেমে আসতে পারলো না ভূপ্রাতে, জানাতে পারলো না তাদের অক্ষমতা কোনো ইঙ্গিতময়ী সংকেত হয়ে।
ঐ সেই এক নিষ্প্রাণ পাখি, যে কেড়ে নিলো শত জীবন্ত পাখির প্রাণ,
যাদের চোখে জ্বলে ছিলো নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বলতা,
যাদের দিকে ধেয়ে এসেছে ইউনিভার্সের এক অভিশপ্ত বোমারু বিমান, যার দেহে লেগে ছিলো মৃত্যুর গন্ধ,
যাকে নিঃশেষ করা হয়েছে শতাধিক প্রাণের সমাধিস্থলে।
অশ্রু কেরোসিনে কি ধাউ ধাউ করে না জ্বলছিলো আগুন, সেই ধ্বংসস্তূপ,
যেখানে ভস্ম দেয়ালে লেগে ছিলো শতাধিক অস্ফুটিত শিশুর আর্তনাদের চিৎকার।
কি গন্ধ ধোঁয়ার, যেনো মাংসের পোড়া গন্ধে আর ছাই হওয়া সব কঙ্কালের ভস্মে জ্বলছে আগুন তীব্র স্বভাবে।
দুরন্ত শিশু, যে চেয়ে থাকতো উড়ন্ত পাখির ডানার দিকে স্বপ্নময় দৃষ্টিতে, তারা আজ উড়ে গেছে ডানাবিহীন ভূগর্ভ ভেদ করে।
ধোঁয়ার বিষাক্ততা আর এই সুসজ্জিত বাগানের আগুন থেকে মুখ সরিয়ে তারা উড়ে গেছে কোনো এক আভাসে।
হয়তো কোনো দুর্ঘটনা বা ষড়যন্ত্র,
কে জানতো?
আকাশ জানতো, কিন্তু তার তো প্রাণ ছিলোনা।
ক্ষুব্ধ হিয়ায় বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে পারলো না তবুও,
সেই কান্না ঝড়ছে নিরীহ মানুষের চোখে, সেই ধ্বংসস্তূপ জ্বলে রবে নিরীহ মানুষের বুকে।
সেই ধোঁয়া মিশে থাকবে যেনো আকাশের মেঘ হয়ে,
সেই পাখি যাদের পিঠে গুঁজে ছিলো অদৃশ্য সোনালী ডানা,
যা উড়ে গিয়েছে ধোঁয়ার সাথে মৃত্যুর ডানায়।
থেমে গিয়েছে রক্ত প্রবাহিত নদী।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন