ত্রয়ী কথাশিল্পী রশীদ করীম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং
সৈয়দ হকের সঙ্গে আমার বন্ধুতা দীর্ঘকালের, অথচ
তাঁরা উপন্যাস লেখার সময় মূল কাহিনী একটু-আধটু ক’রে
বদলে ফেলেন কিনা, এতদিনেও তাঁদের জিগ্যেস করা হয়নি।
কত কথাইতো হয় আমাদের, হয়তো
এই কথাটি ঢাকা প’ড়ে থাকবে অনেক কথার আড়ালে। তবু
অনুমান করি, তাঁরা সম্ভবত লিখতে লিখতে ভাবেন,
ভাবতে ভাবতে লেখেন আর বদলে ফেলেন অনেক কিছু।
জীবন সব সময় একই রকম থাকে না,
আমাদের সবারই জীবন কমবেশি, কারো অতি শ্লথ, কারো খুব দ্রুত
বদলাতে থাকে। কখনো কখনো টের পাওয়াই ভার।
তোমরা আমার দিকেই তাকাতে পারো, তোমরা যারা
আমার বিষয়ে অল্পবিস্তর জানো (সবটুকু কে-ই বা জানতে পারে?)
তারা বলতে পারবে কী রকম বদলে গিয়েছি আমি। আমার
শারীরিক ভূগোলের পরিবর্তন এত বেশি
দৃষ্টিগোচর যে, অনেকেই কেমন নজরে তাকায়, যেন ওরা কোনো
কাকতাড়ুয়া দেখছে! আমার যৌবনের জামাকাপড়
এখন আমার গায়ে লাগবে না, হবে না মানানসই।
বহুকাল আমি খোলামকুচি আর কাচের টুকরো নিয়ে
খেলায় মেতে থেকেছি, এইতো কিছুদিন আগে
এক আশ্চর্য মণিরত্ন দেখা দিয়েছে আমার চলার পথে আর
আমার জীবন বদলে গ্যাছে সম্পূর্ণভাবে। আমার মধ্যে
ভালোবাসার সেই দ্যুতি ঝিকিয়ে উঠেছে যা, মানবতার অনুপম
ঐশ্বর্যের সন্ধান দেয়, ঝর্নাতলার নুড়িকে নক্ষত্রে
রূপান্তরিত করার ক্ষমতা ধরে। আজ সহজেই বিশ্বের
সর্বকালের মহাকবিদের আসর ব’সে যায়
আমার দহলিজে। কেউ কেউ আমাকে লক্ষ করেন ঈষৎ কৌতূহলে,
কেউ কেউ আমার কবিতার খাতা নিয়ে খানিক
নাড়াচাড়া ক’রে রেখে দেন টেবিলে। কেউ হেসে
দেখিয়ে দেন ক্রটিগুলো।
একজন শ্বেত শ্মশ্রুমণ্ডিত অমিতকান্তি কবি
আমাকে একপাশে এনে
চুপিসারে বলেন, “তোমার কাব্যভাষায় সেই স্পর্শ আনতে
চেষ্টাশীল হও যা’ সমকালীন বাংলা কবিতায় গরহাজির।
“কী ক’রে আনবো আমি কি পারবো, হে কবিগুরু ?
আমি প্রশ্ন দুটি শেষ করতে না করতেই মহাকবিদের আসর
মিলিয়ে যায় শূন্যতায়। আমি বদলে যাওয়ার প্রত্যাশায়,
প্রতীক্ষায় কম্পমান কোনো বয়স্ক মৎস্য শিকারীর মতো।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন