এবং উঠোনে মুমূর্ষু কবুতর

শামসুর রাহমান শামসুর রাহমান

(মোহাম্মদ আবুল কাশেমের উদ্দেশে)

দিনরাত বছরের পর বছর এভাবে বিছানায়
সেঁটে থাকা, সামান্যই নড়াচড়া, মানে
অন্যের সাহায্যে শুধু এপাশ ওপাশ করা, ওঠা
কিংবা বসা নেই এতটুকু। এভাবেই ওষুধের,
ডেটলের এবং নিজের অস্তিত্বের দুঃসহ গন্ধের মধ্যে যাচ্ছে বয়ে
দিনগুলো, রাতগুলো। জীবনসঙ্গিনী যিনি, তার
শুশ্রূষা, সংসার চালাবার
নাছোড় সংগ্রাম এই অক্ষম আমার বড় শুষ্ক হৃদয়ের
জমিনে শিশিরবিন্দু ঝরায় নিয়ত। তার দিকে
অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি, বলি না কিছুই।

না, এভাবে আর শয্যাবন্দি থাকবো না, এবার আমার
গাঝাড়া দেয়ার পালা। এইতো বিছানা থেকে নেমে
দাঁড়িয়েছি সটান মেঝেতে, দিব্যি হেঁটে যাচ্ছি একা
বাড়িটার কৃপণ বাগানে, জনাকীর্ণ ফুটপাতে। কতকাল
দেখিনি এসব দৃশ্য, এসব দোকানপাট, শুনিনি ভিড়ের
কোলাহল, স্রেফ ভুলে ছিলাম মোটরকার, বাসের গর্জন।

কী আশ্চর্য, এই তো উড়ছি আমি নীল আসমানে, ভাসমান
মেঘ চুমো খাচ্ছে বারবার আমাকে এবং নিজে
হচ্ছি রেশমের মতো মেঘ হচ্ছি বাতাসের মিহি ঢেউ; লাল,
নীল, সাদা, সবুজ, হলুদ পাখি হচ্ছি, অবিরত
ফুটছি গোলাপ, পদ্ম হয়ে, ঝরাছি বকুল হয়ে
চকিতে কোথাও। আমি আর আমি নই, অন্য কেউ একজন।

তোশক-বিছানো খাটে ভয়ানক সাঁটা নই, নই স্থাণু, নানা
ওষুধের গন্ধ আর করে না পীড়ন দিনরাত, ভালো করে
তাকাও আমার দিকে, আমার শরীরে
নক্ষত্রপুঞ্জের দ্যুতি, আমি অবিকল ডানাঅলা
দেবদূত। যখন যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি অনায়াসে, কেউ
পারে না রুখতে গতি। হঠাৎ আমার এ কী হলো!
কোথায় অমল ডানা? সেঁটে আছি পুরনো চাদরে, অপরাগ
শয্যাত্যাগে, নানাবিধ ওষুধের ঝাঁঝাঁ গন্ধে স্বপ্নের পরাগ
ঝরে যায়, সুদূরের মেঘ শুষে নেয়
হায়, দেবদূতের মহিমা আর উঠোনে মুমূর্ষু কবুতর।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৭২ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন