এই রীতি রয়ে যাবে
শামসুর রাহমান
প্রত্যুষের আলোছায়াময় কালে চোখ খুলে
তাকালেই কখনো কখনো
চেনা পরিবেশ কেমন যে বেয়াড়া বেগানা খুব
মনে হয়, বোঝানো যাবে না কিছুতেই।
চতুর্দিকে সাজানো, গোছানো আসবাব,
পড়ার টেবিল আর শেল্ফে রক্ষিত
সারি সারি বইপত্র, দেয়ালে ঝোলানো ছবি-এই
সব কিছু কেমন বেগানা মনে হয়।
যে-নারী আমার পাশে ঘুমে অচেতন, কে সে? তাকে
বেজায় অচেনা মনে হয়। এই আমি
বয়সের ভারে বড় অপদস্থ, সে-ও নয় চেনা সুনিশ্চিত
তার কাছে, অথচ দু’জন ক্রমাগত করে যাচ্ছি বসবাস।
এই যে রঙিন পাখি বহুদিন পর এসে বারান্দায় ব’সে
তাকাচ্ছে আমার দিকে, সে-কি এই
লোকটিকে প্রকৃত নিরীহ ভেবে নিরাপদ বোধ
করে বাস্তবিক? করে সম্ভবত, নইলে সে নিশ্চিত উধাও
হয়ে যেতো পাখা
ঝাপ্টিয়ে কে জানে কতদূর কোন্ শান্ত ঠিকানায়।
পাখিটির সুকোমল উপস্থিতি, আমার বিনীত
ঘরঘেঁষা ফুলের গাছের মৃদু নাচ আংশিক ভুলিয়ে দেয়
বিষাদের অন্ধকার। ঈষৎ আলোর মৃদু চুমো
আমাকে ফিরিয়ে আনে অন্ধকূপ থেকে সুগভীর নদীতীরে।
হঠাৎ পাশের ঘর থেকে মহিমায় ভরপুর
রবীন্দ্র সঙ্গীত ভেসে এসে
আলিঙ্গন করলো আমাকে, আমি সেই
কথা আর সুরে রূপান্তরে অন্য কেউ হয়ে যেন
নিমেষে আনন্দলোকে চলে যাই, ভেসে
বেড়াই মেঘের সঙ্গীরূপে।
আমার শয্যায় এখনো যে-নারী ঘুমে অচেতন,
এখনো কি সে অচেনা আমার, এখনো
যখন আঁধার থেকে আলোয় নন্দিত খুব আমি?
জীবন সঙ্গিনী সে আমার। তবু কেন একটি সোনালি হাত
এখনো আমার দিকে প্রায়শ এগিয়ে আসে আর
কখনো কখনো করে আলিঙ্গন দিব্যি অগোচরে?
অন্ধকারাচ্ছন্ন বিষণ্নতা, আনন্দের আলোচ্ছেটা-
দু’টি হেঁটে যায় পাশাপাশি যমজ বোনের মতো
সকল ঋতুতে দু’টিকেই চুম্বন না
ক’রে বুকে না জড়িয়ে পৃথিবীর খোলা পথে সত্যি এগোবার
জো নেই-এ কথা বলে গেছেন অভিজ্ঞ গুণীজন যুগে যুগে,-
এই রীতি রয়ে যাবে যতদিন আসমানে চন্দ্র, সূর্য আছে।
তাকালেই কখনো কখনো
চেনা পরিবেশ কেমন যে বেয়াড়া বেগানা খুব
মনে হয়, বোঝানো যাবে না কিছুতেই।
চতুর্দিকে সাজানো, গোছানো আসবাব,
পড়ার টেবিল আর শেল্ফে রক্ষিত
সারি সারি বইপত্র, দেয়ালে ঝোলানো ছবি-এই
সব কিছু কেমন বেগানা মনে হয়।
যে-নারী আমার পাশে ঘুমে অচেতন, কে সে? তাকে
বেজায় অচেনা মনে হয়। এই আমি
বয়সের ভারে বড় অপদস্থ, সে-ও নয় চেনা সুনিশ্চিত
তার কাছে, অথচ দু’জন ক্রমাগত করে যাচ্ছি বসবাস।
এই যে রঙিন পাখি বহুদিন পর এসে বারান্দায় ব’সে
তাকাচ্ছে আমার দিকে, সে-কি এই
লোকটিকে প্রকৃত নিরীহ ভেবে নিরাপদ বোধ
করে বাস্তবিক? করে সম্ভবত, নইলে সে নিশ্চিত উধাও
হয়ে যেতো পাখা
ঝাপ্টিয়ে কে জানে কতদূর কোন্ শান্ত ঠিকানায়।
পাখিটির সুকোমল উপস্থিতি, আমার বিনীত
ঘরঘেঁষা ফুলের গাছের মৃদু নাচ আংশিক ভুলিয়ে দেয়
বিষাদের অন্ধকার। ঈষৎ আলোর মৃদু চুমো
আমাকে ফিরিয়ে আনে অন্ধকূপ থেকে সুগভীর নদীতীরে।
হঠাৎ পাশের ঘর থেকে মহিমায় ভরপুর
রবীন্দ্র সঙ্গীত ভেসে এসে
আলিঙ্গন করলো আমাকে, আমি সেই
কথা আর সুরে রূপান্তরে অন্য কেউ হয়ে যেন
নিমেষে আনন্দলোকে চলে যাই, ভেসে
বেড়াই মেঘের সঙ্গীরূপে।
আমার শয্যায় এখনো যে-নারী ঘুমে অচেতন,
এখনো কি সে অচেনা আমার, এখনো
যখন আঁধার থেকে আলোয় নন্দিত খুব আমি?
জীবন সঙ্গিনী সে আমার। তবু কেন একটি সোনালি হাত
এখনো আমার দিকে প্রায়শ এগিয়ে আসে আর
কখনো কখনো করে আলিঙ্গন দিব্যি অগোচরে?
অন্ধকারাচ্ছন্ন বিষণ্নতা, আনন্দের আলোচ্ছেটা-
দু’টি হেঁটে যায় পাশাপাশি যমজ বোনের মতো
সকল ঋতুতে দু’টিকেই চুম্বন না
ক’রে বুকে না জড়িয়ে পৃথিবীর খোলা পথে সত্যি এগোবার
জো নেই-এ কথা বলে গেছেন অভিজ্ঞ গুণীজন যুগে যুগে,-
এই রীতি রয়ে যাবে যতদিন আসমানে চন্দ্র, সূর্য আছে।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৫৬ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন