গাছ, কফিন এবং নৌকা

শামসুর রাহমান শামসুর রাহমান

একজন কাঠুরেকে স্বপ্নাদ্য একটি গাছ টানে
এবড়োথেবড়ো জমিনের সীমানায়,
যেখানে গাছটি অনাদরে উপেক্ষায় বেড়ে উঠে
মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে,
যেন বীর কর্ণ, যার রথের ভাস্বর চাকাদ্বয়
দেবে যাবে মাটিতে। কাঠুরে কুঠারের
আঘাতে আঘাতে গাছটিকে
কাঠে রূপান্তর করে ঘর্মাক্ত শরীরে।

একজন কাঠের মিস্তিরি বসে থাকে কয়েকটি
কাষ্ঠখণ্ড নিয়ে।
সে তার নিজের ছায়া বিছিয়ে দিয়েছে
কাঠের উপর আর তিনটি খেয়ালী দাঁড়কাক
ছায়াটিকে দ্রুত খণ্ড খণ্ড করে ধারালো চঞ্চুতে, ছায়াটির
বিলাপে মিস্তিরি কফিনের রূপ দ্যাখে, অবশেষে
তার শিল্পদক্ষতায় গড়ে ওঠে সাধারণ একটি কফিন
যার শূন্যতায় দীর্ঘশ্বাস, মরীচিকা, মর্সিয়ার পূর্বাভাস।

কফিনে পুরলো ওরা, ঘাতকেরা, তাঁকে
অবহেলা আর অশ্রদ্ধায়,
অথচ মহত্ত্ব আর অমরত্ব, তাঁর দুই সহচর, তাঁর
উদ্দেশে করল নিবেদন অপরূপ শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ঘাতকেরা সে কফিনটিকে
নিষিদ্ধ দ্রব্যের মতো পাচার করতে চেয়েছিল
বিস্মৃতির বিয়াবানে আর সে কফিন
অলৌকিক প্রক্রিয়ায় একটি বিশাল
সন্তরণশীল নৌকা হয়ে ভাসমান সবখানে।

কাঠুরে ও কাঠের মিস্তিরি জনতার
বিপুল তরঙ্গে মিশে সবিস্ময়ে নৌকার আড়ালে
একটি সুদীর্ঘ গাছ, একটি কফিন
দেখে বুকে একরাশ উজ্জ্বলতা নিয়ে ঘরে ফেরে।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৯১ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন