হে বিধাতা,
অতিক্রান্ত শতাব্দীর পৈতৃক বিধাতা,
দাও মোরে ফিরে দাও অগ্রজের অটল বিশ্বাস |
যেন পূর্বপুরুষের মতো
আমিও নিশ্চিন্তে ভাবি ক্রীত, পদানত,
তুমি মোর আজ্ঞাবাহী দাস |
তাদের সমান
মণ্ডুকের কূপে মোরে চিরতরে রাখো, ভগবান |
কমঠবৃত্তির অহংকারে
ঢাকো ক্ষণভঙ্গুরতা | তাদের দৃষ্টান্ত-অনুসারে
আমিও ধরাকে যেন সরা জ্ঞান করি |
মর্যাদার ছিদ্রিত গাগরি
জোড়ে যেন বারংবার ডুবে আত্মপ্রসাদের স্রোতে |
রৌদ্র-জ্যোতি হ’তে
আবার ফিরাও মোরে তমসার প্রত্ন দায়ভাগে |
ঘুণধরা হাড়ে যেন লাগে
উঞ্ছপুষ্ট জ্যেষ্ঠদের তৈলসিক্ত মেদ ;
মরে যেন উদ্বন্ধনে অপজাত হৃদয়ের খেদ ||

পিতৃপিতামহদের প্রায়
তোমার নামের গুণে তীর্ণ হ’য়ে দশম দশায়
মূঢ়, মূক গড্ডলেরে দিই যেন বলি
রক্তপিপাসিত যূপে |
বাচাল বিদ্রূপে
হুংকারিলে দুর্বৃত্তের উদ্ধত দম্ভোলি,
গুরুজনদের মতো করি যেন সাষ্টাঙ্গ প্রণাম
শক্তির উচ্চল পায়ে ; আর্তির সংক্রাম
কেটে গেলে কালক্রমে জনাকীর্ণ রাজপথ থেকে,
স্ফীত বুকে অপ্রতিষ্ঠ পৌরুষের ঝেড়ে
হাসিমুখে হাত নেড়ে
পলাতক সধর্মীরে ডেকে,
প্রমাণিতে পারি যেন সবই তব ইচ্ছা, ইচ্ছাময় ||
এলে পরে লাভের সময়,
সদসৎনির্বিচারে, সকলই তোমার দান ব’লে,
নিঃস্বের স্বেদাক্ত কড়ি হাতায়ে কৌশলে
আমিও জমাই যেন যক্ষসংরক্ষিত কোষাগারে |
শ্রুতিধর মান্ধাতার উক্তির উদ্ধারে
লুকায়ে ইন্দ্রিয়াসক্তি ; অবিমৃশ্য জন্মের জঞ্জলে
বিষায়ে সংকীর্ণ সৌধ ; জলে, স্থলে, নভে
বিরোধের বীজ বুনে ; নিরন্তর নিষ্কাম প্রসবে
ভগ্নস্বাস্থ্য গর্ভিণীর ক্লিন্ন অন্তকালে,
তোমার প্রতিভূ সেজে, উন্নরক স্বর্গের আশ্বাসে
সাধ্বীর সদ্ গতি যেন করি |
ঊর্ধ্বশ্বাস উত্সবের উদ্বায়ী উচ্ছ্বাসে
তোমারে পাসরি,
দারুণ দুর্দিনে যেন পূজা মেনে বিস্ময়ে শুধাই,
“স্মরণে কি নাই,
দয়াময়, আশ্রিতেরে স্মরণে কি নাই ?”

ভগবান, ভগবান
অতীতের অলীক, আত্মীয় ভগবান,
অভিব্যাপ্ত আবির্ভাবে আজ
আমার স্বতন্ত্র শূন্যে করো তুমি আবার বিরাজ |
শকুনির ক্ষুধানিবারণে
শস্যশ্যাম কুরুক্ষেত্রে মায়াবাদ ভ’নে,
সূচ্যগ্রমেদিনীলোভী যুযুত্সুরে ক্ষমিতে শেখাও
অপরের অপঘাত | তুলে নাও,
আমার রথাশ্বরজ্জু, হে সারথি, তুলে নাও হাতে |
স্বার্থের সংঘাতে
বিতর্ক, বিচার হানো | মর্মে-মর্মে, মজ্জায়-মজ্জায়
জাগাও অন্যায়, শাঠ্য | হিংস্র অলজ্জায়
পুণ্যশ্লোক সগোত্রের তুল্য মূল্য দাও, দাও মোরে |
অপ্রকট সততার জোরে
আমার অন্তিম যাত্রা, অতিক্রমি’ সুমেরুর বাধা,
হয় যেন নন্দনে সমাধা,
যেখানে প্রতীক্ষারত সুরসুন্দরীরা
সুকৃতির পুরস্কারে পাত্রে ঢেলে অমৃতমদিরা,
নীবিবন্ধ খুলে,
শুয়ে আছে স্বপ্নাবিষ্ট কল্পতরুমূলে ||

কিন্তু যেথা সর্পিল নিষেধ
স্বপুচ্ছের উপজীব্যে সাধে আত্মবেদ
প্রমিতির বিষবৃক্ষে, অমিতির অচিন্ত্য অভাবে ;
অন্তরঙ্গ জনতার নিবিড় সদ্ভাবে
হয়নি বাসোপযোগী অদ্যাবধি যে-নিস্তাপ মরু ;
পশুপতি বাজারে ডমরু
মোর গোষ্ঠিপতিদের নাচায়নি যার ত্রিসীমায় ;
নিরালম্ব নিরালোকে যেথা
দেব-দ্বিজ-প্রবঞ্চিত ত্রিশঙ্কু ঝিমায়,
মৌনের মন্ত্রণা শোনে মৃত্যুবিপ্রলব্ধ নচিকেতা ;
সেখানে আমার তরে বিছায়ো না অনন্ত শয়ান,
হে ঈশান,
লুপ্তবংশ কুলীনের কল্পিত ঈশান ||

৫৬
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন