কলম

সুকান্ত ভট্টাচার্য সুকান্ত ভট্টাচার্য

কলম, তুমি কত না যুগ কত না কাল ধরে
অক্ষরে অক্ষরে
গিয়েছ শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনী শুরু করে |
কলম, তুমি কাহিনী লেখো, তোমার কাহিনী কি
দুঃখে জ্বলে তলোয়ারের মতন ঝিকিমিকি ?
কলম, তুমি শুধু বারংবার,
আনত ক’রে ক্লান্ত ঘাড়
গিয়েছ লিখে স্বপ্ন আর পুরনো কত কথা,
সাহিত্যের দাসত্বের ক্ষুধিত বশ্যতা |
ভগ্ন নিব, রুগ্ন দেহ, জলের মতো কালি,
কলম, তুমি নিরপরাধ, তবুও গালাগালি
খেয়েছ আর সয়েছ কত লেখকদের ঘৃণা,
কলম, তুমি চেষ্টা কর, দাঁড়াতে পারো কি না |

. হে কলম ! তুমি কত ইতিহাস গিয়েছ লিখে
. লিখে লিখে শুধু ছড়িয়ে দিয়েছ চতুর্দিকে |
. তবু ইতিহাস মূল্য দেবে না, এতটুকু কোণ
. দেবে না তোমায়, জেনো ইতিহাস বড়ই কৃপণ ;
. কত লাঞ্ছনা , খাটুনি গিয়েছে লেখকের হাতে
. ঘুমহীন চোখে অবিশ্রান্ত অজস্র রাতে |
. তোমার গোপন অশ্রু তাইতো ফসল ফলায়
. বহু সাহিত্য বহু কাব্যের বুকের তলায় |
. তবু দেখ বোধ নেই লেখকের কৃতজ্ঞতা,
. কেন চলবে এ প্রভুর খেয়ালে, লিখবে কথা ?


হে কলম ! হে লেখনী ! আর কত দিন
ঘর্ষণে ঘর্ষণে হবে ক্ষীণ ?
আর কত মৌন-মূক, শব্দহীন দ্বিধান্বিত বুকে
কালির কলঙ্ক চিহ্ন রেখে দেবে মুখে ?
আর কত আর
কাটবে দুঃসহ দিন দুর্বার লজ্জার ?
এ দাসত্ব ঘুচে যাক, এ কলঙ্ক মুছে যাক আজ,
কাজ কর-----কাজ |

. মজুর দেখ নি তুমি ? হে কলম, দেখনি বেকার ?
. বিদ্রোহ দেখনি তুমি ? রক্তে কিছ পাও নি শেখার ?
. কত না শতাব্দী , যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
. প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস !


দিন নেই, রাত্রি নেই, শ্রান্তিহীন , নেই কোনো ছুটি,
একটু অবাধ্য হলে তখুনি ভ্রূকুটি ;
এমনি করেই কাটে দুর্ভাগা তোমার বারো মাস,
কয়েকটি পয়সায় কেনা, হে কলম, তুমি ক্রীতদাস |
তাই যত লেখ, তত পরিশ্রম এসে হয় জড়ো
----কলম ! বিদ্রোহ আজ ! দল বেঁধে ধর্মঘট করো |
লেখক স্তম্ভিত হোক, কেরানীরা ছেড়ে দিক হাঁফ,
মহাজনী বন্ধ হোক, বন্ধ হোক মজুরের পাপ ;
উদ্বেগে-আকুল হোক প্রিয়া যত দূর দূর দেশে,
কলম ! বিদ্রোহ আজ, ধর্মঘট হোক অবশেষে ;
আর কালো কালি নয়, রক্তে আজ ইতিহাস লিখে
দেওয়ালে দেওয়ালে এঁটে, হে কলম,
. আনো দিকে দিকে ||
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৩০৫ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন