প্রবাসের অভিজ্ঞতা

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বহুদিন ছিলাম প্রবাসে আমি
দেখেছি মানুষ
নীরব তাঁতের কাছে কর্মী ও শিল্পীর মতো নতু
দেখেছি বাতাসে ছেঁড়া কলাপাতা
যাই যাই শব্দ করে ওড়ে
হাঁটু ভাঙা সিংহ এক পড়ে আছে
হ্রদের কিনারে।

বহুদিন ছিলাম প্রবাসে আমি
দেখেছি মিনার
কীর্তিহীন
যাদের ফেরার কথা ছিল, তারা অনেকে ফেরেনি
মুক্তির ঈষৎ দূরে পৌঁছে কেউ
তৃষ্ণার্ত হয়েছে
শকুনি পালকে কেউ লিখে গেছে নশ্বর জীবনী।
হিসেব মেলাও
সকলই ভূমির জন্য
কাঁচা খাদ্য ছেড়ে দিয়ে একদিন শস্যের সংগ্রহে
বহুদূর চলে আসা–
সেই সব ভূমিদাস এখন আমার
সহযাত্রী–
কেউ বা দেখায় পথ, অনেকেই
আপন চৌহদ্দি
পেরুতে জানে না
হিম গ্রাম পার হয়ে
অর্ধ-সুপ্ত মফঃস্বল
সুতোকলে ষড়যন্ত্র
কারেন্সি নোটের তীক্ষ্ণ অস্ত্ৰ,
যেন
প্রজাতি বিনাশ ছাড়া শান্তি নেই
সর্বত্র দেখেছি
সকলেই শান্তি চায়–
সকল সংসার জুড়ে অস্ত্রের-প্রতিভা।

বহুদিন ছিলাম প্রবাসে, আমি দেখেছি মানুষ
নদীর ভাঙন নিয়ে গান গায়–
নারী ও নিয়তি
পাশাপাশি ঘরে বাস–
অনিত্যের দারুণ নগ্নতা
চোখের বিকার আনে—
শিল্পের দুঃখের মতো তবু তার দিকে
ছুটে যায় বাহু
নিমফুলে ভ্রমর বসে না?

দেখেছি মৃত্যুর কাছে মাতৃত্বের লোভ
বনপথে পাতার ওপরে শুকনো
ফোঁটা ফোঁটা রক্ত
কবেকার—
কুমারী স্তনের পাশে বাসনার তপ্ত হল্কা
কখনো তন্ময় ভোরে
মানুষ ও গরু দুই বন্ধু
পাশাপাশি কথা বলে।
বহুদিন ছিলাম প্রবাসে, আমি ক্লান্ত,
ইচ্ছে হয় বসি
কিংবা মাথা দিয়ে শুই
হিজন বনের পাশে,
কিংবা মাথা দিয়ে শুই
ধরিত্রীর কোলে
হাওয়ার আদর খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার মতো
সুখ নেই
এবং স্বপ্নের মধ্যে ফিরে আসে ক্লান্ত পথিকের প্রতিচ্ছবি।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৫১ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন