যদি হয়
তসলিমা নাসরিন
তুই কোন দেশে থাকিস,
তোর সঙ্গে আমার দেখা হয় না কেন?
হঠাৎ রাস্তায়, সিনেমায়, শিল্পকলায়, ট্রেনে,
বাসে, নাটকে, রেস্তোরাঁয়?
এত মুখ দেখি, চেনা মুখ এত
‘কি খবর ভাল’ বলে বলে দিন কাটে, মাস কাটে,
বছরের পর বছর কেটে শরীরে-মনে শ্যাওলা জমে।
একবার দেখা হলে তোকে আমি
হাজার লোকের সামনে জড়িয়ে ধরে চুমু খাব
একবার দেখা হলে
তোর শেকড়বাকড় উপড়ে নিয়ে দেখিস দেশান্তরি হব।
আমার আর ভালো লাগে না
ভাঁড়ারের পিঁয়াজ রসুন সকালের শুকনো রুটি,
আর ভাল লাগেনা ন’টা চারটা বাঁধা বেতন,
ভাল লাগে না বিকেলের এক চিলতে আকাশ,
আর ভালো লাগে না না-ফুরোনো রাত।
আমাকে নিয়ে আগের মতো বৃষ্টিতে ভিজবি না?
আমাকে নিয়ে আগের মতো রোদ্রে?
সবাইকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে চৌতালে দুলবি না
আমার দু’বাহু আকড়ে ধরে আবার,
আবার কড়ইতলায়, ক্যান্টিনে, করিডোরে,
আবার চল উজান ঠেলে যাই,
আবার হল্লা করে ফিরি সারা শহর,
আবার তরঙ্গ তুলি মজা-ব্রক্ষ্মপুত্রে।
আবার চল জীবনযাপন শিকেয় তুলে সারা বিকেল ভেসে যাই পরষ্পরের চোখে,
তোর চোখ কি সেই আগের মত এখনও তেমন?
এখনও স্বপ্নের জলে ভেজা, ধোঁয়া, নীল-নীল,
এখনও কি তেমন অথই, অতল তেমন?
একবার চল ডিঙিনৌকায় বইঠা ঠেলে ওই পারে যাই
ওই পারে পার্বতীদের উঠোন, উঠোনে পা ছড়িয়ে
কাঁচালংকায় কামরাঙা মেখে বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাই
নারকেল পাতার বাঁশি বাজিয়ে
চল না সর্ষের খেতে দিই ভোঁ দৌড়
কে কাকে ছুঁতে পারে দেখি, কে আগে ছুঁতে পারে কাকে।
এই আমি ঠায় দাঁড়ালাম সর্ষেক্ষেতে
চৌরাস্তায়, কড়ইতলায়, সিঁড়িতে, বারান্দায়,
আমাকে তুই ছুঁয়ে দে, ছুঁয়ে দে, ছুঁয়ে দে, ছুঁয়ে দে,
এই আমি অনড় দাঁড়ালাম
আমাকে ছুঁয়ে দেখ
কী ভীষণ শীতল পাথর আমি অথবা পালক,
পালক তোর গালে ছোঁয়া, ঠোঁটে, চোখে,
একবার বুকেও ছোঁয়া, তোর লোমষ বুকে।
কোন অরণ্যে তুই বাস করিস
বল, ডালপালা, সাপখোপ, ঘোর অন্ধকার
সরিয়ে সরিয়ে তোকে খুঁজব
খুঁজে পেলে দেখিস হাজার বৃক্ষের সামনে
তোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাব।
তোর সন্যাস-সংসার ভেঙে দেশান্তরি হব।
তোর মায়া হয় না?
জগতের সবচেয়ে অসুখী মানুষ আমি,
আমার অসুখী চিবুক, অসুখী চুল, চোখ,
হাতের আঙুল, আমার জন্য একফোঁটা মায়া?
মায়া হয় না তোর?
ইচ্ছে হয় না হঠাৎ একদিন দেখা হোক
সংসদের মাঠে, জাদুঘরে,
ফুলের দোকানে, মেলায়, মিছিলে?
একদিন দেখা হলে পুরো জগৎ দেখুক
তোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবই।
মনে আছে সেই কত আগে, সেই প্রথম
আমার ঠোঁটে একবার ঠোঁট ছুঁয়েছিলি বলে
ভয়ে ও ঘৃণায় কেমন কেঁপেছিলাম না-ছোঁয়া তরুণী!
দুটো তিনটে চুলে আমার পাক ধরেছে, তোরও কি?
তোরও কি রাতে ঘুম হয় না, পেটে অম্বল?
তোরও কি গিঁটব্যথা মাঝে-মাঝে?
তোরও কি বহুমূত্র, উচ্চচাপ? হোক, তবু দেখা হোক
আবার ব্রক্ষ্মপুত্রের জলে চল ভোরের আকাশ দেখি,
আবার জীবন দেখি, খড়কুটো স্বপ্ন খুঁজি চল।
তোর সঙ্গে আমার দেখা হয় না কেন?
হঠাৎ রাস্তায়, সিনেমায়, শিল্পকলায়, ট্রেনে,
বাসে, নাটকে, রেস্তোরাঁয়?
এত মুখ দেখি, চেনা মুখ এত
‘কি খবর ভাল’ বলে বলে দিন কাটে, মাস কাটে,
বছরের পর বছর কেটে শরীরে-মনে শ্যাওলা জমে।
একবার দেখা হলে তোকে আমি
হাজার লোকের সামনে জড়িয়ে ধরে চুমু খাব
একবার দেখা হলে
তোর শেকড়বাকড় উপড়ে নিয়ে দেখিস দেশান্তরি হব।
আমার আর ভালো লাগে না
ভাঁড়ারের পিঁয়াজ রসুন সকালের শুকনো রুটি,
আর ভাল লাগেনা ন’টা চারটা বাঁধা বেতন,
ভাল লাগে না বিকেলের এক চিলতে আকাশ,
আর ভালো লাগে না না-ফুরোনো রাত।
আমাকে নিয়ে আগের মতো বৃষ্টিতে ভিজবি না?
আমাকে নিয়ে আগের মতো রোদ্রে?
সবাইকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে চৌতালে দুলবি না
আমার দু’বাহু আকড়ে ধরে আবার,
আবার কড়ইতলায়, ক্যান্টিনে, করিডোরে,
আবার চল উজান ঠেলে যাই,
আবার হল্লা করে ফিরি সারা শহর,
আবার তরঙ্গ তুলি মজা-ব্রক্ষ্মপুত্রে।
আবার চল জীবনযাপন শিকেয় তুলে সারা বিকেল ভেসে যাই পরষ্পরের চোখে,
তোর চোখ কি সেই আগের মত এখনও তেমন?
এখনও স্বপ্নের জলে ভেজা, ধোঁয়া, নীল-নীল,
এখনও কি তেমন অথই, অতল তেমন?
একবার চল ডিঙিনৌকায় বইঠা ঠেলে ওই পারে যাই
ওই পারে পার্বতীদের উঠোন, উঠোনে পা ছড়িয়ে
কাঁচালংকায় কামরাঙা মেখে বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাই
নারকেল পাতার বাঁশি বাজিয়ে
চল না সর্ষের খেতে দিই ভোঁ দৌড়
কে কাকে ছুঁতে পারে দেখি, কে আগে ছুঁতে পারে কাকে।
এই আমি ঠায় দাঁড়ালাম সর্ষেক্ষেতে
চৌরাস্তায়, কড়ইতলায়, সিঁড়িতে, বারান্দায়,
আমাকে তুই ছুঁয়ে দে, ছুঁয়ে দে, ছুঁয়ে দে, ছুঁয়ে দে,
এই আমি অনড় দাঁড়ালাম
আমাকে ছুঁয়ে দেখ
কী ভীষণ শীতল পাথর আমি অথবা পালক,
পালক তোর গালে ছোঁয়া, ঠোঁটে, চোখে,
একবার বুকেও ছোঁয়া, তোর লোমষ বুকে।
কোন অরণ্যে তুই বাস করিস
বল, ডালপালা, সাপখোপ, ঘোর অন্ধকার
সরিয়ে সরিয়ে তোকে খুঁজব
খুঁজে পেলে দেখিস হাজার বৃক্ষের সামনে
তোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাব।
তোর সন্যাস-সংসার ভেঙে দেশান্তরি হব।
তোর মায়া হয় না?
জগতের সবচেয়ে অসুখী মানুষ আমি,
আমার অসুখী চিবুক, অসুখী চুল, চোখ,
হাতের আঙুল, আমার জন্য একফোঁটা মায়া?
মায়া হয় না তোর?
ইচ্ছে হয় না হঠাৎ একদিন দেখা হোক
সংসদের মাঠে, জাদুঘরে,
ফুলের দোকানে, মেলায়, মিছিলে?
একদিন দেখা হলে পুরো জগৎ দেখুক
তোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবই।
মনে আছে সেই কত আগে, সেই প্রথম
আমার ঠোঁটে একবার ঠোঁট ছুঁয়েছিলি বলে
ভয়ে ও ঘৃণায় কেমন কেঁপেছিলাম না-ছোঁয়া তরুণী!
দুটো তিনটে চুলে আমার পাক ধরেছে, তোরও কি?
তোরও কি রাতে ঘুম হয় না, পেটে অম্বল?
তোরও কি গিঁটব্যথা মাঝে-মাঝে?
তোরও কি বহুমূত্র, উচ্চচাপ? হোক, তবু দেখা হোক
আবার ব্রক্ষ্মপুত্রের জলে চল ভোরের আকাশ দেখি,
আবার জীবন দেখি, খড়কুটো স্বপ্ন খুঁজি চল।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ১৭৮ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন