গত রাতে টিউশন শেষে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ফুটপাত ধরে আনিস বাসায় ফিরছিলো।হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার মনে হলো ফেব্রুয়ারি মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’টা তো তার এখনো কেনা হয়নি।যেই ভাবা সেই কাজ,সে লাইব্রেরিতে গিয়ে কোনো রকমে ভিড় ডিঙিয়ে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স খুলে ওলোট পালোট করে দেখতে লাগল।
এমন সময় হঠাৎ পাশ থেকে স্নিগ্ধ গলার সুর তার কানে ভেসে আসলো।কণ্ঠটা তার বেশ পরিচিত,তাৎক্ষণিক তার বোধ হলো এই স্নিগ্ধ সুরের শীতলতা এর আগে সে বহুবার উপলব্ধি করেছে।আনিস সেই গলার স্বরে এমনিভাবেই মত্ত হয়ে পড়ল যে শব্দের উৎস অন্বেষণ করার প্রয়াসটুকুও সেই মুহূর্তে তার মধ্যে ছিল না।
কিছুক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে থাকার পর হাতের ডানদিকে তাকাতেই সে ভেবাচেকা খেয়ে গেল— এ কী,সাবিহা..!এসময় এখানে?ফোন’টা বের করতেই দেখলো ঘড়িতে সময় তখন ৯টা বেজে ১৬ মিনিট।নিশ্চিত হবার নিমিত্তে আবারও সে ডানদিকে তাকালো…নাহ সব ঠিকঠাক এটা তো সাবিহা’ই,শুধু সাবিহা না ওর বন্ধুবান্ধবও ছিল সাথে।তখন সবটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেল আনিসের কাছে।আনিস কালক্ষেপণ না করে দোকানি’কে টাকা’টা বুঝিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল।
বাসায় এসে তখন থেকেই শুয়ে শুয়ে আনিস ভাবছে এতদিন পর কেন আবার দেখা হলো।যদিও সাবিহা সহ তার বন্ধুবান্ধব আনিস’কে দেখেনি বলে আনিস কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে।তবুও সে অন্তরে অন্তরে ভীত সন্ত্রস্ত হচ্ছে—তার তো সবকিছুই এখন আবার অগোছালো হয়ে যাবে।অনিয়ম আর অদ্ভুত এক আলস্য আবার তার শরীরে ভর করবে।এতদিনে খুব কষ্টে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার,মেনে নেওয়ার,গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে সে।কীভাবে এখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে এসব ভাবতে ভাবতে আবার তার মধ্যে শুরু হলো এক স্নায়ুযুদ্ধ।
আনিস কেন এত বেশি বিচলিত হচ্ছে?
আর এই সাবিহা ই বা কে?
প্রশ্ন জাগছে মনে?
সাবিহার সাথে আনিসের সম্পর্ক প্রায় তিনবছরের তবে গত কয়েক মাস ধরে তাদের মধ্যে কোনোরকম যোগাযোগ নেই।এতদিনের সম্পর্কে হঠাৎ করে ভাটা পড়ার কারণ?এখন পর্যন্ত আনিস নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর উদ্ঘাটন করতে পারে নি তাই সম্পর্ক ভঙ্গুরের সুস্পষ্ট কোনো কারণ এই মুহূর্তে তার কাছে নেই।
তবে সে এতটুকু বোধ করে সাবিহা তার উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত রেখে পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে ফেরেস্তা সেজে মুক্তি নিয়ে চলে গেছে।হয়তো বাসা পুরনো হয়ে গেছে আর নয়তো বাসাই পছন্দ ছিল না তার।আত্নিক সম্পর্কে খাদ থাকলে কি আর বাসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব?
উপরন্তু তার মধ্যে যদি থাকে আবার অপর’কে অনুসরণ,অনুকরণ করার প্রবণতা। অবশ্য ভালো কিছু অনুকরণ করলে দোষের কিছু ছিল না।তার নীতি নৈতিকতার যতটুকু অধঃপতন দেখেছি বোধ করি তার বেশিরভাগই গর্হিত সঙ্গের প্রভাব।
কীভাবে নিশ্চিত হয়েছি?তাকে এখন মাঝে মাঝেই দেখা যায় তার বন্ধুদের সাথে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে।বন্ধুদের সাথে ঘুরার সুবাদে তার আবার নতুন নতুন বন্ধুও তৈরি হয়েছে ‘Friend with Benefits’।
মনে করুন,আপনি আর আপনার প্রিয় মানুষ’টি একই এরিয়া’তে আছেন।আপনি তার সঙ্গ পেতে চান,আপনার মানসিক অবসাদের কথা তাকে জানিয়ে নিজেকে একটু হালকা রাখতে চান কিন্তু সেই অবকাশ’টুকু আপনাকে দেওয়া হয় না।সে মানুষ’টি বারবার প্রমাণ করে দেয় যে তার সময়ের বাজেটে আপনার কোনো অস্তিত্ব নেই।আপনাকে সাত পাঁচ বুঝ দিয়ে আপনার থেকে দূরে থাকাটা তার কাছে যখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় তখন আপনার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে?
আপনি কোনো না কোনো মাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারছেন—সে ঠিকই নিয়ম করে বাহিরে গিয়ে অন্যদের সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছে শুধু আপনার ক্ষেত্রেই তার যত অজুহাত।
একবার চিন্তা করুন তো,যে সময়ে আপনি ঐ মানুষটির গলার স্বর শুনতে না পেয়ে রুমে বসে সদ্য জবাই করা পায়রা’র ন্যায় ছটফট করছেন ঠিক সে সময়ে আপনার প্রেয়সী আপনাকে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে স্বয়ং আপনার রুমমেটের সাথে কোনো রেস্টুরেন্টে একসাথে বসে ইফতার করছে আর আপন মনে সুখ-দুঃখের আলাপ করছে।
আপনার সাথে ঘুরার পরিকল্পনা করে সে ঘুরতে ঠিকই যাচ্ছে শুধু আপনার যাওয়া’টা হচ্ছে না।সেখানে আপনার পরিবর্তে অন্য কেউ এসে তাকে সঙ্গ দিচ্ছে।যেখানে প্লেস সিলেকশনও আপনি করে দিলেন সেখানে আপনারই এখন কোনো প্লেস নেই।
জীবনের কতটা বিভীষিকাময় পর্যায় হতে পারে এটা?
আপনার আসন্ন জীবনযুদ্ধ’কে উপেক্ষা করে আপনি যার চিন্তায় মত্ত তার জীবনে আপনি কেবলই অপশনমাত্র।অর্থাৎ আপনার থাকা না থাকা তার জীবনে বিশেষ কেনো প্রভাব ফেলছে না।
এ সব কিছুই ঘটেছে আনিসের পরীক্ষার আগে।বিশ্বস্ত সূত্র ধরেই আনিস এসব জানতে পারে।আর কিছুদিন পরে এসব জানলে অন্তত পরীক্ষার আগে তার দগ্ধিত হৃদয় পুনরায় দগ্ধ হতো না।
এরুপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যারা কখনো যায় নি তারা উপলব্ধি করতে পারবে না এই সময়টা আসলে কত’টা ভয়ংকর আর নির্মম হতে পারে।
কাউকে নিয়ে স্বীয় ধ্যানধারণা যখন মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়ে যায় তখন মানুষ’টি কিছু প্রশ্নোত্তর পেতে ব্যাকুল হয়ে পড়ে।সব কিছুর জানা শোনা আর প্রমাণ মেলা সত্ত্বেও মানুষটি ভাবতে থাকে যদি সে এসে আমার সব জানা শোনা’কে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে যেত?সে অপেক্ষা’তেই দিন যায় রাত আসে এভাবে মাসের পর মাস গিয়ে একটি বছরের সমাপ্তি হয় তবুও অধরা পাখি এই নীড়ে যেন আর ফিরে না।
আনিস সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।তার উপর পরিবারের সবার আশা ভরসা আর তাকে ঘিরেই সবার একরাশ স্বপ্ন।সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই তার বাবা-মা তাকে অনেক কষ্টে রাজধানী’তে পাঠিয়েছে।কিন্তু আনিস সেই স্বপ্ন আর পূরণ করতে পারলো কোথায়?
পঁচা শামুকে পা কেটে আনিস এখন দিশেহারা।তার প্রস্তুতি যে শূণ্য…সে কীভাবে এই বিশাল নদী পাড়ি দিবে এখন?
তাহলে এতদিন ঢাকায় থেকে কী করেছে আনিস?যে লক্ষ্য আর উদ্দেশ্যে সে এখানে এসেছে তা থেকে কেন ছিটকে পড়লো?
যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে আনিস-সাবিহা’র সম্পর্কে ভঙ্গুর!যা আনিসের ভবিষ্যৎ জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।আনিসের পরীক্ষা সন্নিকটে…আনিস শুধু জানে এত তারিখে এই জায়গায় তাকে পরীক্ষা দিতে হবে।এর আগে যতটুকু পড়াশোনা করেছে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সে এখন সেসবও ভুলতে বসেছে।যে মস্তিষ্ক পড়া মনে রাখবে সে মস্তিষ্কে এখন পুরোদমে চলছে ধ্বংসযজ্ঞ।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে,সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া কোনো সম্পর্কে থাকা ভুক্তভোগী’র মস্তিষ্কের এমআরআই রিপোর্ট আর কোনো নেশাগস্থ ব্যক্তি’কে ডার্গ থেকে বিরত রাখা হলে তার মস্তিষ্কের এমআরআই রিপোর্ট অলমোস্ট সিমিলার থাকে।
দেখতে দেখতে সেই বহুল প্রতিক্ষিত দিন চলে এসেছে অর্থাৎ আনিসের আজ পরীক্ষা।আনিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য শারিরীক ও মানসিক কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিল না।তবুও তাকে পরিবারের কথা ভেবে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।
পরীক্ষা দিতে গিয়ে আরেক বিপত্তির উৎপত্তি হলো।পরীক্ষা শুরুর এখনও প্রায় দেড় ঘন্টা বাকি।সে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকে মস্ত বড় এক গাছের নিচে বসে রয়েছে।
আশেপাশের সবাই যখন পরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করছে তখন আনিসের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে “সাবিহা আর এইকয়দিনে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব দৃশ্যপট”।
যে মহীয়সী নারীর কথা আনিস ভাবছে সে মাত্রই কেন্দ্রে প্রবেশ করলো।বলা বাহুল্য,সাবিহা’ ও চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস..!সাবিহা প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই আনিসের দৃষ্টিগোচর হলো।প্রধান ফটক থেকে সামনে এগিয়ে আসতে আসতে রৌদ্রের ঝলমলে স্পষ্ট হলো সাবিহা’র কপোল।কী হাস্যোজ্জ্বল তার গঠন!চোখে মুখে বিষাদের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই।কে বলবে এই মহীয়সী নারীর সদ্য বিচ্ছেদ হয়েছে?চঞ্চলা পায়ে একটা ছেলে’কে সাথে নিয়ে আনিসের সামনে দিয়ে মুহুর্তেই চলে গেল সাবিহা…আনিস’কে দেখে নি হয়তো।
দেখলেই বা কী?
এতে কি আর কিছু এসে যায় তার?
কিছুদিন আগেই তো আনিস’কে গ্রুপকলে বললো—”তোর চেহারা কি তুই কখনো আয়নায় দেখছিস?তুই তো ছ্যাঁচড়া,তোর মানসিক ডাক্তার দেখানো উচিত,আমি ওমকের সাথে রিলেশনে আছি তাতে তোর সমস্যা কোথায়?”আরও অনেক কথা।শুধু ও না ওর বন্ধুরাও আনিস’কে অনেক অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছে।সাবিহা তখন তা আপন মনে উপভোগ করেছে।
যা হোক,আনিস হয়তো সত্যিকার অর্থেই বেহায়া।তা না হলে যে মানুষ’টা তা-কে জেনে বুঝে ডুবিয়ে দিলো তা’কে দেখা মাত্রই অতীতের সবকিছু ভুলে নিমিষেই মোমের মতো গলে গেল।মানুষ মায়ায় আটকা’লে বুঝি এমন বেহায়া হয়ে যায়?আত্নসম্মান কি এভাবেই ম্লান হয়ে যায়?
আনিস পায়চারি করতে করতে সাবিহা’র কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।কাকতালীয় ভাবে আনিস আর সাবিহা’র পরীক্ষার সিট একই ভবনে পড়েছে।আনিসের উপস্থিতি টের পেয়েই সাবিহা একরকম মুখ ফিরিয়ে নিলো আর আনিস’কে এড়িয়ে চলতে লাগলো।
আনিস যে পরীক্ষা দিতে এখানে এসেছে এটা সে প্রায় ভুলতেই বসেছে।তার এখন ধ্যান জ্ঞান একটাই —কীভাবে সাবিহার সাথে একটু কথা বলা যায়।ইতিমধ্যে,সাবিহার সাথে যে ছেলেটি কেন্দ্রে এসেছিল সে সাবিহা’কে রেখে চলে গিয়েছে।যাওয়ার আগে সাবিহা ছেলেটি’কে বললো তাকে যেন এসে আবার নিয়ে যায়।
কী এক লোমহর্ষক পরিস্থিতি..!নিজের চর্মচোক্ষে এসব দেখতে হচ্ছে আনিস’কে।
যা হোক,আনিস শুধু সুযোগ খুঁজছে কী দিয়ে কথা শুরু করবে।কিন্তু মুশকিল হচ্ছে সাবিহার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আনিসের সাথে কথা বলার।তাতে কি হয়েছে আনিস যে বিশ্ব নাক কাটা নর…সে জোর করে হলেও কথা বলবে।
তাই হলো…সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অগোছালে ভাবে কী যেন বলতে লাগল আর জানতে চাইলো কেন তার সাথে সাবিহা এমন করছে?
সাবিহা’র কোনো উত্তর নেই।ফোনে কি যেন একটা করছে…তখন নিজেকে মহাব্যস্ত দেখানোর চেষ্টায় কোনো কমতি ছিল না তার।বস্তুত এটি ছিল কেবলই তার কথা না বলার বাহানা।
আনিসের ধ্বনি যেন সাবিহার কান অবধি না পৌঁছে সব বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে।আনিস বার বার একই প্রশ্ন করেই যাচ্ছে “কেন তার সাথে এমন করা হলো?”
নিরবতা ভেঙ্গে সাবিহা এবার উত্তর দিল— “আমার মেজাজ গরম করিস না,আমাকে ম্যান্টালি ডিস্টয় করে দিস না,আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা।তোকে আমি দেখতে চাই না।”
আনিস এসবের তোয়াক্কা না করে বললো—আমার চোখের দিকে একটু তাকাও,সাবিহা।কয়েকবার অনুরোধের পর…
সাবিহা তাকালো।
আনিস ভাঙা গলায় বললো—একটুও কী মায়া হয় না?
সাবিহা মাথা নেড়ে না’বোধক উত্তর দিল।অর্থাৎ আনিসের এ-অবস্থা দেখে সাবিহার কোনো মায়া হচ্ছে না।
এত কুকীর্তি’র পরও মানুষের এতটুকু অনুশোচনা হয় না?তার জন্যই তো আজ আনিসের এই অবস্থা।আনিস কী এতটুকু সহানুভূতি তার থেকে আশা করতে পারে না?
বিগত কয়েক মাসে যে সমস্ত কার্যকলাপ সে করেছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে তার তো নিজ থেকেই আনিসের নিকট ধরাশায়ী হওয়ার কথা।সেখানে সে উল্টো আনিস’কে শাসাচ্ছে।মানুষের বিবেকবোধ কি এতটাই ঠুনকো হয়ে গিয়েছে?
আনিস এবার মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।সাবিহা তার আত্নসম্মান রক্ষার্থে তড়িঘরি করে আনিসের সামনে থেকে সরে অন্যত্র গিয়ে দাঁড়াল।
এই মানুষ’টার সাথেই কি তিনবছরের সম্পর্ক ছিল?
সবকিছুই যেন কল্পনাতীত…।
আনিসের অন্তঃদেশে তখন টর্নেডো বয়ে যাচ্ছে।তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণে সাবিহা যেন অট্টহাসি’তে ফেটে পড়ছে।
হঠাৎ করেই বেল বাজার শব্দ।মুহুর্তেই যেন পরিবেশ উত্তল হয়ে পড়ল….সবাই বিচলিত ভঙ্গিমায় চঞ্চল পায়ে ছুটছে।
পরীক্ষা’র হলের কক্ষ খুলে দেওয়া হয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই পরীক্ষা শুরু হবে।
আনিস উঠে দাঁড়াল।
সাবিহা’র সিট পড়েছে উপর তলায় আর আনিসের পড়েছে একই ভবনের নীচ তলায়।পরীক্ষার হলে যাবার নিমিত্তে সাবিহাও চঞ্চলা পায়ে ছুটছে।
পেছন থেকে আনিস গিয়ে সাবিহার হাত ধরা মাত্রই সাবিহা বিস্ফোরিত কণ্ঠে বললো— “হাত ছাড় বললাম।আমি কিন্তু এখন শাউট করবো।”
একথা শোনার পর আনিসের হাত যেন অসাড় হয়ে গেল।ফলশ্রুতিতে,সাবিহার হাত আনিসের হাত থেকে ছুটে গেল।আনিসের মুখে তখন আর কোনো কথা জুটলো না।
আনিস সেখানেই দাঁড়িয়ে অসহায়ের ন্যায় স্থির অবলোকনে সাবিহা’র দিকে তাকিয়ে রইলো।এত কিছুর পরও তার শেষ আশা ছিল— সাবিহা যেন পেছন ফিরে তার দিকে একপলক তাকায় আর তার ছলছল চোখে যেন একবার চোখ রাখে।মাঝে মাঝে এক চাহনিতেও তো অনেক বড় বার্তা লুকিয়ে থাকে,তাই না?
তার অন্তিম ইচ্ছাটাও পূরণ হলো না।
সাবিহা তার দিকে ভুল করেও একবার তাকালো না।
এতটুকু সময় অথচ কতকিছুই না ঘটে গেল।এসবের পর আনিসের পরীক্ষা কেমন হতে পারে?
যাচ্ছেতাই পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আনিস আবার সেই সাবিহা’কেই খুঁজতে তৎপর হয়ে পড়ল।আনিস মূল ফটকে সাবিহার অপেক্ষায় অপলক দৃষ্টিতে ভেতরমুখি হয়ে তাকিয়ে আছে।পরীক্ষার কেন্দ্র ক্রমশ জনশূণ্য হয়ে পড়ছে সাবিহা’র দেখা কভু মিলছে না।একটা সময় আর কাউকেই বের হতে দেখা যাচ্ছে না।
এতক্ষণে আনিসের বুঝতে বাকি রইলো না যে সাবিহা অনেক আগেই কেন্দ্র ত্যাগ করেছে।
সাবিহা’র জন্য আনিস আর কত’টা নিচে নামবে?
আর কতটুকু আত্নসম্মান বিসর্জন দিলে সাবিহা তার এই আর্তনাদ দেখবে?
যা হোক,কয়েকদিন পরেই ফলাফল প্রকাশিত হলো।
ফলাফল যা হওয়ার কথা ছিল তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না।এতে আনিস খুব বেশি কষ্ট পায়নি কেননা তার তো কোনো আশা ভরসাই ছিল না।সে তো যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার আগেই যুদ্ধে হেরে বসে ছিল।
আনিস বর্তমানে শিক্ষিত বেকার অর্থাৎ নামের পাশে এখন পর্যন্ত কোনো জব টাইটেল যুক্ত করতে সমর্থ হয় নি।টিউশন করিয়ে যা পায় তা যৎসামান্য—নিজের খরচ মেটাতে’ই তাকে হিমশিম খেতে হয়।প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ার মানসে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা আনিসের কাছে এখন যেকোনো ধরনের একটা চাকরি পাওয়াই যেন অমাবস্যার চাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখনও মাঝে মাঝে গভীর রাতের নিস্তব্ধতায় কোনো দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেলে আনিসের হৃদয় নগরে দীপ্ত কণ্ঠে বেজে উঠে “কোনো কারণেই ফেরানো গেলো না তাকে”।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন