ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

কবিতা - দুর্ভিক্ষ প্রথম গীত

লেখক: ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

প্রথম গীত।
বাউলচাঁদী সুর।
॥ রাগিণী দেশমোল্লার – তাল আড়খেমটা॥

হয় দুনিয়া ওলট্ পালট্,
আর কিসে ভাই ! রক্ষে হবে?
আর কিসে ভাই ! রক্ষে হবে?
পোড়া আকালেতে নাকাল করে,
ডামাডোল পেড়েছে ভবে।
আমরা হাটের নেঁড়া, শিক্ষে ধোরে,
ভিক্ষে কোরে বেড়াই সবে।
হোলো সকল ঘরে ভিক্ষে মাগা,
কে এখন্‌ আর ভিক্ষে দেবে?
যত কালের যুবো, যেন সুবো,
ইংরাজী কয় বাঁকা ভাবে।
ধোরে গুরু পুরুত মারে জুতো,
ভিখারী কি অন্ন পাবে?

যদি অনাথ বামুন হাতপেতে চায়,
ঘুসি ধোরে ওঠেন তবে !
বলে, গতোর আছে, খেটে খেগে,
তোর পেটের ভার কেটা ববে?
যাদের পেটে হেড়া, মেজাজ টেড়া,
তাদের কাছে কেটা চাবে?
বলে, জৌ বাঙালি, ড্যাম, গো টু হেল,
কাছে এলেই কোঁৎকা খাবে।
আমি স্বপনে জানিনে বাবা,
অধঃপাতে সবাই যাবে।
হোয়ে হিঁদুর ছেলে, ট্যাঁসের চেলে,
টেবিল পেতে খানা খাবে।
এরা বেদ কোরাণের ভেদ মানে না,
খেদ কোরে আর কে বোঝাবে?
ঢুকে ঠাকুর ঘরে, কুকুর নিয়ে,
জুতো পায়ে দেখতে পাবে।
হোলো কর্ম্মকাণ্ড, লণ্ড ভণ্ড,
হিঁদুয়ানী কিসে রবে?
যত দুধের শিশু, ভোজে ঈশু,
ডুবে মোলো ডবের টবে।
আগে মেয়ে গুলো, ছিল ভালো,
ব্রত ধর্ম্ম কোর্ত্তো সবে।

একা “বেথুন” এসে, শেষ কোরেছে,
আর কি তাদের তেমন পাবে?
যত ছুঁড়ী গুলো, তুড়ী মেরে,
কেতাব হাতে নিচ্চে যবে।
তখন “এ, বি,” শিখে, বিবি সেজে,
বিলাতী বোল কবেই কৰে॥
এখন্‌ আর কি তারা সাজী নিয়ে,
সাঁজ সেঁজোতির ব্রত গাবে?
সব কাঁটা চাম্ চে ধোর্ বে শেষে,
পিঁড়ি পেতে আর কি খাবে?
ও ভাই ! আর কিছু দিন, বেঁচে থাকলে,
পাবেই পাবেই দেখতে পাবে।
এরা আপন হাতে হাঁকিয়ে বগী,
গড়ের মাঠে হাওয়া খাবে॥
আছে গোটাকত বুড়ো যদিন,
তদিন কিছু রক্ষা পাবে।
ওভাই ! তারা মোলেই দক্ষা রফা,
এক্ কালে সব ফুরয়ে যাবে॥
যখন আস্ বে শমন, কোরবে দমন,
কি বোলে তায় বুঝাইবে?
বুঝি “ছুট” বোলে, “বুট” পায়ে দিয়ে,
“চুরুট” ফুঁকে স্বর্গে যাবে।

ঘোর পাপে ভরা, হোলো ধরা,
রাঁড়ের বিয়ের হুকুম যবে।
তায় নীলকরেরদের মেজেস্টারি,
কেমন কোরে ধর্ম্মে সবে?
ওভাই ! তত দিন তো খেতে হবে,
যত দিন এ দেহ রবে।
এখন কেমন কোরে পেট চালাবো,
মোরে গেলেম ভেবে ভেবে।
রোজ অষ্ট প্রহর কষ্ট ভুগে,
ভাতে পোড়া জোড়ে সবে॥
তায় তেল জোড়ে তো লুণ জোড়ে না,
কেঁদে মরি হাহারবে।
যে চিরটা কাল মাচ খেয়েছে,
কেমনে সে শুক্ নো খাবে?
মরি মেগে মেগে,
মাচ বিনে প্রাণ বেরিয়ে যাবে,
এই সবে কলির সন্ধ্যা রে ভাই !
কতক্ষণে রাত পোয়াবে?
হোলো নিরামিষে শরীর শষ্ক,
আমিষের মুখ দেখবো কবে?
ওরে “উড়ো খই গোবিন্দায় নম”
এই ব্যবস্থা ধরি সবে।

এস “অক্ষয় দত্তে” গুরু কেড়ে,
“বাহ্য বস্তু” পড়ি তবে।
যত জাত কুটম্ব বেয়রা হোয়ে,
খাটে কোরে ঘাটে লবে।
দেশের কর্ত্তা যত কালা হলেন,
কাণ পাতেন না কান্না রবে।
গিয়ে মায়ের কাছে নালিশ করি,
বিলাতধামে চল সবে॥

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৮১ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন