ছেলে গেছে বনে
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
১
রাম তো গেলেন বনে
দশরথ বাপ
দুঃখ যা পেলেন মনে
ছ’ রাত্রেই সাফ
ভাবতেও আশ্চর্য লাগে, এই কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে সাতকাণ্ড বানিয়ে
কী করে গেলেন তরে কঠিন এ সংসারে বাল্মীকি !
আমি যদি লিখি,
নিয়তিকে করতে আজ্ঞাবহ,
মিথ্যে অন্ধ মুনিকে টানব না |
লেখা বলতে, মনে পড়ল, ছিল বটে একদা বাসনা
লেখক হবার
শব্দবেধে ছিল দুরাগ্রহ
( তখন তো আমারও কৌমার ! )
রাম রাম, এ ছি !
মার্জনা করবেন, প্রভু, অধীনের এ অবিমৃশ্যতা |
শব্দবেধ--- এই কথা
নিতান্তই মুখ ফসকে বলেছি |
জল ভরবার শব্দে বাণ ছুঁড়ে আমি নই ভুলক্রমে খুনী ;
আমাকে দেয় নি শাপ
শোকগ্রস্ত কোনো অন্ধ মুনি |
বুক খুলে দেখাই না লোক ডেকে ডেকে চোখের জলছাপ |
আমি নই স্ত্রীর বশ
ইক্ষাকু বংশের সেই ভগ্নস্নায়ু দ্বিধাদীর্ণ মেনিমুখো রাজা |
মুখ বুঁজে সগৌরবে আমি বই কালের এ সাজা |
আমার যখন এল বানপ্রস্থে যাওয়ার বয়স—
ফেলে রেখে আমাকে বন্ধনে
ছেলে গেছে বনে |
আমি তবু পদাতিক ; হাতে বাজছে রণবাদ্য দ্রিমিক দ্রিমিক—
কাছে এসো রত্নাকর, দূর হটো বাল্মীকি ||
২
কপালে মিন মিন করছে ঘাম |
সময় দাঁড়িয়ে আছে
মাথার ওপর তার ছিঁড়ে
যেন বন্ধ ট্রাম |
ফেলে রেখে আমাকে বন্ধনে
মুক্তির লড়াই লড়বে বলে
ছেলে গেছে বনে |
পাশের টেবিলে একটা লোক
একেবারে টুপভুজঙ্গ |
সোডার বোতলে আমি ঠিক রাখছি চোখ,
কিছুতেই মাত্রা ছাড়াব না |
পুরনো স্মৃতির সঙ্গ
নেব আজ ঝেড়ে ফেলে সব দুর্ভাবনা |
নাও যদি মেলে গাড়ি—
কাগজের নৌকো ঠেলে
জুতো হাতে হেঁটে যাব বাড়ি |
ঝরাতে ঝরাতে যাব সারা রাস্তা মাঠের শিশির,
বড় বড় ঠেউ তুলে যতই দেখাক ভয়
পাড়-ভাঙা নদী
ফিরে পেতে চাই সেই বাল্যের বিস্ময়,
যে-রোমাঞ্চ অন্ধকারে যেতে হাতে-ঝোলানো লন্ঠনে |
ফেলে রেখে আমাকে বন্ধনে
ছেলে গেছে বনে |
পাবে না জেনেও কাল রাত-দুপুরে বন্দুক উঁচিয়ে
দু-গাড়ি পুলিশ
সারা বাড়ি খুঁজে গেল তন্ন তন্ন করে |
পেরিয়ে চল্লিশ
যে আগুন প্রায় নিবন্ত, ওরা তার তুলছে আঁচ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে |
এখনও মিছিল গেলে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়াই রাস্তায়
যে কোনো সভায় গিয়ে শুনি
কে কী বলে |
কেউ কিছু ভালো করলে দিই তাতে সায় |
সংসারে ডুবেছি, তাই জ্বালাই না ধুনি |
ফেলে রেখে আমাকে বন্ধনে
ছেলে গেছে বনে |
অথচ তারই হাতে দেখছি মুক্তপাখা
যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত
আমারই পতাকা |
রাম তো গেলেন বনে
দশরথ বাপ
দুঃখ যা পেলেন মনে
ছ’ রাত্রেই সাফ
ভাবতেও আশ্চর্য লাগে, এই কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে সাতকাণ্ড বানিয়ে
কী করে গেলেন তরে কঠিন এ সংসারে বাল্মীকি !
আমি যদি লিখি,
নিয়তিকে করতে আজ্ঞাবহ,
মিথ্যে অন্ধ মুনিকে টানব না |
লেখা বলতে, মনে পড়ল, ছিল বটে একদা বাসনা
লেখক হবার
শব্দবেধে ছিল দুরাগ্রহ
( তখন তো আমারও কৌমার ! )
রাম রাম, এ ছি !
মার্জনা করবেন, প্রভু, অধীনের এ অবিমৃশ্যতা |
শব্দবেধ--- এই কথা
নিতান্তই মুখ ফসকে বলেছি |
জল ভরবার শব্দে বাণ ছুঁড়ে আমি নই ভুলক্রমে খুনী ;
আমাকে দেয় নি শাপ
শোকগ্রস্ত কোনো অন্ধ মুনি |
বুক খুলে দেখাই না লোক ডেকে ডেকে চোখের জলছাপ |
আমি নই স্ত্রীর বশ
ইক্ষাকু বংশের সেই ভগ্নস্নায়ু দ্বিধাদীর্ণ মেনিমুখো রাজা |
মুখ বুঁজে সগৌরবে আমি বই কালের এ সাজা |
আমার যখন এল বানপ্রস্থে যাওয়ার বয়স—
ফেলে রেখে আমাকে বন্ধনে
ছেলে গেছে বনে |
আমি তবু পদাতিক ; হাতে বাজছে রণবাদ্য দ্রিমিক দ্রিমিক—
কাছে এসো রত্নাকর, দূর হটো বাল্মীকি ||
২
কপালে মিন মিন করছে ঘাম |
সময় দাঁড়িয়ে আছে
মাথার ওপর তার ছিঁড়ে
যেন বন্ধ ট্রাম |
ফেলে রেখে আমাকে বন্ধনে
মুক্তির লড়াই লড়বে বলে
ছেলে গেছে বনে |
পাশের টেবিলে একটা লোক
একেবারে টুপভুজঙ্গ |
সোডার বোতলে আমি ঠিক রাখছি চোখ,
কিছুতেই মাত্রা ছাড়াব না |
পুরনো স্মৃতির সঙ্গ
নেব আজ ঝেড়ে ফেলে সব দুর্ভাবনা |
নাও যদি মেলে গাড়ি—
কাগজের নৌকো ঠেলে
জুতো হাতে হেঁটে যাব বাড়ি |
ঝরাতে ঝরাতে যাব সারা রাস্তা মাঠের শিশির,
বড় বড় ঠেউ তুলে যতই দেখাক ভয়
পাড়-ভাঙা নদী
ফিরে পেতে চাই সেই বাল্যের বিস্ময়,
যে-রোমাঞ্চ অন্ধকারে যেতে হাতে-ঝোলানো লন্ঠনে |
ফেলে রেখে আমাকে বন্ধনে
ছেলে গেছে বনে |
পাবে না জেনেও কাল রাত-দুপুরে বন্দুক উঁচিয়ে
দু-গাড়ি পুলিশ
সারা বাড়ি খুঁজে গেল তন্ন তন্ন করে |
পেরিয়ে চল্লিশ
যে আগুন প্রায় নিবন্ত, ওরা তার তুলছে আঁচ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে |
এখনও মিছিল গেলে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়াই রাস্তায়
যে কোনো সভায় গিয়ে শুনি
কে কী বলে |
কেউ কিছু ভালো করলে দিই তাতে সায় |
সংসারে ডুবেছি, তাই জ্বালাই না ধুনি |
ফেলে রেখে আমাকে বন্ধনে
ছেলে গেছে বনে |
অথচ তারই হাতে দেখছি মুক্তপাখা
যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত
আমারই পতাকা |
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৩০৭ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন