মানব মন্ডল

শিরোনাম: নরক

গল্পকার: Author Avatar মানব মন্ডল

কেন মরতে আসেন এই নরকে??গাদা গাদা টাকা দিয়ে যাবেন। কিছু তো কোন দিন দিতে পারলাম না আপনাকে তবুও, কিসের লোভে আসেন এ নরকে?”
রোজকার মতন রমার প্রশ্নটা এড়িয়ে, ওকে পাশ কাটিয়ে ঢুকলাম ওর ঘরে। বিছানাটা বলে দিচ্ছে, কিছুক্ষণ আগেই হয়তো ওর খদ্দের  গেছে। উল্টানো মদের গ্লাস আর ওর অন্তর্বাসটা ও তুলে নিলো তারাতারি।
আমি পলিথিনের ব্যাগটা হাতে তুলে দিলাম। ও ব্যাগ থেকে  রজনীগন্ধা ফুলের মালাটা বেড়ে করে, একটা বাঁকা হাসি হেসে বললো ” আপনার তো জুই ফুলের মালা পছন্দ, আজ রজনীগন্ধা ফুলের মালা আনলেন যে? ”
আমি বললাম” ধুপ কাঠি, আর মিষ্টির বাক্স ও আছে। ওগুলো আপনার জন্য নয়।শাশ্বত এর জন্য। আজ ২৬ জুলাই যে ভুলে গেছেন??”
ওর চোখ দুটো জলে ভরে গেল। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, “আপনার  মনে আছে ঠিক ওর মৃত্যু দিনটা??”
এ রঙীন নরকে আসার আগে রমার  নাম ছিলো মধুমিতা।সেদিনের শাশ্বত আর মধুমিতা দুজনে লং ড্রাইভে পাড়ি দিয়েছিলো সুন্দরবনের দিকে । বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে শাশ্বত গাড়িতে স্পিড তুলে দিয়ে গান ছেড়ে দিয়েছিলো। চারিদিকে গ্রামের সারি সারি সবুজ ক্ষেত, কত নাম অজানা ফুল,  শালুক ফুলের চাষ। কুঁড়ে ঘরের চালে কুমড়ো, চাল কুমড়ো, লাউ ঝুলছে। অপূর্ব শোভা সব সবুজ আর পাকা ধানের সোনালী রঙের শোভা মধুমিতার মনকে খুশি ভরে দিয়েছিলো। মুহুর্ত গুলো বড় প্রেমময় রোমান্টিক সুন্দর করে তুলেছিলো গানগুলো। গাড়ির কাঁচ নামানো থাকায় মাথার চুলগুলো আর শাড়ির আঁচল বিদ্রোহ করে উঠছিলো আর শাশ্বত তাই দেখে দুস্টুমি শুরু করেছিলো। বেশ উপভোগ করছিলো দুজনেই। কিন্তু সন্ধ্যা নেমে এলো আর গাড়িটাও বিগড়ে গেলো।
সন্ধ্যা যেনো হঠাৎই  ঘন হয়ে গেলো। কোথাও কোনো আলো নেই। সন্ধ্যা নেমে এলো আর গাড়িটাও বিগড়ে গেলো। কোথাও কোনো আলো নেই।  একজন কে সাইকেলে আসতে দেখে শাশ্বত জিজ্ঞেস করলো।” এখানে কোথাও মেকানিক পাওয়া যাবে নাকি। লোকটি সকালে পাওয়া যাবে তাও তিন চার মাইল যেতে হবে। ”
শাশ্বত শেষে নিরূপায় হয়ে জিজ্ঞেস করলো “ভাই থাকবার কোন হোটেল? ”
উত্তরে সে  বলল ” না  তবে সামনে মুদির দোকান থেকে কিছু খাবার দাবার পেয়ে যাবে তাও সেটা কিছুক্ষনে বন্ধ হবে “।
শাশ্বত আর মধুমিতা ঠিক করলো দুজনে ঠিক করলো গাড়িতেই রাত কাটিয়ে দেবে। কারণ গাড়িটা ছেড়ে যাওয়া ও নিরাপদ নয়। শাশ্বত মেসো বাড়ি এই সুন্দরবন পথ ভালো নয় বলে ওরা ওদের বেড়াতে না করেছিলো আজ।
কি মশার উৎপাত ওদের  ঘুম আসছিলো না। তবুও সেই অবস্থায় কখন চোখ লেগে গিয়েছিল মধুমিতার জানা না। একটা বিটকেল গন্ধ আর শাশ্বতের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখে চোখের সামনে একজোড়া আলো জ্বলছে। আলোটা শাশ্বত মুখের ওপর। মলয় ছটফট করছে। শাশ্বতকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। মধুমিতা চিৎকার করতে লাগলো।
কিছুক্ষনের মধ্যেই হই হই করে পটকা, ঢাক, কাঁসর, টিন বাজাতে বাজাতে মশাল হাতে লোেক ছুটে এলো। তাদের চিৎকারে শাশ্বতকে ফেলে এক লাফে মিলিয়ে গেলো অন্ধকারে হারিয়ে গেলো দক্ষিণারায়। লোকে শাশ্বত নিয়ে গ্রামের ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলো। ডাক্তার দেখে বলল ” বাঘের কামড়ে ঘারটা ভেঙে গেছে। মা উনি আর নেই “। সেই রাতে মধুমিতা না পেরেছে কাঁদতে না পেরেছে মলয়ের মৃত শরীর ছেড়ে যেতে। গ্রামের সবাই সেই রাতে ওদের পাহাড়া দিয়েছিলো। সকালে থানা থেকে বড় বাবু এসে শাশ্বতের দেহ নিয়ে মধু কে সাথে করে হাসপাতালে যায়। সেখানেই গ্রামের মধ্যে শাশ্বতের দেহ দাহ করে ফিরেছিল ও পুলিশের গাড়িতে।
এরপর জীবন টা ওর নরক হয়ে গেলো। বিয়ের দুই বছর আগেই ওর বাবা মারা গেছিল, মা ছোট বেলায় মারা গিয়েছিল মধুমিতার। ফলে শাসনের অভাবে পড়াশোনা করে নি ও বেশি দুর। সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো ওর কাকা শাশ্বতের সাথে। গ্রামে বাড়ি হলেও বেশ বনেদি ঘর, জমিদারের বংশ ধর ওঁরা কিন্তু মধুমিতার কপালে সুখ কোথায়।
বিধবা হয়ে শশ্তর বাড়ি হয়ে উঠলো ওর কাছে নরকের মতো। মুখোশ খুলে গেলো ওর দেয়ারের , শাশুড়ির প্রশয়ে ও হয়ে গেল , ওর দেওয়ের রক্ষিতা। দেওয়ের বিয়ের পর অশান্তি বাধালো বেশি করে। আর একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাইলো না ও। ওর দেওয়রের সংসার বাঁচতে, ও রফিকুল ইসলাম সাথে পালিয়ে এলো শহরে।রফিকুল যে দালাল ছিলো সেটা ওর জানা ছিলোনা। তারপর দুই একটা মালিকানা বদলের, পর মুম্বাইয়ের এই নরক স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পেলো।
আজ মধুমিতার মনটা ভালো , আসলে আমি ওর সাথে জোরজবরদস্তি করি না। ওর কাছে এলে কমপক্ষে  ওর দুই টোদিন কিনে নিই। আমি ওর কাছে  আশ্রয় খুঁজে পেতে চাই, শুধু শরীর খুঁজি না।আজ ওর মেজাজ ভালো, আমার বুকের চুল নিয়ে খেলা করছিল আপন মনে।
আমি সুযোগ পেয়ে বললাম ” তুমি কি এই নরক থেকে বেরিয়ে যাবার কথা ভাবো না?”
খুব শান্ত কন্ঠে বলল ” কি লাভ হবে?? এ নরকে থেকে বেরিয়ে তোমার জীবনটা নরক করে …”

,,,,,,,,,,,,,,

এখন পর্যন্ত গল্পটি পড়া হয়েছে ১২৬ বার
যদি গল্পটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন