শিরোনাম: সাস্নুহানা
গল্পকার: শংকর ব্রহ্ম
সাস্নুহানা
(পরীক্ষামূলক গল্প)
শংকর ব্রহ্ম
নীল রঙের চাঁদোয়ায় মোড়া আকাশটা। রাধাচূড়া গাছটা ফুলে ফুলে ভরে গেছে। রাধাচূড়া ফুলের তেমন কোন জোরালো গন্ধ নেই, যাতে আমার নাকে এসে লাগে। বাতাসে ফুলগুলি ঝরছে দেখতে পাচ্ছি আমি। টের পাচ্ছি আমার জ্বর আসছে।
রাস্তাটা ধা-করে বাঁ-দিকে ঘুরে গেছে। ঝরা ফুলে রাস্তাটা হলুদ হয়ে উঠেছে। একজন ফুলঅলা তা মাড়িয়ে চলে গেলে, ‘ফুল চাই – ফুল চাই’ হেঁকে। রাস্তার ঝরা ফুলগুলো মর্মবেদনায় কেঁদে উঠল। ফুলঅলা তা শুনতে পেল না।
তুমি জানলায় দাঁড়িয়ে। পাখিটা শিশ দিয়ে উড়ে গেল। আমি শিশ দিই না কতদিন।
ধূসর সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে চরাচর জুড়ে।এরপর আকাশে তারাদের মেলা বসবে। সেখানে আজ আমার আমন্ত্রণ। কালপুরুষ আমার বন্ধু।সে আমাকে আমন্ত্রণ করেছে। যতই জ্বর হোক, সেখানে আজ আমার যেতে হবে। না গেলে খুব দুঃখ পাবে বন্ধু।
এবার জানলার ধার থেকে সরে গেছে তোমার মায়াবী মুখটা।
কী মিষ্টি একটা গন্ধ আসছে। কোথা থেকে, কে জানে ! যেভাবে গানের সুর ভেসে আসে আমার কানে, ঠিক সেই ভাবে গন্ধটা এসে লাগছে আমার নাকে।
তুমি কি গান জান? একদিন শোনাবে আমায়? অবশ্য তার আগে আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব পার্কে। সেখানে তুমি পাশে বসে গান গাইবে আর আমি তা শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে ছবি আঁকব একটা। যা আঁকতে মন চাইবে তখন। তারপর ছবিটা তোমাকে উপহার দেব, গান শোনাবার জন্য কিংবা কোন কারণ ছাড়াই মনের আনন্দে।
তোমার মুখটা কী সুন্দর ! গোলাপ ফুলের চেয়েও সুন্দর।
অন্ধকার গুড়ি মেরে নেমে আসছে ধীরে ধীরে। পাখিরা সব ঘরে ফিরছে। সব পাখি কি ঘরে ফেরে? হঠাৎ একটা রাতচরা পাখি ডাকতে ডাকতে উড়ে গেল কোথায়।
অন্ধকার আমার খুব ভাল লাগে। সব কালোয় ডুবে যায়। তুমি তখন একরাশ কালো চুল মেলে দিয়ে, আমার সামনে এসে দাঁড়াও।
কালো ক্যানভাসে আশ মিটিয়ে, মনের রঙ মিশিয়ে আমি আলোর ছবি আঁকি।
জোনাকিগুলো তখন ঘরে এসে আমায় গল্প শোনায়। অমাবস্যা রাতের কত মজার মজার কাহিনি। তুমি তা শুনলে অবাক হয়ে যেতে ।
এবার আমার ওষুধ খাবার পালা।
তারপর ঘুম নেমে আসবে চোখে। তারপর আমার চেতনা লোপ পাবে ধীরে ধীরে ।
যেদিন জ্বরটা কমবে, সেদিন আমি একটা জিনিষ উপহার দেব তোমায়। কী দেব তা এখন কিছু বলব না। সারপ্রাইস হয়ে থাক।
আমি আজকাল ঘুমের মধ্যে ডুবতে ডুবতে হাস্নুহানা ফুলের গন্ধ পাই, প্রায় দিনই। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়ি, টেরও পাই না। এবার থেকে তোমায় হাস্নুহানা বলে ডাকব আমি।
ঘোর বাড়ছে জ্বরের, আমি অচৈতন্য হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ভাবি, সুস্থ হয়ে ওঠার পর আমি কী ভাবে নিজেকে উপহার দেব তোমার কাছে। ভাবতে ভাবতে আমি ক্রমশই তোমার গভীর অতলে ডুবে যেতে থাকি অবচেতন চেতনায়। সাস্নুহানা ফুলের গন্ধে ঘরটা আমার ভরে যায়।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন