নিঃসন্দেহ গন্তব্য

আবুল হাসান আবুল হাসান

ছোট ডিঙ্গিটা ভোলা ঝিনুকের মতোনই
ভাসছে ভাটায় সাঁকোটার নিয়ে
কালভার্টটার কালিতেও আছে লেপটে
মাছের জালের মতোন বাবলা ছায়ারা।

মনে পড়ে যায় খালি ঘড়াটার পার্শ্বে
চোখে ডুব দিয়ে মা আছেন দাঁড়িয়েই
অনাহার মার কাঁধে বুলাচ্ছে সেই কোন্
প্রপিতামহীর হৃষ্টপুষ্ট করতল!

অইতো খেজুর বৃক্ষের সারি-মোযটা
শিং-এর শীর্ষে খুঁড়ে ফেলে সূর্যাস্ত!

জলের জিহ্বা ছুঁয়ে আছে নলখাগড়া
নলখাগড়াটা পেরুলে তো আর নয় দূর
দেখা যাবে সেই কাঠের বস্তি লোকালয়।

শিরীষের কোলে ঢালছে আগুন নীলিমা
হলুদ পাখিটা বুঝি সোনার পিণ্ড
লুকিয়ে রয়েছে আবছায়া শাখা-শেলফ-এ
যেনো মেটে কুপি ধরে আছে সাঁঝরাত্রে
কোনো কালো মেয়ে কোনো পুকুরের পার্শ্বে!

মঠটা রয়েছে মাথাটা ডুবিয়ে বাতাসে
গাছের শাখাটা নয়তো পেয়েছে স্বাস্থ্য
অই মঠটার নিচের কারোর হাড়েই;

আমাদের হাড় সেও তো চূর্ণ মন্দির
মাংসের তলে ডুবে দেখে সূর্যাস্ত!

সন্ধ্যা বসবে রাত্রির ভোজে একবার
রোদের সুরুয়া শেষবার শুষে গাছটা
তাই যেনো তার খেদমদগারে বসছে;

মা-ওকি এখন খালি ঘড়াটার পার্শ্বে
নাকি দু’চোখের অশ্রুরই বার্ধক্যে
শীতল কাথায় শুয়ে শুয়ে শুধু স্বপ্ন
রিফু কোরছেন শিমুল তুলোর বালিশে?

লেবেল ক্রসিং-এ দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রেনটা
শুনছি কেমন সুগভীর থৈ শব্দ,
ঊষাকাল যেতে সন্ধ্যা-ঘণ্টা বাজছে

ঊষাকাল থেকে কতদূর শেষ যাত্রা?
বয়স কেবলি চায় ভ্রমণের সঙ্গ
কালো শাদা হয়ে বিভিন্ন শিলাখণ্ডে
লিখে রেখে যায় সামনেরও গন্তব্য!

কিন্তু চাইনা আমি তো দীর্ঘ যাত্রা,
ভালোবাসি তাই, যা কিনা সূক্ষ্ম সংক্ষেপে
ঝাউয়ের কোটর খোলাইতো কাঠঠোকরা,

আমরাও বক্ষে একটি গর্ত প্রয়োজন!

যার ফোকরের মধ্যে চালিয়ে চক্ষু
খোলা দরজার মতোন মা মণি আমারই
সেই দূর থেকে দেখবেন, আমি দিনরাত
রেঁদা তুরপুন চালাচ্ছি কত তক্তায়-

(আর) সেলাই কলের সুতোর মতোন কত হাত
রক্ত নামিয়ে দিচ্ছি ভাগ্য বুননে!
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৫৬ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন