লেনিন ঘুমোবে এবার
আহমদ ছফা
ভলগা নদী ধীরে বয়
রেড স্কোয়ারে পুরু হয় বরফের স্তর
ধূসর কুয়াশা ঢাকা ক্রেমলিন শিখর।
বছর বছর ধরে একটানা এক ঠায় দাঁড়িয়ে একাকী
লেনিনের বোবা চোখ প্রশ্ন করে আর কত বাকি।
কেটে গেছে বহুকাল, ঘটে গেছে বহু যুদ্ধ-বহু মন্বন্তর
লেনিনের বুকে বিঁধে কালের নখর।
অগাধ প্রত্যাশা নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড় ক্লান্ত
শ্রান্ত জানু ঢলে আসে, আর সাধ্য নেই দাঁড়াবার
লেনিন ঘুমাবে এবার।
লেনিন ঘুমোতে চায়
লেনিন ধূলির শিশু ভূমিশয্যা বড় ভালবাসে
সিমেট্রির গভীর থেকে জননীর ডাক ভেসে আসে
আয় যাদু ফিরে আয়। ডেকে ডেকে ভাইটি অস্থির ;
মা ও ভায়ের মাঝে ভাইজান পেতে দাও নশ্বর শরীর।
জেগে জেগে লেনিনের দুচোখে ভ্রূকুটি
রাত নেই দিন নেই একঘেয়ে অক্লান্ত ডিউটি
ফুরোয় না, ফুরোবে না— তাই চায় ছুটি।
লেনিনের ছুটি প্রাপ্য তাই
সময় পাহারা থেকে মুক্ত হওয়া চাই।
কেননা জননী ডেকেছে তাকে, ভাই ডাকে আয়
বড় সাধ ঘুমোবার পৃথিবীর পুণ্য মৃত্তিকায়।
অনেক সময় গেছে— সময় সাগর গেছে
একাকী দাঁড়িয়ে, আর সাধ নেই দাঁড়াবার
লেনিন ঘুমাবে এবার।
ভলগার কনকনে হাওয়া হিংস্র ভালুকের মত রোমশ আঁধারে
ক্রেমলিনে ঝুলে থাকা চাঁদ আর তারার বিলাপ
লেনিন শুনেছে চুপে, সারারাত ঝিঁঝির কীর্তন
শুনে শুনে লেনিনের ক্ষেপে গেছে মন।
প্যাঁচা আর ইঁদুরেরা যেই পথে যাওয়া আসা করে,
লেনিনও পালাতে চায় সেই পথ ধরে।
কঠিন ইস্পাত ভল্ট নড়ে ওঠে,
আকাঙ্ক্ষার তীব্র তাপে ফেটে যেতে চায়
নিস্পন্দ পাষান মমি থরথর কাঁপে।
নিশ্চল শাম্রীর দল আগ্নেয়াস্র হাতে হাঁকে হুশিয়ার
থিরে রহ— খাড়া হয়ে ইস্পাত জঠরে,
লেনিন পালাতে চায় সব বাধা সব ধাঁধা করে একাকার
লেনিন ঘুমাবে এবার।
ভুলভ্রান্তি মেনে নিয়ে লেনিন জানাতে চায় সহজ ভাষায়
বিপ্লবের লাল স্বপ্ন— তার মৃত্যু নাই।
ভালবাসা অন্তঃস্থ স্রোতের বেগে পথ কেটে চলে
ফুটন্ত উত্থানমন্ত্র জেগে রয় মানুষের প্রাণের অতলে।
স্তব্ধ হোক জাগরণ, সাময়িক বিপ্লবের কেটে যাক ধার
তবুও প্রথম চোটে মুমুক্ষু মানুষ উঠে দাঁড়াবে আবার।
দোর্দণ্ড পাশব ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষায় প্রভু হতে চায়
লেনিন বইবে কেন সেই সব ক্রুরকর্মা ঠগীদের দায়
কেন লেনিনকে সাজতে হবে আধুনিক ফারাওর সঙ
বুকে পিটে পাথর ইস্পাত বর্ম এবং এবং।
কোটাল স্রোতের মত পরিনির্বাণের বেগ অন্তরে ঘনায়
লেনিন মানুষের ইতিহাসে মানুষের শিশু হতে চায়
তার আগে শুধু একবার মা ও ভায়ের পাশে
বিছায়ে শরীর— পেতে চায় মানবিক উত্তাপের স্বাদ
লেনিন ঘুমাবে এবার।
লেনিন সঠিক জানে মানবিক সম্ভাবনার
অনন্য সম্ভবা বীজ শক্তির ভাণ্ডার তিনি,
মাটিই গন্তব্য তার। মাটির সে উর্বরতা আছে,
নবজন্মে ঝলসে তোলা শুভ্রবুদ্ধ নবীন মানুষ।
ভল্টের আড়ালে বসে ঠিক পায় টের
মাটি পারে পূর্ব পূর্ব প্রজন্মের কলঙ্ক কলুষ
ধুয়ে মুছে-শুদ্ধতর সৃজনের বেগ
ফুৎকারে প্রমূর্ত করা উদ্ভিন্ন অঙ্কুরে।
সর্বাঙ্গীণ বিপ্লবের বোধিসত্ত্ব হয়ে লেনিন জন্মাতে চায় আরো একবার।
তাই তুষারের ফাঁকে ফাঁকে পথ চিনে চিনে
লেনিন পালাতে চায় মাটির গহীনে।
জননী ডেকেছে তাকে ভাই পাশে চায়
লম্বা ঘুম দিতে হবে পৃথিবীর পুণ্য মৃত্তিকায়
লেনিন ঘুমাবে এবার।
রেড স্কোয়ারে পুরু হয় বরফের স্তর
ধূসর কুয়াশা ঢাকা ক্রেমলিন শিখর।
বছর বছর ধরে একটানা এক ঠায় দাঁড়িয়ে একাকী
লেনিনের বোবা চোখ প্রশ্ন করে আর কত বাকি।
কেটে গেছে বহুকাল, ঘটে গেছে বহু যুদ্ধ-বহু মন্বন্তর
লেনিনের বুকে বিঁধে কালের নখর।
অগাধ প্রত্যাশা নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড় ক্লান্ত
শ্রান্ত জানু ঢলে আসে, আর সাধ্য নেই দাঁড়াবার
লেনিন ঘুমাবে এবার।
লেনিন ঘুমোতে চায়
লেনিন ধূলির শিশু ভূমিশয্যা বড় ভালবাসে
সিমেট্রির গভীর থেকে জননীর ডাক ভেসে আসে
আয় যাদু ফিরে আয়। ডেকে ডেকে ভাইটি অস্থির ;
মা ও ভায়ের মাঝে ভাইজান পেতে দাও নশ্বর শরীর।
জেগে জেগে লেনিনের দুচোখে ভ্রূকুটি
রাত নেই দিন নেই একঘেয়ে অক্লান্ত ডিউটি
ফুরোয় না, ফুরোবে না— তাই চায় ছুটি।
লেনিনের ছুটি প্রাপ্য তাই
সময় পাহারা থেকে মুক্ত হওয়া চাই।
কেননা জননী ডেকেছে তাকে, ভাই ডাকে আয়
বড় সাধ ঘুমোবার পৃথিবীর পুণ্য মৃত্তিকায়।
অনেক সময় গেছে— সময় সাগর গেছে
একাকী দাঁড়িয়ে, আর সাধ নেই দাঁড়াবার
লেনিন ঘুমাবে এবার।
ভলগার কনকনে হাওয়া হিংস্র ভালুকের মত রোমশ আঁধারে
ক্রেমলিনে ঝুলে থাকা চাঁদ আর তারার বিলাপ
লেনিন শুনেছে চুপে, সারারাত ঝিঁঝির কীর্তন
শুনে শুনে লেনিনের ক্ষেপে গেছে মন।
প্যাঁচা আর ইঁদুরেরা যেই পথে যাওয়া আসা করে,
লেনিনও পালাতে চায় সেই পথ ধরে।
কঠিন ইস্পাত ভল্ট নড়ে ওঠে,
আকাঙ্ক্ষার তীব্র তাপে ফেটে যেতে চায়
নিস্পন্দ পাষান মমি থরথর কাঁপে।
নিশ্চল শাম্রীর দল আগ্নেয়াস্র হাতে হাঁকে হুশিয়ার
থিরে রহ— খাড়া হয়ে ইস্পাত জঠরে,
লেনিন পালাতে চায় সব বাধা সব ধাঁধা করে একাকার
লেনিন ঘুমাবে এবার।
ভুলভ্রান্তি মেনে নিয়ে লেনিন জানাতে চায় সহজ ভাষায়
বিপ্লবের লাল স্বপ্ন— তার মৃত্যু নাই।
ভালবাসা অন্তঃস্থ স্রোতের বেগে পথ কেটে চলে
ফুটন্ত উত্থানমন্ত্র জেগে রয় মানুষের প্রাণের অতলে।
স্তব্ধ হোক জাগরণ, সাময়িক বিপ্লবের কেটে যাক ধার
তবুও প্রথম চোটে মুমুক্ষু মানুষ উঠে দাঁড়াবে আবার।
দোর্দণ্ড পাশব ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষায় প্রভু হতে চায়
লেনিন বইবে কেন সেই সব ক্রুরকর্মা ঠগীদের দায়
কেন লেনিনকে সাজতে হবে আধুনিক ফারাওর সঙ
বুকে পিটে পাথর ইস্পাত বর্ম এবং এবং।
কোটাল স্রোতের মত পরিনির্বাণের বেগ অন্তরে ঘনায়
লেনিন মানুষের ইতিহাসে মানুষের শিশু হতে চায়
তার আগে শুধু একবার মা ও ভায়ের পাশে
বিছায়ে শরীর— পেতে চায় মানবিক উত্তাপের স্বাদ
লেনিন ঘুমাবে এবার।
লেনিন সঠিক জানে মানবিক সম্ভাবনার
অনন্য সম্ভবা বীজ শক্তির ভাণ্ডার তিনি,
মাটিই গন্তব্য তার। মাটির সে উর্বরতা আছে,
নবজন্মে ঝলসে তোলা শুভ্রবুদ্ধ নবীন মানুষ।
ভল্টের আড়ালে বসে ঠিক পায় টের
মাটি পারে পূর্ব পূর্ব প্রজন্মের কলঙ্ক কলুষ
ধুয়ে মুছে-শুদ্ধতর সৃজনের বেগ
ফুৎকারে প্রমূর্ত করা উদ্ভিন্ন অঙ্কুরে।
সর্বাঙ্গীণ বিপ্লবের বোধিসত্ত্ব হয়ে লেনিন জন্মাতে চায় আরো একবার।
তাই তুষারের ফাঁকে ফাঁকে পথ চিনে চিনে
লেনিন পালাতে চায় মাটির গহীনে।
জননী ডেকেছে তাকে ভাই পাশে চায়
লম্বা ঘুম দিতে হবে পৃথিবীর পুণ্য মৃত্তিকায়
লেনিন ঘুমাবে এবার।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৪১৯ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন