অচেনা এক শত্রু
অচেনা এক শত্রু
আতাউর রাহমান

গল্প - অচেনা এক শত্রু

লেখক: আতাউর রাহমান
প্রকাশ - মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫ ধরণ: অন্যান, জীবনবাদী

রবিবার রাত ১১.৩০ টা। ঢাকার একটি হাসপাতালের আইসিইউর সামনে অপলক দৃষ্টিতে বসে আছে রাফি। হাসপাতালের ভেতরে তার মা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত দুইদিন ধরে আইসিইউ তে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন তিনি।
রাফি কিছুদিন আগেও বিশ্বাস করত না যে, করোনা ভাইরাস এত ভয়ানক হতে পারে, এভাবে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। রাফি মাস্ক পরত না, সচেতনতার কথাগুলো সবসময় উপেক্ষা করে চলত। তার ধারণা ছিল, “এসব কিছু শুধুমাত্রই বাড়াবাড়ি, ছোটখাটো জ্বর-সর্দি ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু এখন সেই করোনা ভাইরাস তার মায়ের শ্বাস বন্ধ করে দিতে চলেছে।
ডাক্তার এসে ধীরে ধীরে বলল,“আমরা আর কিছু করতে পারছি না, আপনার মাকে হয়তো আর বাঁচানো সম্ভব না , ছেলেটা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল কারণ এই পৃথিবীতে তার মা ছাড়া আর কেউই ছিল না।
রাফি আর সহ্য করতে পারলেন না তিনি হাউমাউ করে কান্না করে ফেললেন। কয়েকদিন আগেও মা ফোনে বলেছিলেন, “বাবা, একটু সাবধানে থাকিস, আমি তো বুড়ো মানুষ, ঝুঁকি বেশি।” সে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল— “আরে মা, এসব কিছু না, তুমি চিন্তা কোরো না।”
আজ সে মনে করছে , তার অসতর্কতাই হয়তো তার মাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ভোররাতে হাসপাতালের করিডোরে শুধু একটা করুণ কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আরেকটা জীবন হয়তো চিরতরে থেমে গেল, আরেকটা পরিবার বোধ হয় শূন্য হয়ে গেল। করোনা আবার একটা মানুষের শ্বাস কেড়ে নিল! রাফি দৌড়ে তার মাকে দেখতে গেলেন। এরই মধ্যে তার মা ও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। রাফি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসে লাশ আটকে দিলেন। টাকা ছাড়া তারা মৃতদেহ কোথাও নিয়ে যেতে দিবেন না। রাফি অনেক অনুরোধ করলেন আকুতি মিনতি করলেন কিন্তু কোনভাবেই কোন কাজ হলো না। রাফি তার পরিচিত জনদের কাছে সাহায্য চাইলেন কিন্তু কেউই কোন সাহায্য করলেন না। এরপরে রাফি তার মায়ের লাশ তার বাড়িতে নিয়ে যেতে পেরেছিল কিনা আমার জানা নেই,কেউ তাকে সাহায্য করেছিল কিনা, হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তার মার লাশ টাকা ছাড়া ছেড়ে ছিলো কিনা আমি আর জানতে পারি নাই। ঐদিন রাফির কান্নায় আমিও অনেক কেঁদেছিলাম।

১৩৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন