শিরোনাম: দুর্মুখ চাই
আলোচক: শংকর ব্রহ্ম
দুর্মুখ চাই
শংকর ব্রহ্ম
সাহিত্যচর্চার জন্য যে রকম মনোজ্ঞ মনস্কতা দরকার, আত্ম বিকাশে জন্য যে রকম গবেষণা মূলক মনোভাব দরকার, তার বড় অভাব দেখা যায় লেখকদের মধ্যে। একটা কিছু লিখে পোষ্ট করে, তাতে প্রাপ্ত মন্তব্যগুলি পড়ে, আত্মতুষ্টিতে ভোগেন তারা। ফলে তাদের চিন্তা চেতনায় নতুন কোন আলোড়ণ ওঠার সুযোগ থাকে না।
মন্তব্যগুলি, এইরকম –
কী সুন্দর লেখা, চমৎকার প্রকাশ, দারুণ বক্তব্য,
অনবদ্য লাগল।
যতসব অবান্তর মন্তব্য।
এইসব মন্তব্য করতে লেখাগুলি পড়ার দরকার পড়ে না।
কী সুন্দর লেখা! কিন্তু কেন সুন্দর?
চমৎকার প্রকাশ – কোনটা, কিভাবে চমৎকার প্রকাশ হল?
দারুণ বক্তব্য ( ভুল বানানে দারুন, অনেকেই লেখেন) লেখা। – কি কারণে,কোন বক্তব্যটা দারুণ হলো?
অনবদ্য প্রকাশ। কি ভাবে অনবদ্য হলো প্রকাশটা?
এইসব ব্যাখ্যা করতে হলে লেখাটা পড়তে হয়।
এত সময় কোথায় তাদের? তারপর নিজের লেখা থাকে তাদের। কেউ কেউ অন্যের লেখায় মন্তব্য করেন, নিজের লেখায় মন্তব্য পাওয়ার প্রত্যাশায়। প্রতি উত্তরে তারাও উৎসাহমূলক মন্তব্য পান। সমালোচনার ধার ধারেন না কেউ।
সবচেয়ে বড় বিপদের কথা, সমালোচনা অনেকেই সহ্য করতে পারেন না (আশি ভাগ লেখক এড়ে তর্কে মেতে উঠে, প্রমাণ করতে চান, তারা সর্বজ্ঞ, তাদের কোন ভুল হতে পারে না) , ফলে লেখাটা পড়ে কারও কিছু বলার থাকলেও, তারা ভরসা পান না মনের কথাটা বলতে। কারণ, অকারণ মনোমালিন্য এড়িয়ে চলতে চান তারা। কিন্তু তাতে যা হয়েছে ফেসবুক সাহিত্যের ফসল, মুড়ি মুড়কি একদর হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুবই আশংকাজনক পরিস্থিতি। জানি না এর থেকে মুক্তির উপায় কি? আর কতকাল এরকম চলবে ?
এমন দুঃসময়ে মোহিতলালের মতো একজন সমালোচকের বড় প্রয়োজন। অনুজ হলেও রবীন্দ্রনাথ তার সমালোচনাকে গুরুত্ব দিতেন।
তেমন দুর্মুখ সমালোচক কই, যে বলবে, রাজা তোর কাপড় কোথায় ( কবি তোর লেখায় কবিতা কই)?
তবেই হয়তো এর থেকে মুক্তি পাব আমরা, যারা সাহিত্যে প্রাণের মতো ভালবাসি।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন